সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

একটি বিশেষ চক্র ইচ্ছাকৃত ধর্মীয় উসকানি দিয়ে ঐক্য ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে দাবি করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ভোর রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স সেলের সম্পাদক রফিকুল ইসলাম এক বিবৃতিতে এ দাবি করেন।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশ দীর্ঘকাল ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ সব ধর্মের মানুষের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহাবস্থানের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। এই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ আমাদের ঐতিহ্যের অংশ, যা জাতিগত ঐক্য ও শান্তির মূল ভিত্তি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একটি বিশেষ চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় উসকানি দিয়ে আমাদের ঐক্য ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

বিশেষ করে, ইসলাম ধর্ম, মহান আল্লাহ এবং রাসূল (সা.

)-এর প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য ও প্রচারণা আমাদের সামাজিক ঐক্যে আঘাত হানছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এমন কিছু বক্তব্য দেখা যাচ্ছে, যা ধর্মপ্রাণ মানুষের অনুভূতিকে আঘাত করছে এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরির শঙ্কা সৃষ্টি করছে। দায়িত্বশীল অবস্থানে থেকে কেউ যদি ধর্মীয় অবমাননাকর বক্তব্য প্রদান করে, তবে তা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়। এ ধরনের বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা বিশ্বাস করি, যেকোনো ধর্মের প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য বা বিদ্বেষমূলক প্রচারণা শুধু ধর্মপ্রাণ মানুষের অনুভূতিতেই আঘাত হানে না, বরং এটি সামগ্রিক সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকিস্বরূপ। আমরা সমাজের সর্বস্তরের মানুষ— শিক্ষার্থী, বুদ্ধিজীবী, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং সচেতন নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন বিভেদ সৃষ্টিকারীদের অপচেষ্টা প্রতিহত করেন এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কখনোই কারও ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করার অধিকার দেয় না। প্রকৃত মুক্তচিন্তা ও গণতান্ত্রিক চর্চা তখনই অর্থবহ হয়, যখন তা সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে সুসংহত করে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মের মানুষও শহীদ হয়েছেন। সেই আত্মত্যাগের চেতনায় উজ্জীবিত নতুন বাংলাদেশে সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা চাই, বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি অব্যাহত থাকুক, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আরও দৃঢ় হোক এবং যেকোনো বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা ব্যর্থ হোক। আসুন, আমরা সকলে মিলে একটি শান্তিপূর্ণ, সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সম্প্রীতিময় সমাজ গড়ে তুলি, যেখানে প্রত্যেক ধর্ম ও বিশ্বাসের প্রতি সম্মান থাকবে, আর আমাদের জাতীয় ঐক্য আরও সুদৃঢ় হবে।

বিএইচ

উৎস: SunBD 24

কীওয়ার্ড: র অপচ ষ ট আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ