যুক্তরাজ্যে মুসলিমবিদ্বেষ বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ, বেশি শিকার পুরুষেরা
Published: 20th, February 2025 GMT
গাজাযুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাজ্যে মুসলিমবিদ্বেষ রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। দেশটিতে গত বছর মুসলিমবিদ্বেষের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ছয় হাজার, যা এর আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।
ইসলামোফোবিয়া বা ইসলামভীতি থেকে সংঘটিত নানা ঘটনার ওপর নজর রাখে এমন একটি সংগঠন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। ‘টেল মামা’ নামের এ সংগঠনের যাত্রা শুরু ২০১২ সালে। তারা বলেছে, গত বছর নারীদের তুলনায় মুসলিমবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের শিকার বেশি হয়েছেন পুরুষেরা।
সামনাসামনি যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর বেশির ভাগই ছিল বিদ্বেষমূলক আচরণ, শারীরিক নিপীড়ন, বিভেদ সৃষ্টি ও ভাঙচুরের। অধিকাংশ হামলা হয়েছে সড়ক এবং উদ্যানের মতো খোলা জায়গায়, যেখানে লোকসমাগম বেশি থাকে। কর্মক্ষেত্রে এমন ঘটনা কম ঘটেছে।প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজাযুদ্ধ শুরু হওয়া ও সাউথপোর্ট হত্যাকাণ্ডের পর যুক্তরাজ্যে মুসলিমবিদ্বেষী কথাবার্তা অনেক বেড়েছে, মুসলিমদের সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীল বলেও মিথ্যা দাবি করা হচ্ছে।
সরকারের একজন মুখপাত্র এ পরিস্থিতিকে ‘খুবই উদ্বেগজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক ঘটনা যেখানেই ঘটুক সরকার তা নির্মূল করতে চায়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাজ্যে মুসলিমবিদ্বেষের ৬ হাজার ৩১৩টি ঘটনা ঘটেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি। এসব ঘটনার মধ্যে ৫ হাজার ৮৩৭টি অভিযোগ যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছে টেল মামা।
যুক্তরাজ্যে মুসলিমদের এক বড় অংশ সড়ক ও অনলাইনে মুসলিমবিরোধী ঘৃণার শিকার হচ্ছেন। যাঁরা শিকার হচ্ছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো ও তাঁদের জন্য কাজ করা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি প্রয়োজন।ইমান আতা, টেল মামার পরিচালকসংগঠনটি বলেছে, তাদের হাতে থাকা তথ্য অনুযায়ী অফলাইনে এসব ঘটনার মাত্রা বেড়েছে। তারা এমন ৩ হাজার ৬৮০টি ঘটনার কথা জেনেছে, দুই বছর আগের তুলনায় যা ৭২ শতাংশ বেশি।
প্রত্যক্ষ যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর বেশির ভাগই ছিল বিদ্বেষমূলক আচরণ, শারীরিক নিপীড়ন, বৈষম্য ও ভাঙচুরের। অধিকাংশ হামলা হয়েছে সড়ক ও উদ্যানের মতো খোলা জায়গায়, যেখানে লোকসমাগম বেশি থাকে। কর্মক্ষেত্রে এমন ঘটনা কম ঘটেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যেদিন থেকে তারা এ ধরনের ঘটনার ওপর নজর রাখতে শুরু করেছে, সেদিন থেকে এবারই (২০২৪ সাল) প্রথম নারীদের তুলনায় পুরুষদের মুসলিমবিদ্বেষের শিকার বেশি হতে দেখছে তারা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজাযুদ্ধ শুরু হয়। আর সাউথপোর্ট হত্যাকাণ্ড হয় গত বছরের জুলাই মাসে। সেখানে একটি নাচের ক্লাসে তিনটি ছোট্ট মেয়েকে হত্যা করা হয়। গত বছর ইসলামভীতি থেকে অনলাইনে মুসলিমবিদ্বেষের যেসব ঘটনা ঘটেছে তার অর্ধেকের বেশি ঘটেছে এ হত্যাকাণ্ডের পর।
ওই হত্যাকাণ্ডের পর হামলাকারীর পরিচয় নিয়ে অনলাইনে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে নাগরিক জীবনে তীব্র বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। বিশৃঙ্খলা পরে যুক্তরাজ্যজুড়ে ছড়ায়।
সাউথপোর্ট হত্যাকাণ্ডে আদালত এক্সেল রুডাকুবানা নামে ১৮ বছরের এক তরুণকে দোষী সাব্যস্ত করে ৫২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। রুডাকুবানার জন্ম কার্ডিফে। তাঁর মা–বাবা রুয়ান্ডা থেকে যুক্তরাজ্যে এসেছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজাযুদ্ধ শুরু হয়। আর সাউথপোর্ট হত্যাকাণ্ড হয় গত বছরের জুলাই মাসে। সেখানে একটি নাচের ক্লাসে তিনটি ছোট্ট মেয়েকে হত্যা করা হয়। গত বছর ইসলামভীতি থেকে অনলাইনে মুসলিমবিদ্বেষের যেসব ঘটনা ঘটেছে তার অর্ধেকের বেশি ঘটেছে এ হত্যাকাণ্ডের পর।টেল মামার পরিচালক ইমান আতা মুসলিমবিদ্বেষের ঘটনা কমাতে সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে মুসলিমদের এক বড় অংশ সড়ক ও অনলাইনে মুসলিমবিরোধী ঘৃণার শিকার হচ্ছেন। যাঁরা শিকার হচ্ছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো ও তাঁদের জন্য কাজ করা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি প্রয়োজন।’ জনগণকে ঘৃণা ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে একজোট হয়ে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘মুসলিমদের ওপর হামলা ও ঘৃণার প্রকাশ সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং আমাদের সমাজে এর কোনো জায়গা নেই।’
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড মাত্রায় বেড়েছে মুসলিমবিদ্বেষ ০২ এপ্রিল ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য সব ঘটন গত বছর বছর র ইসল ম সরক র ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ শুরু
কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ। মহান মে দিবস উপলক্ষে ঢাকার নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত এ সমাবেশে হাজার হাজার নেতকর্মী উপস্থিত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে ওলামা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কারী গোলাম মোস্তফার কোরআন তেলাওয়াত শুরু করেন।
এর আগে দুপুর ১২টা থেকে সমাবেশ মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন।
দুপুর আড়াইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের জেলা থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা যোগ দেন সমাবেশে।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সমাবেশে শ্রমিক দলের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হবে ১২ দফা দাবি।
সমাবেশ স্থলে দেখা যায়, নেতাকর্মীরা ব্যানার, মাথায় নানা রঙের ক্যাপ, দলীয় টি-শার্ট পরে নয়পল্টনে আসছেন। জায়গায় জায়গায় চলছে স্লোগান, দলীয় সংগীত আর ঢাক-ঢোলের বাদ্য।
সমাবেশস্থলে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি উপস্থিত রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) আহ্বায়ক হেলাল খান, সদস্যসচিব জাকির হোসেন রোকন প্রমুখ।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সমাবেশস্থলে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। জিরো পয়েন্ট থেকে পল্টনমুখী সড়ক সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা রাখা হয়েছে।
টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রথম এতো বড় সমাবেশ করছে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।
এর আগে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত বছরের ৮ আগস্ট প্রথম বাধাহীন সমাবেশ করে বিএনপি। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। পুরো এলাকায় ছিল উচ্ছ্বল নেতাকর্মীদের ভিড়।
ঢাকা/এএএম/ইভা