আন্দোলনের সময় ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ তরুণীর
Published: 22nd, February 2025 GMT
ছাত্র–জনতার আন্দোলনের সময় গত বছরের ৪ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন এক তরুণী। তিনি অভিযোগ করেছেন, প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনার বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ও নির্বাহী কমিটির সদস্য নুসরাত তাবাসসুমকে বারবার জানালেও তিনি কারও সহযোগিতা পাননি। তবে উমামা ও নুসরাত এই তরুণীর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (পুনাব) ও জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স নামের দুটি সংগঠন ‘আন্দোলনে নারীর শক্তি, নারীর কথা: শিক্ষা, নেতৃত্ব ও সম্ভাবনার দিগন্ত’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে অংশ নিয়ে ওই তরুণী ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা জানান। তাঁর এই বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
অভিযোগকারী তরুণী বলেন, ‘২০–২৫ জন নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজের পাশের কলেজ রোডের গলিতে আজমেরী ওসমানের বাড়ির নিচে একটা অফিসে নিয়ে যায়। আমাকে টেনেহিঁচড়ে মারতে মারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আশপাশে অনেক মানুষ থাকলেও কেউ সামনে আসেননি আটকানোর জন্য। আমাকে মারধর করে মুঠোফোন নিয়ে যায় তারা। সেই অফিসে নিয়ে যাওয়ার পর আমাকে অনেক বাজে বাজে কথা বলেছে, অনেক বাজে গালিগালাজ করেছে, আমার পরিবার নিয়েও অনেক কথাবার্তা বলেছে। বাজে কথাও শুনতে হয়েছে। পরে ওখান থেকে সবাইকে বের করে দিয়ে দুজন ছিল। দুজন মিলে পরে আমাকে ধর্ষণ করে। এটা এখন পর্যন্ত কোনো গণমাধ্যমে আসেনি। আমি নিজেই আসতে দিইনি। এখন পর্যন্ত তারা (অপরাধী) ঘুরছে, এখনো শাস্তি হয়নি।’
সারজিস আলম, উমামা ফাতেমা ও নুসরাত তাবাসসুম তাঁর ঘটনাটি জানেন বলে উল্লেখ করেন ওই তরুণী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘১০ নভেম্বর আমি কনসিভ (গর্ভধারণ) করি। উমামা ফাতেমাকে যখন আমি জানাই, তখন তিনি বলেন, “তোমার সাথে না অনেক খারাপ হইছে। আচ্ছা, দেখবোনে বিষয়টা।” শেষ। এখানেই ক্লোজ করে দিয়েছে টপিক। নুসরাত তাবাসসুম আপুকে জানাই। উনি আমাকে বলেন, “তুই আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে নক দিস।” টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় আমি তাঁর পাশের টেবিলে বসে হোয়াটসঅ্যাপে নক করি। তিনি হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজগুলো দেখলেও কোনো রিপ্লাই করেননি।’
এই তরুণীর যে অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন, সেখানে অংশ নিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন। অনুষ্ঠানের পর জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক কমিটির নারী সেল ও আইন সেল রয়েছে। ওই তরুণী যোগাযোগ করলে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।’
অভিযোগ অস্বীকার
অভিযোগকারী তরুণীর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে উমামা ফাতেমা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি তাঁর জায়গা থেকে ওই তরুণীকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছেন।
এ ছাড়া অভিযোগকারী তরুণীর বক্তব্যের পর আহনাফ তাহমিদ নামের এক ব্যক্তি বিষয়টির কড়া সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেন। ওই পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করে নুসরাত তাবাসসুম ফেসবুকে অভিযোগের জবাব দিয়েছেন। অভিযোগকারী তরুণীর নাম উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘একবার আমার সামনে এনে তাকে অভিযোগ করতে বলেন যে তাকে সাহায্য করতে চাওয়া হয়নি। তাকে সব রকম সাহায্য দিতে চাওয়া হয়েছিল, তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সুচিকিৎসা, নারায়ণগঞ্জের ঘটনাস্থলে তদন্ত, মামলা—সবকিছুর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সে চেয়েছিল অন্য কিছু। কিন্তু তাঁর অনুমতি ব্যতিরেকে আমি সেটা প্রকাশ করতে পারছি না।’
এদিকে বক্তব্যের বিষয়ে জানতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে রাত নয়টার দিকে ওই তরুণীর মুঠোফোনে কল করা হলে এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চাননি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কম ট র
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!
সিদ্ধিরগঞ্জের হীরার্ঝিল আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খাল দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। এর ফলে ডিএনডি খালটি ফের সংকুচিত হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
এদিকে এই এলাকাটি শিমরাইল পাম্প স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় দোকানগুলোর কারণে ঠিকমতোন পানি সরবরাহ হতে পারছে না। তবে প্রশাসনের ভাষ্য, খুব শিগগিরই এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু খালপাড় দখল করে হরেক রকমের ছোট-বড় প্রায় ২৫টি দোকান বসানো হয়েছে। হাবিবুল্লাহ হবুলের মালিকানাধীন হাবিবুল্লাহ টাওয়ার থেকে শুরু করে মোক্তার হোসেন সরকারের মালিকানাধীন বিএম ভবন, সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন মমতাজ ভিলা, নূর মোহাম্মদ টাওয়ার, নুরুল হুদা’র বাড়ির সামনে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
এর বিনিময়ে প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলছেন স্ব স্ব বাড়ির মালিকরা। চাঁদা তোলার বিষয়টি কয়েকজন বাড়িওয়ালা অকপটে স্বীকারও করেছেন।
এদিকে, দোকানগুলোর কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি হীরাঝিল এলাকাবাসীকেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকায় এই এলাকায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। চলাচলের সুবিধার্তে এলাকাবাসী ডিএনডি খালের পাড় দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যেতেন। কিন্তু কয়েকজন বাড়িওয়ালা এহেন কর্মকান্ডের কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
এসব দোকানের কারণে খালের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং চাঁদাবাজি প্রশাসন বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে ফের বন্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কাবাব বাড়ি’ ভবনের মালিক মো. রফিক বলেন, আমার বাড়ির সামনে ডিএনডি খাল দখল করে আমি কোনো দোকান বসাই নি। আমি নিজেও চাই এখানে কোনো দোকান না বসুক। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি টিএইচ তোফা নামের এক ব্যক্তি এই দোকানগুলো বসিয়েছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেছে দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়ার। আর এখানে দোকান বসিয়ে টাকা তোলার প্রশ্নই উঠে না।
একই অভিযোগ স্বীকার করে মমতাজ ভিলার মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অন্যসবাই দোকান বসিয়েছে। আমি তা দেখাদেখি ২টি দোকান বসিয়েছি। এটা আমার অপরাধ হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝি। আমি মূলত সবার দেখাদেখি দোকান বসিয়েছি।
নুরুল হুদা নামের আরেক বাড়িওয়ালা বলেন, আমি দোকান বসিয়েছি। কিন্তু ওইখান থেকে কোনো অর্থ আদায় করি না। চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে। আর এখানে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান ছিল।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনূর আলম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি তাহলে অবশ্যই ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে। ডিএনডি খালপাড় থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে আমরা একাধিকবার তাদের নোটিশ পাঠাবো।
যদি তারা কথা না শোনেন তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল দখলের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করা শুরু করেছি। ডিএনডি খালসহ যেকোনো খাল এভাবে দখল হয়ে থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ডিএনডি প্রকল্প হাতে নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুরুতে প্রকল্পের বাজেট ৫৫৮ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাস্তবায়নে সবমোট ১৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
২০২৫ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকালে তখন খালটি দখল না হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই হীরাঝিল এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা ডিএনডি খাল দখল করে দোকান বসানো শুরু করে।