বানাতে চেয়েছিলেন গিটার, হলো রবীন্দ্রনাথের মুখ, সেই শুরু তজুর
Published: 24th, February 2025 GMT
ছেলের বয়স তখন দুই থেকে তিন মাস। ইচ্ছা হলো ছেলের জন্য কাঠের টুকরা দিয়ে একটা গিটার বানিয়ে রাখার। পছন্দের কাঠের টুকরাও সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু তখন আর গিটার বানানো হলো না। একজনের কথামতো কাজ করে সেই কাঠের টুকরায় ফুটিয়ে তুললেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মুখ। সেই যে কাঠ দিয়ে প্রতিকৃতি তৈরির ঘোর তৈরি হয়েছিল সবুজ তজুর (৫৫), আড়াই দশক ধরে সেই ঘোরেই আছেন তিনি।
প্রায় প্রতিদিনই কাঠের সঙ্গে সবুজ তজুর দেখা হয়। হাতুড়ি-বাটালি দিয়ে কাঠের শরীরে চলে কারও মুখ, কারও সম্পূর্ণ প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলার কাজ। কোনো না কোনো বিখ্যাতজনের চেহারা ফুটে ওঠে এসব কাঠে। একইভাবে ফুটিয়ে তোলেন কোনো বন্য প্রাণীকে। গিটারের সূত্র ধরে সেই যে গাছের ডাল, গাছের গোড়া, গাছের টুকরোর সঙ্গে তাঁর এক ভাবজগৎ তৈরি হয়েছিল, সে জগতের সঙ্গে আর ছেদ পড়েনি। এই কাঠের কাজেই তাঁর একমাত্র সুখ। এই শিল্পী সবুজ তজুর বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার হরিণছড়ায়।
সবুজ তজু বলেন, এখন থেকে ২৫-২৬ বছর আগের কথা। ছেলের জন্য যখন গিটার বানানোর কাজ শুরু করলে এক চাচাতো ভাই বললেন যে এই কাঠের টুকরা দিয়ে গিটার ভালো হবে না। গিটার বানানোর দরকার নেই। ওই টুকরাকে একটু ঘুরিয়ে দিলে মাথার মতো হয়ে যাবে, নিচের দিকটা হয়ে যাবে দাঁড়ি। তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেহারা পাবে। তাঁর কথামতো কাজটা করতে গিয়ে তিনি অবাকই হয়েছেন। তাঁর কাজটি দেখতে অনেকটাই রবীন্দ্রনাথের মুখের মতো হয়ে গেছে।
সবুজ তজু বলেন, ‘তখন কী যে হলো! কী রকম একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে গেলাম। কাঠ দিয়ে কাজ করতে ভালো লাগতে শুরু করে। সেই যে কাঠ দিয়ে কিছু করার আগ্রহ তৈরি হলো, এখনো সেই রকমই কাজ করে চলছি।’ কাঠের শরীরে হাতুড়ি-বাটালিতে টুকটুক করে একের পর এক প্রতিকৃতি আঁকতে লাগলেন। এর মধ্যে কত মানুষ, কত প্রাণীর অবয়ব ফুটিয়ে চলেছেন; তার কোনো হিসাব নেই। এই হাতুড়ি–ছেনি-বাটালির তুলিতে কাঠে ফুটিয়ে তুলেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মা মেরি, রাধা-কৃষ্ণ, যিশু, বনের হরিণ, বাঘ—এমন কত–কী! যখন যা মাথায় আসে, তা–ই ফুটিয়ে তোলেন কাঠে। কখনো কারও চাহিদামতো তৈরি করে দেন। কারও কাছ থেকে তিনি কখনো কাঠের কাজ করাটা শেখেননি, প্রশিক্ষণ নেননি। তবে কারিতাস নামে একটা প্রতিষ্ঠানের নকশাবিদ সুকুমার পাল তাঁকে কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন, কাজের ক্ষেত্রে তাঁর ওই পরামর্শটুকু কাজে লাগে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করা তাজুল ইসলাম তাঁকে বিভিন্ন সময় নানাভাবে সহযোগিতা করেন।
কারও কাছ থেকে সবুজ তজু কখনো কাঠের কাজ করাটা শেখেননি, প্রশিক্ষণও নেননি। নিজের মতো করে নিষ্ঠার সঙ্গে শিল্পকর্ম করে যাচ্ছেন তিনি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ঠ র ট কর ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেটে অবৈধ পাথরের ব্যবসা ঠেকাতে চলছে ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ
সিলেটে অবৈধ পাথরের ব্যবসা ঠেকাতে এবার ক্রাশার মেশিনের (পাথর ভাঙার কল) বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজ শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এ ছাড়া জেলায় কতগুলো ক্রাশার মেশিন রয়েছে, এর পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজও চলছে। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ তালিকা জেলা প্রশাসনে জমা দিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, জেলায় অন্তত এক হাজার ক্রাশার মেশিন আছে। তবে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে ইউএনওদের সংশ্লিষ্ট উপজেলার ক্রাশার মেশিন কতগুলো আছে, এর তালিকা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ তালিকা ধরে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্নের কাজ চলবে। তবে এরই মধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার সকালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) জাফলং পরিদর্শনে যান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। গত ৫ আগস্টের পর জাফলং থেকে বিপুল পরিমাণ পাথর লুটপাট হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দুই উপদেষ্টা ওই এলাকায় গিয়েছিলেন।
জাফলং পরিদর্শন শেষে দুই উপদেষ্টা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে জাফলংসহ সিলেটের কোনো পাথর কোয়ারি ভবিষ্যতে ইজারা দেওয়া হবে না বলে জানান। অন্যদিকে অবৈধ পাথরের ব্যবসা ঠেকাতে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান দ্রুততার সঙ্গে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে থাকা ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দুই উপদেষ্টার নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই প্রশাসন জেলায় কতগুলো বৈধ ও অবৈধ ক্রাশার মেশিন রয়েছে, এর তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে। আগামী বৃহস্পতিবার এ তালিকা তৈরির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তালিকা ধরে ধরে সব কটি ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। অবশ্য গতকাল সোমবার থেকে মেশিনের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজ শুরু হয়েছে।
গতকাল সিলেট সদর উপজেলা ও জৈন্তাপুর উপজেলায় পাথর ভাঙার ক্রাশার মিলে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, সিলেট সদর উপজেলার সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের ধোপাগুল এলাকায় দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত টাস্ক ফোর্সের অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযান পরিচালনা করেন জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মেরিনা দেবনাথ।
অভিযান-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যৌথ বাহিনীর উপস্থিতিতে ৩০টি ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনসিলেটে অবৈধ বালু ও পাথর পরিবহনে ব্যবহৃত ৪ নৌকা আটক করলেন স্থানীয়রা১৫ জুন ২০২৫এদিকে জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। এতে নেতৃত্ব দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আক্তার। এ সময় পাঁচটি অবৈধ স্থাপনার বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি বালু ধৌতকরণ ও পাথর ভাঙার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিও জব্দ করা হয়।
অভিযান-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার লক্ষ্মীপুর প্রথম খ এলাকায় একটি ভাইব্রেটর মেশিন (বালু ওয়াশিং), আসামপাড়া এলাকায় আম্মাজান স্টোন ক্রাশার, মুনতাহা স্টোন ক্রাশার, ৪ নম্বর বাংলাবাজার এলাকায় জালালী স্টোন ক্রাশারসহ ৫টি প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ সময় ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় এক ট্রাকচালককে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অভিযান শেষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আক্তার গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, পরিবেশবিধ্বংসী কাজে ব্যবহৃত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চলমান থাকবে। কোনোভাবেই আইন অমান্যকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না।
আরও পড়ুনসিলেটে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, পাথর কোয়ারি চালুর দাবি১৪ জুন ২০২৫এদিকে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোয়ারি থেকে পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধে নির্দেশনা দেয় সরকার। এর পর থেকে রাতের আঁধারে স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগ নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় অবৈধভাবে পাথর ও বালু উত্তোলন চলত। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কোয়ারির নিয়ন্ত্রণ নেন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা। তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায় হাজারো পাথরশ্রমিক প্রকাশ্যে পাথর উত্তোলন শুরু করেন। এসব পাথর বারকি ও স্টিল নৌকায় করে ক্রাশার মেশিনের মালিকদের কাছে বিক্রি করা হয়। পরে সেসব পাথর মেশিনে ভেঙে ছোট করে ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করা হয়। ওই ব্যবসায়ীরা ট্রাক ও পিকআপে পাথর দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান।