সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি আগুনে ভস্মীভূত বসতবাড়ির একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের মাদারীপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৯টি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ৭ জন হিন্দু নারীকে অপহরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান (ফ্যাক্ট চেক) রিউমর স্ক্যানারের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে দেখা গেছে, দাবিটি ভুয়া।

আজ মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের তফসিলি জাতি কল্যাণমন্ত্রী সুধাংশু দাসও ভিডিওটি তাঁর ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। তিনিও দাবি করেছেন যে বাংলাদেশের মাদারীপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৯টি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ৭ জন হিন্দু নারীকে অপহরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে সনাতন সম্প্রদায়ের অন্যতম গণমাধ্যম ‘সনাতন টিভি’ এবং ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এক্স অ্যাকাউন্ট থেকেও এই দাবি প্রচারিত হয়েছে।

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, এটি আসলে শরীয়তপুরের ডোমসার ইউনিয়নে ঘটা দুর্ঘটনাজনিত একটি অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও। ওই আগুনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো হিন্দু নয়, মুসলিম সম্প্রদায়ের।

এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে ‘Robiul Islam NaVan’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত পোস্টে একই ভিডিও খুঁজে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। ওই পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, শরীয়তপুরের বেপারী কান্দি গ্রামে রান্নাঘর থেকে সৃষ্ট আগুনের ঘটনার ভিডিও এটি।

এই পোস্টের সূত্র ধরে ‘শরীয়তপুর টাইমস’ নামের স্থানীয় এক গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজে একই ঘটনার ভিন্ন একটি ভিডিও পাওয়া যায়।

জাগোনিউজ২৪-এর ওয়েবসাইটে ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের কথাও উল্লেখ করেছে রিউমর স্ক্যানার। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের কোয়ারপুর দপ্তরিকান্দি এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১০টি বসতঘরসহ ১৭টি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। স্থানীয় লোকজনের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও কিছুই রক্ষা করা যায়নি। প্রাথমিক তদন্তে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে ক্ষতিগ্রস্ত দুই ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। তাঁরা হলেন সুজন বেপারী এবং রাজ্জাক বেপারী। তাঁদের নামের ভিত্তিতে রিউমর স্ক্যানার বলছে, তাঁরা মুসলিম সম্প্রদায়ের বলে প্রতীয়মান হয়।

রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য মো.

শাহিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে ক্ষতিগ্রস্তদের কেউই হিন্দু সম্প্রদায়ের নন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা।

এ বিষয়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাফিস এলাহী রিউমর স্ক্যানারকে বলেন, ঘটনার সময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন না। কেউ পরিকল্পিত হামলার অভিযোগ করেননি এবং বৈদ্যুতিক ত্রুটি থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া ডোমসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান খান জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্যটি গুজব। তিনি এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাননি।

এসব তথ্যের ভিত্তিতে রিউমার স্ক্যানার বলছে, মাদারীপুরে ১৯টি হিন্দু পরিবারের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া এবং ৭ হিন্দু কন্যাকে অপহরণের দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র উমর স ক য ন র পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

পটিয়ায় ব্যবসায়ীকে অপহরণ, দুই ঘণ্টা পর উদ্ধার

চট্টগ্রামের পটিয়া পৌর সদরের মুন্সেফ বাজার এলাকার একটি দোকান থেকে নুরুল আবছার (২৭) নামের এক ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায় একদল মুখোশধারী ব্যক্তি। আজ বুধবার সকাল সাতটায় তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে পুলিশের তৎপরতায় সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি ছাড়া পান।

উদ্ধারের পর পটিয়া থানা প্রাঙ্গণে অপহরণের শিকার নুরুল আবছার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ব্যাংকে চাকরি করতেন। সম্প্রতি তাঁর চাকরি চলে যায়। এরপর পটিয়া পৌর সদরের মুন্সেফ বাজার এলাকার সাহিত্য বিশারদ সড়কে মুরগির দোকান দেন। প্রতিদিনের মতো আজ সকালে দোকান খোলেন তিনি। এ সময় তিন থেকে চারজন মুখোশধারী লোক ধারালো অস্ত্রের মুখে তাঁকে ধরে অটোরিকশায় উঠিয়ে নিয়ে যায়। তারা তাঁর পকেটে থাকা ৪০ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। পরে আরও ৪ লাখ টাকা দাবি করে, পরে ১৭ লাখ এনে দিতে বলেন। তাঁকে চন্দ্র কালারপোল নামের নির্জন এলাকায় নিয়ে অপহরণকারীরা তাঁকে মারধরের পাশাপাশি ছুরিকাঘাতও করেন।

পটিয়া থানার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) প্রদীপ চন্দ্র দে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত তাঁকে উদ্ধারের তৎপরতায় নামে। পরে চন্দ্র কালারপোল এলাকায় পুলিশ গেলে উপস্থিতি টের পেয়ে অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়।

পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান জানান, ব্যবসায়ীকে অপহরণ করার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরে তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পটিয়ায় ব্যবসায়ীকে অপহরণ, দুই ঘণ্টা পর উদ্ধার