চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এ গোলাগুলি হয়। এরপর রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত দফায় দফায় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় চারজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন জঙ্গল সলিমপুরে ছিন্নমূল এলাকার বাসিন্দা হাফেজ মোহাম্মদ ইমরান, তাঁর ভাই আবদুল কাইয়ুম, বাবা আবু তাহের এবং অপর পক্ষের বেলায়েত হোসেন।

সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া দুটি পক্ষই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জঙ্গল সলিমপুর দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ছিন্নমূল ৬ নম্বর সমাজে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছিন্নমূল বস্তিবাসী সংগ্রাম পরিষদের অর্থ সম্পাদক হাফেজ মো.

ইমরানের নেতৃত্বে একটি পক্ষের সঙ্গে ওই পরিষদের যুববিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ রিদওয়ানের পক্ষের লোকজনের গোলাগুলি শুরু হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের লোকজন জড়ো হয়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু করে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত চারজন আহত হয়েছেন।

সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, আজ দুপুরে জঙ্গল সলিমপুর ৬ নম্বর সমাজ এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা খবর পেয়ে তাঁরা ওই এলাকায় যান। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁরা কাউকে পাননি। তবে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা জেনেছেন, উভয় পক্ষের লোকজন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

এক পক্ষের নেতৃত্ব দেওয়া হাফেজ মোহাম্মদ ইমরান নিজে আহত হওয়ার কথা দাবি করে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি মাদ্রাসায় ছিলেন। হঠাৎ শুনতে পান সলিমপুর ইউনিয়ন যুবদলের নেতা রোকন উদ্দিনের অনুসারীরা তাঁর বাবাকে মারধর করেছেন। এ খবর পেয়ে তাঁরা দুই ভাই ঘটনাস্থলে গেলে তাঁদেরও কুপিয়ে আহত করেন। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাঁরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। বর্তমানে তাঁরা তিনজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ ব্যাপারে জানতে সলিমপুর ইউনিয়ন যুবদলের নেতা রোকন উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

এর আগে ১০ ফেব্রুয়ারি ছিন্নমূল ৫ নম্বর সমাজের অন্ধ কলোনির মুখে মোহাম্মদ মাসুদ নামে বিএনপির এক সমর্থককে পিটিয়ে আহত করে প্রতিপক্ষের লোকজন। এ ছাড়া গত ২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় প্রতিপক্ষের লোকজনের ছুরিকাঘাতে নিজ বাড়ির সামনে মীর আরমান হোসেন নামে উপজেলা বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক নিহত হন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল কজন র ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

দুনিয়ায় প্রত্যেক মুসলিমকে যেসব পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে

জীবন একটি পরীক্ষার ময়দান, যেখানে আমরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও কষ্টের মুখোমুখি হই। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, জীবন ও ফসলের ক্ষতি দিয়ে। আর যারা ধৈর্য ধরে, তাদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫)

এই পরীক্ষাগুলো প্রায়ই আমাদের হতাশ বা বিমর্ষ করে তুলতে পারে, কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায় যে এই কষ্টগুলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম এবং পরকালে চিরস্থায়ী সুখের পথ প্রশস্ত করে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এই দুনিয়ার জীবন তো কেবল ক্ষণস্থায়ী ভোগ, আর পরকালই হলো চিরস্থায়ী আবাস।’ (সুরা গাফির, আয়াত: ৩৯)

পরীক্ষার উদ্দেশ্য

ইসলামে পরীক্ষা বা কষ্টকে আল্লাহর রহমতের অংশ হিসেবে দেখা হয়। এগুলো আমাদের পাপ থেকে মুক্তি, আল্লাহর ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি, নিজেকে নম্র করা এবং তাঁর নৈকট্য লাভের মাধ্যম।

আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, জীবন ও ফসলের ক্ষতি দিয়ে। আর যারা ধৈর্য ধরে, তাদের সুসংবাদ দাও।সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫

পরীক্ষা আমাদের ধৈর্য ও বিশ্বাস যাচাই করে এবং এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে উচ্চ মর্যাদা লাভ করতে পারি। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখনই তুমি আল্লাহর জন্য কিছু ত্যাগ করবে, আল্লাহ তা তোমার জন্য আরও উত্তম কিছু দিয়ে প্রতিস্থাপন করবেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৩,০৭৪)

আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য

দুনিয়ার জীবন সাময়িক এবং এর কষ্টগুলো ক্ষণস্থায়ী। আমরা প্রায়ই দুনিয়ার সমস্যায়, যেমন অর্থনৈতিক সংকট, সম্পর্কের জটিলতা বা সামাজিক চাপ, এতটাই মগ্ন হয়ে পড়ি যে আমাদের মূল উদ্দেশ্য ভুলে যাই। পবিত্র কোরআন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ‘কিন্তু যে ব্যক্তি তার প্রভুর সামনে দাঁড়ানোর ভয় করেছে এবং নিজের নফসকে অবৈধ কামনা থেকে বিরত রেখেছে, তার জন্য জান্নাতই হবে আশ্রয়।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত: ৪০–৪১)

ইবন কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন, ‘যদি আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য পর্দা তুলে দিতেন এবং তাকে দেখাতেন, কীভাবে তিনি তার জন্য সবকিছু পরিচালনা করেন, তবে তার হৃদয় আল্লাহর প্রতি ভালোবাসায় গলে যেত এবং কৃতজ্ঞতায় টুকরা টুকরা হয়ে যেত। তাই যদি দুনিয়ার কষ্ট তোমাকে ক্লান্ত করে, তবে দুঃখ করো না। হয়তো আল্লাহ তোমার দোয়ার কণ্ঠ শুনতে চান।’ (ইবন কাইয়্যিম, আল–ফাওয়ায়িদ, পৃষ্ঠা ১২৮, বৈরুত: দারুল কুতুব আল–ইলমিয়্যাহ, ১৯৯৬)

পরীক্ষা আমাদের ধৈর্য ও বিশ্বাস যাচাই করে এবং এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে উচ্চ মর্যাদা লাভ করতে পারি।

পরীক্ষা আমাদের আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়। এটি আমাদের নম্র করে, আমাদের পাপমুক্তি ঘটায় এবং আল্লাহর ওপর নির্ভরতা বাড়ায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ায় যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি কষ্ট ও পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছে, তাকে জান্নাতে একবার ডুবিয়ে দেওয়া হবে এবং জিজ্ঞাসা করা হবে, ‘হে আদম সন্তান, তুমি কি কখনো কোনো কষ্ট দেখেছিলে? তুমি কি কখনো দুঃখ অনুভব করেছিলে?’ সে বলবে, ‘না, হে আমার রব! আমি কখনো কোনো কষ্ট দেখিনি, কখনো কোনো দুঃখ অনুভব করিনি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর–২৮০৭)

আরও পড়ুনবালকের ঈমানের পরীক্ষা ও বাদশাহের নির্মম পরিণতি০৪ মে ২০২৪আল্লাহর পরিকল্পনায় ভরসা

পরীক্ষার সময় মনে রাখতে হবে যে আল্লাহর পরিকল্পনা আমাদের পরিকল্পনার চেয়ে উত্তম। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হয়তো তোমরা এমন কিছু অপছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর এমন কিছু পছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জানো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৬)

এই আয়াত আমাদের শেখায় যে কষ্টের পেছনে আল্লাহর একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্য রয়েছে।

হয়তো তোমরা এমন কিছু অপছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর এমন কিছু পছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জানো না।সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৬

আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি পরকালের জন্য চিন্তিত থাকে, আল্লাহ তার বিষয়গুলো সহজ করে দেবেন, তার হৃদয়ে তৃপ্তি দেবেন এবং দুনিয়া তার কাছে আসবে, যদিও সে তা অপছন্দ করে।’ (ইবন মাজাহ, হাদিস: ৪১০৫)

পরীক্ষায় ধৈর্য ও দোয়া

পরীক্ষার সময় ধৈর্য ধরা এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তিনি তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক, আয়াত: ৩) দোয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের হৃদয়ের কথা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করি এবং তাঁর রহমতের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করি।

ইবন কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন, ‘যদি দুনিয়ার কষ্ট তোমাকে ক্লান্ত করে, তবে সিজদায় তোমার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করো এবং জেনে রাখো, আল্লাহ কখনো ভোলেন না।’ (আল–ফাওয়ায়িদ, পৃষ্ঠা ১৩০, বৈরুত: দারুল কুতুব আল–ইলমিয়্যাহ, ১৯৯৬)

আমরা যদি আল্লাহকে আমাদের হৃদয়ের কেন্দ্রে রাখি, তবে কোনো পরীক্ষাই আমাদের ভেঙে দিতে পারবে না।

জীবনের পরীক্ষাগুলো আমাদের আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়, আমাদের হৃদয়কে বিশুদ্ধ করে এবং পরকালে জান্নাত লাভের পথ প্রশস্ত করে। দুনিয়ার কষ্ট ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু আল্লাহর ভালোবাসা ও রহমত চিরস্থায়ী।

আমরা যদি আল্লাহকে আমাদের হৃদয়ের কেন্দ্রে রাখি, তবে কোনো পরীক্ষাই আমাদের ভেঙে দিতে পারবে না; বরং নবীজি (সা.)–এর শিক্ষা ও ধৈর্য, দোয়া এবং আল্লাহর ওপর ভরসার মাধ্যমে আমরা জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় বিজয়ী হতে পারব।

আরও পড়ুনত্যাগের পরীক্ষা, সফলতার উদ্যাপন০১ আগস্ট ২০২০

সম্পর্কিত নিবন্ধ