ক্ষতিপূরণের দাবিতে কয়লা খনির গেটে গ্রামবাসীর অবস্থান
Published: 20th, February 2025 GMT
দেশের একমাত্র কয়লাখনি দিনাজপুরের পাবর্তীপুর উপজেলায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা ক্ষতিপূরণসহ ৬ দফা দাবিতে খনির ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে খনির প্রধান গেটে অবস্থান নেয় ক্ষতিগ্রস্ত ১২টি গ্রামের বাসিন্দারা। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে খনির ভেতরে অবস্থানরত কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ তাদের পরিবার।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়লা উত্তোলনের জন্য ভূগর্ভে মাইন বিস্ফোরণের সময় ভূপৃষ্ঠে কম্পনের সৃষ্টি হয়। এই কম্পনের ফলে বাড়িঘরে ফাটলসহ বিরুপ প্রভাব পড়ছে। ভূমি অবনমন, সুপেয় পানির সংকট, রাস্তাঘাট টেকসই না হওয়া, গাছের ফলমূল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিগত দেড় বছর ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলন করলেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজকের এ অবস্থান কর্মসুচি পালন করা হচ্ছে।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে খনির পার্শ্ববর্তী বৈগ্রাম, কাশিয়াডাঙা, মোবারকপুর, জব্বারপাড়া, রসুলপুর, চক মহেশপুর, চৌহাটি, সাহাগ্রাম, দূর্গাপুর, হামিদপুর ও পূর্ব শেরপুরসহ ১২টি গ্রামের সহস্রাধিক নারী পুরুষ খনি গেটে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছে।
এ সময় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল বেরুনী, সহ-সভাপতি আলী হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মো.
বক্তারা দাবি করেন, ‘‘ভূ-গর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করতে গিয়ে ভূ-গর্ভের নিচে মাইন বিস্ফোরণ করতে হয়। সেই মাইন বিস্ফোরণে প্রায় ৩-৪ মাইল এলাকা পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। এতে ১২টি গ্রামে কাঁচা-পাকা বাড়িঘর প্রতিনিয়ত ফেটে যাচ্ছে। রাতে পরিবার-পরিজন ও ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আতঙ্কে ঘুমাতে হচ্ছে। আমরা বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে সংগঠনের পক্ষ থেকে গত ২০১৬ সাল থেকে আন্দোলন করে আসছি। যে আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ও অধিকার আদায়ের। কিন্তু বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম সরকার আমাদের সঙ্গে বৈষম্য শুরু করেছেন। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে ২২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গত সেপ্টেম্বর মাসে দেখা করতে গেলেও তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করবেন না বলে সরাসরি জানিয়ে দেন। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি করতে গিয়ে এখানে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, রাস্তাঘাট, আবাদি জমি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা এখন পথে বসেছি। গত দেড় বছর ধরে জোরালো আন্দোলন চলছে।’’ নির্ধারিত সময়ে দাবি আদায় না হওয়ায় অবস্থান কর্মসূচি চলছে বলে জানান তিনি।
ছয়দফা দাবিগুলো হলো, অবৈধভাবে ভূগর্ভে বিস্ফোরক ব্যবহারের কারণে সকল ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের ক্ষতিপূরণ দেয়া, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সকল রাস্তাঘাট মেরামত করা, এলাকার বেকার ছেলে ও মেয়েদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেয়া, ক্ষতিগ্রস্ত সকল এলাকায় সুপেয় পানির সমস্যা সমাধান করা, ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে যাদের ভূমি থেকে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে, তাদের কয়লা উৎপাদন বোনাস ৫ শতাংশ দেয়া ও মাইনিং সিটি অথবা উন্নতমানের বাসস্থান তৈরি করে দেওয়া।
খনির প্রধান গেটসহ সব গেটে আন্দোলনকারী গ্রামবাসী অবস্থান করায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে খনির অভ্যন্তরে অবস্থানরত আবাসিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবার। সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় সেখানে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সেনা সদস্যরা অবস্থান করছে।
এ বিষয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম সরকার জানান, ইতোপূর্বে খনি সংলগ্ন কয়েকটি গ্রামের মানুষ আন্দোলন করছিল, সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদে একটা অনুদান দেয়া হয়েছে। এখন তাদের দেখাদেখি খনি থেকে একটু দূরে ১৩ গ্রামের লোকজনও ক্ষতিপূরণের দাবি করছে।
তিনি আরো জানান, এ ব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব এক্সপার্ট টিমের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে ওই এলাকায় কম্পন হচ্ছে কি-না বা খনির কারণে কোনো ইফেক্ট পড়ছে কি-না, এটা যাচাই-বাছাই করে রিপোর্ট দেবে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়েছি, তারা এক বছর সময় চেয়েছে। এ বিষয়টি গ্রামবাসীদের জানালে তারা সময় দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। আমাদের মন্তব্য হচ্ছে, এত দূরে কম্পনের সুযোগ নেই। এছাড়া এমডির ক্ষমতা নেই কাউকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার। বোর্ড থেকে এটা পাস করাতে হয়।’’
বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা খনি থেকে বের হতে পারছে কি -না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, দুটি গেট বন্ধ ছিল। পশ্চিম দিকের গেটটি তারা অবস্থা করছেন। পরে দক্ষিণ দিকের গেটটি পুলিশের সহযোগিতায় খুলেছে।
ঢাকা/মোসলেম/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বড়প ক র য় ন কম ট
এছাড়াও পড়ুন:
কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা
জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।
এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।
আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?
উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’
আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।