দেশের একমাত্র কয়লাখনি দিনাজপুরের পাবর্তীপুর উপজেলায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা ক্ষতিপূরণসহ ৬ দফা দাবিতে খনির ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছে।

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে খনির প্রধান গেটে অবস্থান নেয় ক্ষতিগ্রস্ত ১২টি গ্রামের বাসিন্দারা। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে খনির ভেতরে অবস্থানরত কর্মকর্তা-কর্মচারিসহ তাদের পরিবার।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়লা উত্তোলনের জন্য ভূগর্ভে মাইন বিস্ফোরণের সময় ভূপৃষ্ঠে কম্পনের সৃষ্টি হয়। এই কম্পনের ফলে বাড়িঘরে ফাটলসহ বিরুপ প্রভাব পড়ছে। ভূমি অবনমন, সুপেয় পানির সংকট, রাস্তাঘাট টেকসই না হওয়া, গাছের ফলমূল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিগত দেড় বছর ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলন করলেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজকের এ অবস্থান কর্মসুচি পালন করা হচ্ছে।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে খনির পার্শ্ববর্তী বৈগ্রাম, কাশিয়াডাঙা, মোবারকপুর, জব্বারপাড়া, রসুলপুর, চক মহেশপুর, চৌহাটি, সাহাগ্রাম, দূর্গাপুর, হামিদপুর ও পূর্ব শেরপুরসহ ১২টি গ্রামের সহস্রাধিক নারী পুরুষ খনি গেটে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছে।

এ সময় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল বেরুনী, সহ-সভাপতি আলী হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মো.

হোসেন আলী, সাংগাঠনিক সম্পাদক আবু শিবলীসহ অনেকে।

বক্তারা দাবি করেন, ‘‘ভূ-গর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করতে গিয়ে ভূ-গর্ভের নিচে মাইন বিস্ফোরণ করতে হয়। সেই মাইন বিস্ফোরণে প্রায় ৩-৪ মাইল এলাকা পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। এতে ১২টি গ্রামে কাঁচা-পাকা বাড়িঘর প্রতিনিয়ত ফেটে যাচ্ছে। রাতে পরিবার-পরিজন ও ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আতঙ্কে ঘুমাতে হচ্ছে। আমরা বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে সংগঠনের পক্ষ থেকে গত ২০১৬ সাল থেকে আন্দোলন করে আসছি। যে আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ও অধিকার আদায়ের। কিন্তু বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম সরকার আমাদের সঙ্গে বৈষম্য শুরু করেছেন। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে ২২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গত সেপ্টেম্বর মাসে দেখা করতে গেলেও তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করবেন না বলে সরাসরি জানিয়ে দেন। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি করতে গিয়ে এখানে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, রাস্তাঘাট, আবাদি জমি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা এখন পথে বসেছি। গত দেড় বছর ধরে জোরালো আন্দোলন চলছে।’’ নির্ধারিত সময়ে দাবি আদায় না হওয়ায় অবস্থান কর্মসূচি চলছে বলে জানান তিনি। 

ছয়দফা দাবিগুলো হলো, অবৈধভাবে ভূগর্ভে বিস্ফোরক ব্যবহারের কারণে সকল ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের ক্ষতিপূরণ দেয়া, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সকল রাস্তাঘাট মেরামত করা, এলাকার বেকার ছেলে ও মেয়েদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেয়া, ক্ষতিগ্রস্ত সকল এলাকায় সুপেয় পানির সমস্যা সমাধান করা, ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে যাদের ভূমি থেকে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে, তাদের কয়লা উৎপাদন বোনাস ৫ শতাংশ দেয়া ও মাইনিং সিটি অথবা উন্নতমানের বাসস্থান তৈরি করে দেওয়া।

খনির প্রধান গেটসহ সব গেটে আন্দোলনকারী গ্রামবাসী অবস্থান করায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে খনির অভ্যন্তরে অবস্থানরত আবাসিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবার। সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় সেখানে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সেনা সদস্যরা অবস্থান করছে।

এ বিষয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম সরকার জানান, ইতোপূর্বে খনি সংলগ্ন কয়েকটি গ্রামের মানুষ আন্দোলন করছিল, সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদে একটা অনুদান দেয়া হয়েছে। এখন তাদের দেখাদেখি খনি থেকে একটু দূরে ১৩ গ্রামের লোকজনও ক্ষতিপূরণের দাবি করছে।

তিনি আরো জানান, এ ব্যাপারে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব এক্সপার্ট টিমের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে ওই এলাকায় কম্পন হচ্ছে কি-না বা খনির কারণে কোনো ইফেক্ট পড়ছে কি-না, এটা যাচাই-বাছাই করে রিপোর্ট দেবে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়েছি, তারা এক বছর সময় চেয়েছে। এ বিষয়টি গ্রামবাসীদের জানালে তারা সময় দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। আমাদের মন্তব্য হচ্ছে, এত দূরে কম্পনের সুযোগ নেই। এছাড়া এমডির ক্ষমতা নেই কাউকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার। বোর্ড থেকে এটা পাস করাতে হয়।’’

বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা খনি থেকে বের হতে পারছে কি -না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, দুটি গেট বন্ধ ছিল। পশ্চিম দিকের গেটটি তারা অবস্থা করছেন। পরে দক্ষিণ দিকের গেটটি পুলিশের সহযোগিতায় খুলেছে।
 

ঢাকা/মোসলেম/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বড়প ক র য় ন কম ট

এছাড়াও পড়ুন:

মে মাসে এক থেকে দুটি ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস

চলতি মাসে ধেয়ে আসতে পারে এক থেকে দুটি ঘূর্ণিঝড়। সেই সঙ্গে এ মাসে শিলা ও বজ্রবৃষ্টিসহ তীব্র কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস এম কামরুল হাসানের সই করা একমাসের দীর্ঘ মেয়াদি পূর্বাভাসে এই তথ্য জানা গেছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মে মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে তিনটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে যার মধ্যে এক থেকে দুইটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। দেশে ২ থেকে ৩ দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি বা তীব্র কালবৈশাখী ঝড় এবং ৩ থেকে ৫ দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ হালকা কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে।

আরো পড়ুন:

নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘ফিনজালে’ পরিণত, বন্দরে ২ নম্বর সংকেত

উপকূল রক্ষা করছে বনাঞ্চল, কিন্তু বন বাঁচাতে নেই উদ্যোগ

তীব্র তাপপ্রবাহের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের কোথাও কোথাও ১ থেকে ৩টি মৃদু (৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ডিগ্রি সেলসিয়াস) ও মাঝারি (৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং ১ থেকে ২টি তীব্র (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি) তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ সময় দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিক এবং রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি থাকতে পারে।

এই আবহাওয়াবিদ বলেন, “মে মাসে দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহে স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে। তবে বিচ্ছিন্ন ভারি বৃষ্টিপাতের প্রেক্ষিতে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে বাড়তে পারে।”

এদিকে, মে মাসে দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোয় স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে বিচ্ছিন্ন ভারি বৃষ্টিপাতের প্রেক্ষিতে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোর পানি সমতল সময় বৃদ্ধি পেতে পারে।

ঢাকাসহ ৮ জেলায় বজ্রপাতের সতর্কতা জারি
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আটটি জেলায় বজ্রপাতের সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে বলা হয়েছে প্রায় বিকেল ৫টা পর্যন্ত এসব এলাকায় বজ্রপাতের ঝুঁকি রয়েছে। একইসঙ্গে দেশের কিছু কিছু জায়গায় দমকা হওয়া ও শিলাসহ বৃষ্টির সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুরে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানানো হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশিদের সই করা এই সতর্কবার্তায় জানানো হয়, ঢাকা, শেরপুর, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ এবং সিলেট জেলার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বা তার বেশি বেগে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। একইসঙ্গে পৌনে ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বজ্রপাতের সম্ভাবনাও রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে আবহাওয়া অধিদপ্তর জনসাধারণকে কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শও বিজ্ঞপ্তিতে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ঘরে অবস্থান করা, অপ্রয়োজনে যাত্রা এড়িয়ে চলা এবং নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা। একইসঙ্গে গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি কংক্রিটের মেঝেতে শোয়া বা দেয়ালে হেলান দেওয়া থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এছাড়া, বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোর প্লাগ খুলে রাখার এবং জলাশয় থেকে দ্রুত সরে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ পরিবাহী যে কোনো বস্তু থেকে দূরে থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সতর্কবার্তায়। শিলাবৃষ্টির সময় সবাইকে ঘরে থাকারও আহ্বান জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ