গরমে বিদ্যুতের লোডশেডিং স্বাভাবিক ঘটনা হইলেও এইবার উহা অস্বাভাবিক হারে দেখা দিবার আশঙ্কা তৈয়ার হইয়াছে। শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থ সংকটে জ্বালানি আমদানি ব্যাহত হইবার কারণে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করিতে পারে। বিশেষত আসন্ন রমজান মাসে গরম বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাইবে। তৎসহিত সেচ মৌসুম যুক্ত করিলে ধারণা করা কঠিন নহে, মার্চ-এপ্রিল হইতে বিদ্যুতের চাহিদা হইবে দেড় গুণ। অতিরিক্ত চাহিদা পূরণে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করিলেও উহা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নহে।
বিশেষ করিয়া অতিরিক্ত চাহিদা পূরণ করিতে হইলে বেসরকারি খাত হইতে বিদ্যুৎ সরবরাহ জরুরি। কিন্তু ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতে সরকারের বিপুল ঋণ রহিয়াছে। সেই কারণে অর্থ সংকটে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা প্রাথমিক জ্বালানি ফার্নেস অয়েল ও কয়লা আমদানিতে হোঁচট খাইতেছে; গ্যাস খাতের পরিস্থিতিও তথৈবচ। বকেয়া ও ডলার সংকটে এলএনজি আমদানি ব্যাহত হইতে পারে। অন্যদিকে দেশীয় উৎস হইতেও গ্যাসের জোগান হ্রাস পাইতেছে। সকল কিছু মিলাইয়া এইবার গরমে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন যে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়িবে, উহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না।
ইহা স্পষ্ট, সরকার জ্বালানি সাশ্রয় নীতির উপর গুরুত্ব দিয়াছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ইতোমধ্যে সতর্ক করিয়াছেন, আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম তাপমাত্রায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র-এসি ব্যবহার করিলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ, তৎসহিত আইনগত ব্যবস্থাও লওয়া হইবে। সরকারের হিসাব অনুসারে, এসির কারণে প্রায় চার সহস্র মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হইয়া থাকে, যথায় উহার তাপমাত্রা ২৫-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ব্যবহার করিলে অন্তত দুই সহস্র মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় সম্ভব হইবে। এই লক্ষ্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা প্রদান করিবেন, ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা মসজিদের ইমামদের অনুরোধ করিবেন এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব সচিবালয়সহ অন্যান্য সরকারি দপ্তরে এই নীতি কার্যকর করিবেন।
আমরা মনে করি, জ্বালানি সাশ্রয়ের এই নীতি নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী এবং মানুষ যাহাতে এই ক্ষেত্রে সচেষ্ট থাকে তজ্জন্য বিদ্যুৎ অপচয় রোধেও বৎসরব্যাপী সরকারকে প্রচার-প্রচারণা চালাইতে হইবে; কেবল জ্বালানি সাশ্রয়ের নীতি গ্রহণে বিদ্যুতের সংকট কাটিবে না। রমজান মাস হইতে বিদ্যুতের অতিরিক্ত চাহিদা পূরণ করিতে হইলে উৎপাদন বৃদ্ধির বিকল্প নাই। জ্বালানি উপদেষ্টা সরকারের আর্থিক সংকটের কথা স্বীকার করিয়াছেন বটে, তবে এই লক্ষ্যে অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত কমিটি কার্যকর ভূমিকা রাখিবে বলিয়াই আমাদের বিশ্বাস। ইতিপূর্বে আমরা দেখিয়াছি, গ্রামে ভয়াবহ লোডশেডিং হইলেও শহরবাসী বেশি সুবিধা ভোগ করিত। এইবার সরকার শহর ও গ্রামে সমান হারে এই লোডশেডিং বণ্টন করিবার ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছে। আমরা চাই, এই ক্ষেত্রে রুটিন করা হউক; কোথায় কখন বিদ্যুৎ যাইবে সেইভাবে রুটিন মানিলে উহাতে মানুষের ভোগান্তি কিছুটা হ্রাস পাইবে।
অস্বীকার করা যাইবে না, গত সরকারের জ্বালানি খাতের ভুল নীতির প্রভাব অন্তর্বর্তী সরকারের উপরেও পড়িয়াছে। জ্বালানি খাতের নিরাপত্তায় দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করিবার বিকল্প নেই। কিন্তু আসন্ন রমজান মাস ও সেচ মৌসুমের কথা চিন্তা করিয়া সরকারকে আপাত ব্যবস্থারূপে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করিতে জ্বালানি আমদানি করিতেই হইবে। মনে রাখিতে হইবে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি না করিলে শিল্প উৎপাদনও ব্যাহত হইবে। তজ্জন্য জ্বালানি চাহিদার আলোকে জরুরি ভিত্তিতে জোগান দিতে সরকারকে সচেষ্ট হইতে হইবে। ইহাকে অগ্রাধিকার দিয়া এখনই ব্যবস্থা লওয়া জরুরি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব সরক র সরক র র ব যবস থ উপদ ষ ট গ রহণ আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
র্যাংকিংয়ে মিরাজ-জাকেরদের অগ্রগতি
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত টেস্ট সিরিজে দারুণ পারফর্ম করলেও এখনও টেস্ট র্যাংকিংয়ের শীর্ষ ২০-এ জায়গা হয়নি কোনো বাংলাদেশি ক্রিকেটারের। তবে দলগতভাবে বেশ কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা গেছে। ব্যাটিংয়ে উন্নতি করেছেন জাকের আলী, শান্ত ও মুমিনুল, বোলিংয়ে বড় ধাপ এগিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
বাংলাদেশের হয়ে সিরিজ সেরা মেহেদী হাসান মিরাজ ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। ব্যাটে সেঞ্চুরির পাশাপাশি দুই ম্যাচে ১৫ উইকেট তুলে নিয়ে ৪ ধাপ এগিয়ে এখন তিনি বোলিং র্যাংকিংয়ে ২৬তম স্থানে। অলরাউন্ডার র্যাংকিংয়ে তিনি এখন আছেন তিন নম্বরে।
ব্যাটিংয়ে ব্যক্তিগত উন্নতি হয়েছে জাকের আলী, শান্ত ও মুমিনুল হকের। দুটি ইনিংসে ৫৬ ও ৪৭ রান করে মুমিনুল এগিয়েছেন ৫ ধাপ, এখন অবস্থান ৪৮তম। জাকের আলী এগিয়েছেন ১০ ধাপ, অবস্থান ৫০তম। শান্ত ৪ ধাপ এগিয়ে উঠেছেন ৫৩তম স্থানে।
অন্যদিকে সিরিজে অসাধারণ পারফর্ম করে জিম্বাবুয়ের পেসার ব্লেসিং মুজারাবানি উঠে এসেছেন র্যাংকিংয়ের সেরা ১৫ বোলারের তালিকায়। প্রয়াত হিথ স্ট্রিকের পর তিনিই প্রথম জিম্বাবুইয়ান বোলার হিসেবে টেস্ট রেটিংয়ে ছুঁয়েছেন ৭০০ পয়েন্টের মাইলফলক। বাংলাদেশ সফরেই তার এই অর্জন। অন্যদিকে জিম্বাবুয়ের ব্রায়ান বেনেট দুই ইনিংসে ৫৭ ও ৫৪ রান করে প্রথমবারের মতো ব্যাটিং র্যাংকিংয়ের শীর্ষ ১০০-র মধ্যে ঢুকেছেন।
বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যাটসম্যান হিসেবে এখনও তালিকায় আছেন লিটন দাস, যদিও সিরিজে না থাকায় তিনি এক ধাপ পিছিয়ে যৌথভাবে এখন ৩৭তম। ফর্মহীনতায় ভোগা মুশফিকুর রহিম নেমে গেছেন ৪০তম স্থানে। বোলিং র্যাংকিংয়ে মিরাজের আগেই আছেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম, যার অবস্থান ২৩তম। এছাড়া সাকিব আল হাসান এখনো শীর্ষ ৫০-এ আছেন, তাসকিন আহমেদ রয়েছেন ৫১ নম্বরে।
অলরাউন্ডারদের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে জায়গা ধরে রেখেছেন সাকিব আল হাসান, যিনি দীর্ঘদিন ধরেই এই তালিকার নিয়মিত মুখ।