দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের ক্রিকেট লড়াইয়ের আরেকটি অধ্যায় রচিত হবে আগামীকাল। দুবাইয়ে হতে যাওয়া এ লড়াইয়ের আগে ভারতকেই ফেবারিট মানছেন বেশির ভাগ ক্রিকেটপ্রেমী। ব্যাটিং–বোলিং, দুই বিভাগেই দারুণ ছন্দে আছে ভারত। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু করা পাকিস্তানের ব্যাটিং হতাশ করছে দলটির সমর্থকদের। শাহিন আফ্রিদি, নাসিম শাহ, হারিস রউফদের নিয়ে গড়া বোলিং বিভাগও দারুণ কিছু করতে পারছে না বেশ কিছুদিন ধরেই।

সব মিলিয়ে ভারত–পাকিস্তান আরেক লড়াইয়ের আগে পাকিস্তানই বেশি চাপে আছে বলে মনে করছেন ক্রিকেট-পণ্ডিতদের অনেকেই। পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার বাসিত আলী তো বলেই দিয়েছেন, ভারতের বিপক্ষে তাঁর দেশ জিতে গেলে, সেটি হবে অঘটন।

নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে আগামীকালের ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বাসিত আলী এমন মন্তব্য করেছেন। তাঁর কথা, ‘আমি যখন মানুষের সঙ্গে কথা বলি, ৮০ শতাংশ মানুষই বলছে ভারত সহজ জয় পাবে। এমনকি আমারও এটাই মনে হয়। পাকিস্তান যদি ভারতকে হারিয়ে দেয়, সেটা হবে অঘটন।’

২৯ বছর পর আইসিসির কোনো টুর্নামেন্ট পাকিস্তানে ফিরেছে। কিন্তু সেই ফেরাটা স্মরণীয় করে রাখতে পারেননি বাবর আজম–মোহাম্মদ রিজওয়ানরা। করাচিতে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৬০ রানে হেরেছে পাকিস্তান। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি এখন দলটির জন্য বাঁচামরার লড়াই।

আরও পড়ুনবাংলাদেশ–ভারত ম্যাচের লোগোতে নেই পাকিস্তানের নাম, আইসিসি বলল ‘কারিগরি ত্রুটি’২২ ঘণ্টা আগে

প্রথম ম্যাচে হেরে চাপে পড়ে যাওয়া পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি আবার খেলবে দুবাইয়ে। যেখানে পাকিস্তানের চেয়ে ভারতের সমর্থকই গ্যালারিতে বেশি থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত কী করতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫

একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’

আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫

গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ