সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্রদলকে দোষী করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কথিত কিছু শিক্ষার্থী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসীরা খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির নেতারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুয়েট শাখার আহ্বায়ক ওমর ফারুক এর নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এই সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ কেন্দ্রীয়ভাবে তা মনিটর করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।

আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের গেমস রুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা বলেন ছাত্রদলের নেতারা। ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ‘মব’ তৈরি ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন। আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। বিকেলে নেতা–কর্মীরা টিএসসিতে সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্যে সমবেত হন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবারের সহিংসতায় জড়িত কতিপয় স্থানীয় দলীয় কর্মীকে ইতিমধ্যেই বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে তাঁদের কেউই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন এবং ছাত্রদলের ইন্ধনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর কোনো কারণ তাঁদের নেই।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল নেতারা অভিযোগ করেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’–এর ব্যানারের আড়ালে লুকানো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের গুপ্ত কর্মীরা এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদলের আদর্শে উজ্জীবিত হিসেবে পরিচিত কিছু শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করার উদ্দেশ্যে চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত করেন। ছাত্রদল কুয়েট ক্যাম্পাসে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন না করলেও এসব গুপ্ত ষড়যন্ত্রকারীদের ইন্ধনে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ পরিচয়ে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের রাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়ে বিশাল ব্যানার টাঙানো হয়। এরপর গতকালের মব মিছিল বের করে সেখান থেকে বিনা উসকানিতে ছাত্রদলের সমর্থকদের ওপরে হামলা চালানো হয়।

কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে গতকাল ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের শতাধিক ব্যক্তি আহত হন, যাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী।

ঘটনার সূত্রপাত বৈষম্যবিরোধীদের হাত ধরে দাবি করে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, গতকালের অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনার সূত্রপাত হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি মিছিল থেকে কতিপয় ব্যক্তি ছাত্রদলের সমর্থকের ওপর অতর্কিত হামলা করার মধ্য দিয়ে। সেই মিছিলের একটি ভিডিওতে দেখা যায় যে যখন ভুক্তভোগী সেই শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষে অতি সাধারণভাবেই যাচ্ছিলেন, তখন মিছিলটির আহ্বায়ক মো.

ওমর ফারুক প্রত্যক্ষভাবে হামলার সূচনা করেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুয়েট কমিটির কতিপয় মিছিলকারী তাঁদের দিকে অতর্কিতভাবে তেড়ে গিয়ে হামলা করেন।

ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের বয়ান অনুযায়ী, তাঁদেরকে ধাওয়া দিয়ে ও মারধর করে কুয়েটের ফটকের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁরা ফটকের কাছে একটি দোকানে আশ্রয় নিলে সেই দোকানদারকেও হেনস্তা করা হয়। এর জবাবে সেই দোকানমালিকের পরিচিত কিছু স্থানীয় ব্যক্তি সেই মিছিলকারীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালান। দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে, কুয়েটের ফটক হয়ে ওঠে এক রণক্ষেত্র। ঘণ্টাখানেক ধরে সেই এলাকায় চলে ন্যক্কারজনক সহিংসতা।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন বলেন, দেশে বড় বড় অগ্নিকাণ্ড যখন ঘটে, সেটি ছোট ছোট ‘শর্টসার্কিট’ থেকে তৈরি হয়। গতকাল খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে, যে ‘শর্টসার্কিট’ হয়েছে, সেটি তৈরি করেছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশৃঙ্খল মব। এটির নেতৃত্ব দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ওমর ফারুক এবং কেন্দ্রীয়ভাবে তা মনিটর করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, যে হামলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা শুরুতে ছাত্রদলের ওপর করেছেন, সে হামলা যদি তাঁরা না চালাতেন, তাহলে এ ধরনের সংঘাত কখনোই ছড়িয়ে পড়ত না।

নাছির উদ্দিন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির আহ্বায়ক ওমর ফারুকই ছাত্রদলের সেই তিন সমর্থককে ‘ধর, ধর’ বলে প্রথম তেড়ে যান। কুয়েট ক্যাম্পাসে গত ১১ আগস্ট থেকে প্রশাসনিকভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি ঘোষণার পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রম তারা পরিচালনা করে আসছে, যার বিরুদ্ধে কুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

‘শিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামকে কলুষিত করছে’

ইসলামী ছাত্রশিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন ছাত্রদল সভাপতি। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, যখন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শে অসংখ্য নবীন শিক্ষার্থী আকৃষ্ট হচ্ছেন ও রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছেন, ঠিক তখনই আন্ডারগ্রাউন্ড অপরাজনীতির অত্যুৎসাহী চর্চার মাধ্যমে প্রতিঘাতমূলক নানা গুপ্ত কার্যক্রম ও অপপ্রচারকে পুঁজি করে উসকানি ও সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছেন কিছু গুপ্ত সংগঠন ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ফ্যাসিবাদী সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ছাত্রলীগ যেমন অতীতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নাম ভাঙিয়ে নিজেদের নানা অপকর্মের সাফাই দিত, ঠিক সেভাবেই ৫ আগস্ট–পরবর্তী সময়ে গুপ্ত সংগঠন শিবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামকে কলুষিত করছে এবং এই নাম ব্যবহারের মাধ্যমে ক্যাম্পাসগুলোতে ভিন্ন রূপে অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে।

কুয়েটের ঘটনা নিয়ে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ছড়ানো হয়েছে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কুয়েটে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি নিয়ে অনলাইন ও অফলাইনে সত্য ঘটনাকে আড়াল করে অপপ্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নামে মিথ্যা অপবাদ চারদিকে ছড়ানো হচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র স ন ছ ত রদল র ওমর ফ র ক র জন ত ক কর ম র গতক ল ইসল ম র ওপর স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

তিন সাংবাদিকের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় ডিআরইউ’র উদ্বেগ

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্য সাংবাদিক রফিকুল বাসার, মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন সংবাদকর্মীর চাকরিচ্যুতির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে ডিআরইউ।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল সংবাদকর্মীদের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় এ উদ্বেগ জানান।

উল্লেখ্য, চ্যানেল আই’র সাংবাদিক রফিকুল বাসার, এটিএন বাংলার মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও দীপ্ত টিভির সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে মঙ্গলবার কোনো রকম পূর্ব নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ।

ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ তিন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুতির কারণ ব্যাখ্যা করার দাবি জানিয়েছেন।

এএএম//

সম্পর্কিত নিবন্ধ