কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধারও পাচ্ছে না জনতা ব্যাংক
Published: 17th, February 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়ম লঙ্ঘন করে প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলোকে ঋণ দিয়ে এখন চরম বিপদে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। ঋণ বিতরণে মানা হয়নি একক ঋণ গ্রহীতার সীমাও। বিশেষ করে সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো, চট্টগ্রাম ভিত্তিক ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম গ্রুপ ও অপর কোম্পানি এননটেক্সের প্রতি বেশি উদারতা দেখিয়ে এখন পথে বসেছে জনতা ব্যাংক। এই তিন কোম্পানিকেই দিয়েছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। আর এই তিন গ্রুপসহ ২৩টি গ্রুপ ও প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। আর বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ রয়েছে ৬০ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা, যেটা ব্যাংকটির মোট বিতরণকৃত ঋণের ৬৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র বলছে, জনতা ব্যাংকের ঋণের অধিকাংশ টাকা খেলাপিতে পরিণত হলেও এগুলো উদ্ধারে কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করছে না ব্যাংকটি। খেলাপি ঋণ রিকভারি না করে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকা ধার চেয়েছে জনতা ব্যাংক। কিন্তু তাদেরকে টাকা ধার দিতে রাজি হয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে একটি বৈঠক করেছে জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে জনতা ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সময় চলমান সংকট মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ১০ হাজার কোটি টাকা ধার চেয়েছিল জনতা ব্যাংক। কিন্তু তাদের প্রস্তাবে গভর্নর ড.
সূত্রটি জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো টাকা দেয়া হবে না। গ্রাহকদেরকে দেয়া টাকা উদ্ধারে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। লোনের বিপরীতে যে জামানত রাখা আছে প্রয়োজনে সেগুলো বিক্রি করে টাকা আদায় করুন।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে আমরা তাদেরকে পরামর্শ দিচ্ছি। কিন্তু তারা কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে জনতা ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) মুজিবুর রহমানের নম্বরে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকোকে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে জনতা ব্যাংক। বহুল আলোচিত বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ২০ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।
এরপর জনতা ব্যাংক থেকে দ্বিতীয় শীর্ষ ঋণ গ্রহীতা হল চট্টগ্রামভিত্তিক আলোচিত ব্যবসায়িক গ্রুপ এস আলম। গ্রুপটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে জনতা ব্যাংকে ঋণ রয়েছে ৭ হাজার ৮৩২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ১ হাজার ২১৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
ব্যাংক খাতের ঋণ কেলেঙ্কারির আরেক আলোচিত নাম হল এননটেক্স। এই গ্রুপও জনতা ব্যাংক থেকে ৭ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এই ঋণের প্রায় শতভাগই খেলাপির খাতায় চলে গেছে। এননটেক্সে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ৭০৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
এর মধ্যে আবার আলোচিত এননটেক্সকে দেয়া ঋণের টাকা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে দুদকও। এমনকি দুদকের পক্ষ থেকে রেকর্ড সংগ্রহের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি চিঠিও দেয়া হয়েছে। দুদকের একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে দুদক বলেছে, ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির মাধ্যমে এননটেক্স গ্রুপভুক্ত ২২টি প্রতিষ্ঠানকে প্রদত্ত ঋণের অর্থ আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ। উপরিউক্ত অভিযোগ সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে নি¤েœ বর্ণিত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জনতা ব্যাংক থেকে রিম্যাক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের নেওয়া ১ হাজার ৭৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা ফান্ডেড ঋণের পুরোটাই খেলাপি হয়ে পড়েছে। আর ক্রিসেন্ট গ্রুপের ঋণ ২ হাজার ৮৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ঋণের মধ্যে ১ হাজার ৮০৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকাই খেলাপি। রতনপুর গ্রুপে জনতার ঋণ ১ হাজার ২২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা, যার পুরোটাই খেলাপি হয়ে পড়েছে।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাঙ্কা গ্রুপে ১ হাজার ৭১৯ কোটি ৯ লাখ টাকা, ওরিয়ন গ্রুপে ২ হাজার ৮৫৪ কোটি ৪২ লাখ, থার্মেক্স গ্রুপে ১ হাজার ৯৪৪ কোটি ৭৭ লাখ, সিকদার গ্রুপে ৮২৯ কোটি, জনকণ্ঠ গ্রুপে ৭৮৭ কোটি ৪৮ লাখ, মেঘনা সিমেন্টে ৬৭৪ কোটি ৭২ লাখ, লেক্সো লিমিটেডে ৬৫৫ কোটি ৪৭ লাখ, হাবিব হোটেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডে ৬৩৫ কোটি ৪৫ লাখ, আনন্দ শিপইয়ার্ডে ৬১৪ কোটি ৫৪ লাখ এবং বিআর স্পিনিং লিমিটেডে ৫৭৪ কোটি ২২ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে জনতা ব্যাংক। এ ছাড়া চৌধুরী গ্রুপকে ব্যাংকটির দেওয়া ৬৫৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকার ঋণের মধ্যে ৬২৫ কোটি ৭০ লাখ টাকাই খেলাপি হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জনতা ব্যাংকের কাছে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্টের (বিএডিসি) ঋণ ৪ হাজার ৩৭৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ঋণ ৩ হাজার ৬২৩ কোটি ৭৫৭ লাখ টাকা। পাশাপাশি বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) ঋণ ২ হাজার ৯২১ কোটি ৩ লাখ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সুগার অ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের ঋণ ১ হাজার ৬৯১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
এএ
উৎস: SunBD 24
কীওয়ার্ড: ঋণ র প আল চ ত ঋণ দ য়
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিন: রুহুল কবির রিজভী
নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার জনগণের কাছেই ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘যদি আবার ফ্যাসিবাদের কোনোভাবে উত্থান ঘটে, তাহলে কেউ বাঁচতে পারবেন না। তাই ঐক্যের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে একযোগে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মহান মে দিবস উপলক্ষে বরিশাল জেলা ও মহানগর শ্রমিক দল আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশ শেষে আয়োজিত শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন রিজভী। শোভাযাত্রাটি নগরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সদর রোডে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের এসে শেষ হয়।
পালিয়ে থেকেও দেশে হত্যার রাজনীতি অব্যাহত রেখেছেন শেখ হাসিনা—এমন মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘২৬২ জনকে হত্যার হুমকি দিয়ে দেওয়া তাঁর বক্তব্য ফরেনসিক রিপোর্টে প্রমাণিত হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিশ্চিত হয়েছে, ভয়াবহ ওই হুমকির কণ্ঠ শেখ হাসিনারই। একটি কথা মনে রাখতে হবে—এই দেশে যদি আবারও ফ্যাসিস্ট ফিরে আসে, তাহলে কেউই রেহাই পাবে না।’ তিনি বলেন, ‘দ্রুত একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে।’
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, বর্তমান সরকারকে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর কথা শুনবেন না এটা হতে পারে না। শুধু উপদেষ্টাদের নিয়ে মানবিক করিডর দিতে চাইছেন। দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হতে পারে, সে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া খুবই দুঃখজনক। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে নির্বাচিত সরকার না থাকায় ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এ অবস্থায় শেখ হাসিনার বিচার অনতিবিলম্বে সম্পন্ন করা প্রয়োজন। তা না হলে দেশে আবার ভয়াবহ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই ফ্যাসিবাদ প্রতিহত করতে হবে এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, মাহবুবুল হক, সহ–বন ও পরিবেশ সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান, সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার, মহানগর শ্রমিক দলের সদস্যসচিব শহিদুল ইসলাম, জেলা শ্রমিক দলের সদস্যসচিব সাইফুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।