রাজধানীতে যানজটের কারণে প্রতিদিনই মানুষের লম্বা সময়, তথা কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। সে জন্য দ্রুত গন্তব্যে যেতে অনেকেই উবারের মতো রাইডশেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন। গবেষণায় দেখা গেছে, উবার ব্যবহারের ফলে বছরে প্রায় ১১ লাখ কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হয়; আর্থিক মূল্যে যা ৯৪ কোটি টাকার সমান।

রাইডশেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম উবারের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ‘উবারস ইকোনমিক ইমপ্যাক্ট ইন বাংলাদেশ ২০২৪’ বা ‘বাংলাদেশ ২০২৪ সালে উবারের অর্থনৈতিক প্রভাব’ শীর্ষক এই গবেষণা পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পাবলিক ফার্স্ট।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মো.

ইয়াসিন, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মহাপরিচালক গাজী এ কে এম ফজলুল হক, পিডব্লিউসি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজিং পার্টনার শামস জামান ও উবার বাংলাদেশের কান্ট্রি হেড নাশিদ ফেরদৌস কামাল। অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন পাবলিক ফার্স্টের টেক, মিডিয়া ও টেলিকম প্রধান এমি প্রাইস।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, শহরের ব্যস্ত জীবনে সহজ ও সাশ্রয়ী মূল্যের পরিবহন হিসেবে উবারের মটো ও অটো পরিষেবাগুলো অনেকটা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। উবার ব্যবহারের মাধ্যমে যাত্রীদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সময় সাশ্রয় হচ্ছে।

গবেষণায় দেখা যায়, যেসব যাত্রী রাইডশেয়ারিং সেবা নেন, তাঁদের ৮২ শতাংশই অফিসে যাতায়াতের জন্য উবার ব্যবহার করেন। বিশেষ করে উবারের প্রায় অর্ধেক যাত্রী প্রতিষ্ঠানটির মোটরসাইকেল সেবা নেন। এর মাধ্যমে তাঁরা তুলনামূলক দ্রুততম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন। এতে সব মিলিয়ে প্রতিবছর আনুমানিক ১১ লাখ কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হয়, যার আর্থিক মূল্য ৯৪ কোটি টাকার সমান।

এ বিষয়ে উবার বাংলাদেশের কান্ট্রি হেড নাশিদ ফেরদৌস কামাল বলেন, ‘উবার কীভাবে দেশের পরিবহনব্যবস্থাকে বদলে দিচ্ছে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে, তা গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। আমরা ভবিষ্যতে আরও উন্নত সেবা দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

প্যানেল আলোচনায় সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশে টেকসই পরিবহন খাত তৈরির জন্য শূন্য কার্বন নিঃসরণ ও বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারের মতো পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ বাড়াতে উবারকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে উবারকে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বিআরটিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, সাধারণ মানুষকে উবার যে সেবা দিচ্ছে, তা অনেক বড় বিষয়। তবে উবারের সেবা ও ভাড়া নিয়ে অনেক অভিযোগ পাওয়া যায়। উবারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ চালকদের অনেকে অ্যাপের মাধ্যমে যান না। এসব বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

অর্থনীতিতে ৫,৫০০ কোটি টাকার অবদান

গবেষণায় দেখা যায়, শুধু কর্মঘণ্টা সাশ্রয় নয়, উবারের মাধ্যমে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে, যাতায়াত সহজ হয়েছে, নারীরা আরও নিরাপদে যাতায়াত করতে পারছেন। ক্ষেত্রবিশেষে অর্থও সাশ্রয় হচ্ছে। সব মিলিয়ে আর্থিক মূল্য বিবেচনায় ২০২৪ সালে উবার বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মোট ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সমমূল্যের অবদান রেখেছে।

২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে এ গবেষণা করা হয়। এতে ১ হাজার ৭৩ জন যাত্রী ও ২৬২ জন উবারচালকের মতামত নেওয়া হয়। জরিপে ৮৬ শতাংশ যাত্রী জানান, অন্য পরিবহনের তুলনায় উবারের মাধ্যমে তাঁদের শহরে যাতায়াত সহজ হয়েছে। বিশেষ করে নারী যাত্রীদের ৯৫ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা উবারের মাধ্যমে যাতায়াতকে নিরাপদ মনে করেন।

অন্যদিকে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে ভূমিকা রয়েছে উবার। যেমন জরিপে অংশ নেওয়া ৭৬ শতাংশ চালক বলেছেন, উবার তাঁদের প্রথম আয়ের প্ল্যাটফর্ম। আবার ৫০ শতাংশ চালক মনে করেন, উবার প্ল্যাটফর্ম না থাকলে তাঁদের জন্য কাজের সুযোগ কমে যেত।

রাতের বেলাতেও অর্থনীতি সচল রাখতে উবার অবদান রাখছে। যেমন গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০২৩ সালে রাতের বেলার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা মূল্য সংযোজন করছে উবারের সেবায়। এ ছাড়া বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পেও এক বছরে উবার অতিরিক্ত ২৯০ কোটি টাকা অবদান রেখেছে বলে জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশে উবার কার্যক্রম শুরু করে ২০১৬ সালে। প্রতিষ্ঠানটি পর্যায়ক্রমে উবার মটো, উবার অটো, উবার সিএনজি, পণ্য ডেলিভারি প্রভৃতি সেবা নিয়ে এসেছে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে উবার ৭২ লাখের বেশি যাত্রীকে সেবা দিয়েছে। এ ছাড়া সাড়ে তিন লাখের বেশি চালকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম ২০২৪ স ল অন ষ ঠ ন র জন য অবদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে

সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।

পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।

অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ  ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।

একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের  প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। 

অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে,  মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে  ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
  • সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
  • সংশোধিত সাইবার অধ্যাদেশও আন্তর্জাতিক মানের হয়নি
  • জার্মানির ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা মূল্যে পড়াশোনা, জেনে নিন সব তথ্য
  • ২০২৪ সালে মেটার কাছে ৩৭৭১ অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়েছে সরকার
  • কয়েক দশকের ছায়াযুদ্ধ থেকে এবার প্রকাশ্য সংঘাতে ইরান-ইসরায়েল
  • তিন চ্যাম্পিয়ন দলসহ যেসব তারকাকে দেখা যাবে না ক্লাব বিশ্বকাপে
  • ৫ বছরে ঋণের স্থিতি বাড়বে ৫৩.৭৭ শতাংশ: অর্থবিভাগ