রাজধানীর উত্তরায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে মোটরসাইকেল আরোহী স্বামী-স্ত্রীর। তারা বন্ধুর দাওয়াতে রেস্তোরাঁয় খাওয়ার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দুর্ঘটনার শিকার হয়ে তাদের রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে ছিল রাস্তায়। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জে বাস ও অটোরিকশাচাপায় তিন এবং বান্দরবানের রুমায় এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। ফরিদপুরের ভাঙ্গা, যশোরের অভয়নগর ও রাজবাড়ী সদরে একজন করে নিহত হয়েছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঘন কুয়াশায় আট দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৫ জন। 

উত্তরায় নিহত স্বামী-স্ত্রী হলেন আবদুর রহমান রাব্বী (২০) ও কারিমা আক্তার মীম (২০)। জানা যায়, বন্ধুর জন্মদিন পালন শেষে রেস্তোরাঁয় খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেল নিয়ে তারা বের হয়েছিলেন। সঙ্গে আরেক মোটরসাইকেলে ছিলেন বন্ধু দম্পতি মুনতাসীর মাহমুদ ও মোছা.

তানজিলা। তারা দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়ার পর লক্ষ্য করেন, রাব্বী-মীমকে পেছনে দেখা যাচ্ছে না। তখন তাদের অবস্থান জানতে মোবাইল ফোনে কল করেন মুনতাসীর। এক পুলিশ কর্মকর্তা কল রিসিভ করে জানান, দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তারা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। গত সোমবার রাত আড়াইটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। হাসপাতালে নেওয়ার পর দু’জনেরই মৃত্যু হয়। 

উত্তরা পূর্ব থানার ওসি শামীম আহমেদ সমকালকে বলেন, গাজীপুরের টঙ্গী থেকে ঢাকায় আসছিল ওই দুই দম্পতি। উত্তরায় বিএনএস টাওয়ার এলাকায় উড়াল সড়ক থেকে নামার অংশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত দম্পতির বন্ধু তানজিলা জানান, টঙ্গীর কলেজগেট এলাকায় স্বামীর সঙ্গে থাকেন তিনি। সোমবার তাঁর স্বামীর জন্মদিন ছিল। এ উপলক্ষে তাদের বাসায় বেড়াতে আসেন রাব্বী-মীম দম্পতি। সেখানে জন্মদিন পালনের পর ঢাকার তিনশ ফুট সড়ক এলাকার কোনো রেস্তোরাঁয় খাওয়ার পরিকল্পনা করেন তারা। সে অনুযায়ী দুই দম্পতি পৃথক মোটরসাইকেলে ঢাকায় আসছিল। পথে দুর্ঘটনাটি ঘটে। সোমবার রাত পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) চিকিৎসক মীমকে মৃত ঘোষণা করেন। আর রাব্বী গতকাল সকাল পৌনে ৭টার দিকে একই হাসপাতালে মারা যান।  

উত্তরা পূর্ব থানার এসআই জসিম উদ্দিন দেওয়ান বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে তাদের মোটরসাইকেলটি পড়ে ছিল। তবে কীভাবে এ দুর্ঘটনা ঘটে, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। টাঙ্গাইলের আবদুর রউফের ছেলে রাব্বী লেখাপড়া শেষ করে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তিনি টঙ্গীর কলেজগেট এলাকায় থাকতেন। 

এদিকে গতকাল সকালে উত্তরার জমজম টাওয়ারের সামনের সড়কে রাইদা পরিবহনের বাসচাপায় গেনেদা (৫৫) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা ছনকান্দা এলাকায় বাসচাপায় গতকাল মঙ্গলবার মোটরসাইকেল আরোহী দুই স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে আলী আকবর (১৩) মধ্যপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ও মধ্যপাড়া গ্রামের ফারুকের ছেলে। অপরজন জুনায়েদ (১২) একই এলাকার ফেরদৌসের ছেলে। সে মধ্যপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। নিহত দু’জন সম্পর্কে চাচাতো ভাই। 

এ ছাড়া হোসেনপুর উপজেলায় অটোরিকশার চাপায় নোহা আক্তার নামে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে। সে দক্ষিণ গোবিন্দপুর গ্রামের প্রবাসী নজরুল ইসলামের মেয়ে।

বান্দরবানের রুমায় গতকাল দুপুরে বাসচাপায় মথি ত্রিপুরা (৯) নামে এক স্কুল শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটিতে আগুন দেয়। মথি রুমা সদর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আনন্দ পাড়া গ্রামের রুদ্রিয়া ত্রিপুরার ছেলে ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের পুলিয়ায় গত সোমবার রাতে এক্সপ্রেসওয়ের কংক্রিটের ব্যারিকেডে ধাক্কা খেয়ে বাসের সুপারভাইজার জোবায়ের শেখ (৩৫) নিহত হয়েছেন। তিনি বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট উপজেলার আবুল হাসানের ছেলে।

যশোর-খুলনা মহাসড়কের অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগে যাত্রীবাহী গড়াই পরিবহনের ধাক্কায় সুকদেব দাস (৪০) নামে এক মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার একতারপুর গ্রামের সুবোধ দাসের ছেলে। 

রাজবাড়ী সদর উপজেলার বাণিবহ বাজার এলাকায় গতকাল বিকেলে ট্রাককে সাইড দিতে গিয়ে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে শিউলি সান্যাল নামে এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন। তিনি কালুখালী উপজেলার হাটগ্রামের অনুপ কুমার সান্যালের স্ত্রী।

ঘন কুয়াশায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি উপজেলার আমিরাবাদ বাসট্যান্ড থেকে জিংলাতলী পর্যন্ত আটটি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে গতকাল ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। এসব দুর্ঘনায় ২৫ জন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনাগুলোতে বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, লেগুনাসহ বিভিন্ন গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সমকাল প্রতিবেদক ও সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধি)
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন উপজ ল র দ র ঘটন এল ক য় স মব র গতক ল ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

সাবেক বিএনপি নেতা ও লঞ্চ যাত্রীদের পাল্টাপাল্টি হামলা, আহত ১০

বরিশালের হিজলায় লঞ্চের ডেকে যাত্রীদের চাদর বিছানো নিয়ে বিরোধের জেরে সাবেক বিএনপি নেতা ও লঞ্চ যাত্রীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ১০ যাত্রী আহত হয়েছেন। সোমবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার শৌলা লঞ্চঘাটে এই ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত বিএনপি নেতার নাম খালেক মাঝি। তিনি হরিণাথপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

যাত্রী ও লঞ্চ কর্মচারীরা জানান, সোমবার সকাল ৮টায় মুলাদীর মৃধারহাট থেকে এমভি জানডা নামক একটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। লঞ্চটি ৯টায় হিজলার শৌলা লঞ্চঘাটে ভেড়ে। এ স্টেশন থেকে ওঠা যাত্রীরা লঞ্চের ডেকে বসার চেষ্টা করেন। এ সময় ডেকে আগে বিছিয়ে রাখা চাদরে জায়গা পেতে যাত্রীপ্রতি এক হাজার টাকা দাবি করেন খালেক ও তাঁর সহযোগীরা। এ নিয়ে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে যাত্রীদের ওপর হামলা করা হয়। এতে ১০ জন যাত্রী আহত হন। তখন যাত্রীরা সংঘবদ্ধ হয়ে খালেক ও তাঁর সহযোগীদের ওপর পাল্টা হামলা করেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে খালেক মাঝি বলেন, লঞ্চের মধ্যে গোলযোগ দেখে তিনি তা থামাতে গিয়েছিলেন। এ সময় লঞ্চের যাত্রীরা তাঁর ওপর হামলা করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক লঞ্চ কর্মচারী জানিয়েছেন, শৌলা লঞ্চঘাট খালেক মাঝিকে চাঁদা না দিলে সাধারণ যাত্রীরা ডেকে বসতে পারেন না। তারা খালেক মাঝির কাছে অনেকটা জিম্মি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ