সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নও তারা। যাদের নিয়ে এই সাফল্যগুলো পেয়েছে অসিরা, সেই প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজেলউড ও মিচেল স্টার্কের মতো ‘বিগ থ্রি’ পেস আক্রমণের কেউই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়া দলে নেই। কেউ চোট আবার কেউ বা ব্যক্তিগত কারণে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। ৩০৮ ওয়ানডে খেলা এ তিনজনের উইকেট সংখ্যা ৫২৫। 

শুধু এ পেসাররাই নন, অলরাউন্ডার মিচেল মার্শ এবং মার্কোস স্টয়নিসও নেই পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসরে। আট বছর পর শুরু হওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার সামনের সারির বোলার বলতে আছেন লেগস্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। দলে চোটের হানার প্রভাব পড়েছে পারফরম্যান্সে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতি নিতে শ্রীলঙ্কায় গিয়ে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে ২-০তে। ৫০ ওভারের সর্বশেষ চার ম্যাচে জয়হীন অসিরা। 

লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ভঙ্গুর এই অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাজে সময় পার করা ইংল্যান্ড। ভারতের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ হারা জশ বাটলারের দলও নেই সেরা ছন্দে। কিন্তু ম্যাচটি যখন অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মধ্যে, তখন অতীত পরিসংখ্যান শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। মাঠের লড়াইয়ে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। তাই লাহোরে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচে ফিরে আসছে দুই দেশের পুরোনো দ্বৈরথ অ্যাশেজের উত্তাপ। শনিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় শুরু হতে যাওয়া ম্যাচটি দেখা যাবে টি স্পোর্টস ও নাগরিক টিভিতে।

ওয়ানডে এবং টি২০ বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডের জন্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এখন পর্যন্ত বড় আক্ষেপ। ২০০৪ এবং ২০১৩ আসরে ফাইনাল খেললেও ট্রফি জিততে পারেনি ইংলিশরা। উপমহাদেশের কন্ডিশন বলে এবার আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ তাদের জন্য। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ভারতের মাটিতে গিয়ে সাদা বলের ক্রিকেটের আট ম্যাচের মধ্যে হেরেছে সাতটিতে। এর সঙ্গে আছে ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পিছিয়ে থাকা। এখন পর্যন্ত খেলা ১৬১ ম্যাচের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ৯১ জয়ের বিপরীতে ইংলিশরা জিতেছে ৬৫ ম্যাচে। দুটি টাই এবং তিনটি পরিত্যক্ত হয়েছে। 

অবশ্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরিসংখ্যান আবার ভিন্ন। পাঁচবারের লড়াইয়ে ইংল্যান্ড তিনটিতে এবং অস্ট্রেলিয়া জিতেছে দুটিতে। আইসিসির মেগা এই ইভেন্টে জয়ের সংখ্যায় এগিয়ে থাকার সঙ্গে দলের শক্তির বিচারেও এগিয়ে ইংল্যান্ড। বেশ কয়েকজন তারকা ক্রিকেটারের অনুপস্থিতিতে ইংল্যান্ড এগিয়ে থাকবে কিনা– এই প্রশ্নটি গতকাল ম্যাচ-পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে শুনতে হয়েছে দলটির অধিনায়ক বাটলারকে। ইংলিশ দলপতি অস্ট্রেলিয়াকে দুর্বল মনে করছেন না, ‘দীর্ঘদিন ধরে অস্ট্রেলিয়ার সাফল্যের বড় কারিগর হলেন তারা (ছিটকে যাওয়া ক্রিকেটার)। স্বাভাবিভাবেই তাদের মিস করবে পুরো দল। তবে তাদের (অস্ট্রেলিয়া) দলে বেশ কয়েকজন টপ প্লেয়ার আছেন, যারা কিনা দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে থাকেন। তা ছাড়া আইসিসির টুর্নামেন্টগুলোতে বরাবরই অস্ট্রেলিয়া ভালো পারফর্ম করে।’

অস্ট্রেলিয়ার পেস শক্তি যেমন কম, বিপরীতে এই বিভাগে দুর্দান্ত ইংলিশরা। বিশেষ করে ১৮ মাসের বেশি সময় পর ইংল্যান্ডের হয়ে বড় টুর্নামেন্ট খেলতে নামা জোফরা আর্চারের দিকে চোখ থাকবে সবার। শন অ্যাবোট, স্পেনসের জনসন, নাথান এলিয়াস এবং বেন ডারশুইয়কে নিয়ে গড়া অস্ট্রেলিয়ার পেস অ্যাটাক। এত কিছুর পরও দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে বিশ্বাস ইংলিশ অধিনায়ক বাটলারের, ‘ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ সব সময়ই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও হবে।’

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

খাদি কাপড়ের জিআই স্বীকৃতিতে আনন্দে ভাসছেন কুমিল্লাবাসী

কুমিল্লার ঐতিহ্যের স্মারক খাদি কাপড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আনন্দিত জেলার মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন, অবশেষে পেয়েছেন সেই সুখবর। গতকাল বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে স্বীকৃতির এই সনদ দেওয়া হয়।

কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার রামঘাটলা থেকে শুরু করে রাজগঞ্জ পর্যন্ত অন্তত ৩০০ খাদি পোশাকের দোকান। কান্দিরপাড়ের খাদি বসুন্ধরা দোকানের স্বত্বাধিকারী জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, শৈল্পিক ছোঁয়ায় কুমিল্লার খাদি এখন দেশ-বিদেশে বেশ সমাদৃত। ঐতিহ্যের খাদিতে এখন লেগেছে আধুনিকতা ও নান্দনিকতার ছোঁয়া। শত বছরের বেশি পুরোনো খাদির আরও অনেক আগেই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া উচিত ছিল। অবশেষে স্বীকৃতি মিলেছে, এতেই আনন্দিত সবাই।

একই এলাকার খাদি জ্যোৎস্না স্টোরের মালিক তপন পাল বলেন, ‘কুমিল্লার প্রতিটি মানুষ খাদির এমন স্বীকৃতিতে আনন্দিত। শত বছর পার হলেও এখনো দেশ-বিদেশে খাদি কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা।’

কুমিল্লার ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর ডাকে সমগ্র ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় খাদিশিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ওই সময় বিদেশি পণ্য বর্জন করার জন্য আওয়াজ ওঠে। সর্বত্র এক আওয়াজ ‘মোটা কাপড়-মোটা ভাত’। সে সময় ভারতবর্ষের মানুষ দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে খাদি পোশাক ব্যবহার শুরু করেছিলেন। খাদের (গর্তে) চরকায় বসে এ কাপড় তৈরি করা হয় বলে এর নামকরণ হয় ‘খাদি’। শুরুতে মহাত্মা গান্ধী নিজেও কুমিল্লায় এসে খাদের চরকায় বসে খাদি কাপড় তৈরিতে উৎসাহ দেন।

এই গবেষক আরও বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ভারত পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাহার করে নিলে কুমিল্লার খাদিশিল্প সংকটে পড়ে। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হাল ধরেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা আখতার হামিদ খান।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, জেলা প্রশাসনের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় গত বছর কুমিল্লার রসমালাই জিআই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কুমিল্লার খাদি ও বিজয়পুরের মৃৎশিল্পের জিআই স্বীকৃতির জন্য তখন থেকেই কাজ শুরু হয়। কুমিল্লার ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত তিনটি পণ্যের মধ্যে দুটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। যে একটি বাকি আছে, সেটিও দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বীকৃতি পাবে বলে তিনি আশাবাদী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ