পৃথিবীতে নয়, চাঁদে আঘাত হানতে পারে ‘২০২৪ ওয়াইআর৪’ গ্রহাণু
Published: 24th, February 2025 GMT
গত মাসের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছিল, পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে ‘২০২৪ ওয়াইআর৪’ নামের এক গ্রহাণু। প্রায় ২০০ ফুট চওড়া এই গ্রহাণু ২০৩২ সালে পৃথিবীতে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। এই গ্রহাণু কোনো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আঘাত হানলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। নাসার এ ঘোষণার পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষদের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে গ্রহাণুটি। তবে সম্প্রতি নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর সঙ্গে গ্রহাণুটির সংঘর্ষের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
নাসার গ্রহ প্রতিরক্ষা দলের বিজ্ঞানীরা গ্রহাণুটির গতিপথ পর্যালোচনা করে জানিয়েছেন, গ্রহাণুটির পৃথিবীতে আঘাত হানার ঝুঁকি আগে প্রায় তিন শতাংশ থাকলেও এখন তা কমে হয়েছে শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ। পৃথিবীতে গ্রহাণুটির আঘাত হানার সম্ভাবনা কমলেও আমাদের প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদের সঙ্গে আঘাত হানার সম্ভাবনা কিছুটা বেড়েছে। আগে শূন্য মাত্রায় থাকলেও এখন চাঁদে গ্রহাণুটির আঘাত হানার সম্ভাবনা প্রায় ১ শতাংশ।
আরও পড়ুন২০২৪ পিটি৫ গ্রহাণু কি চাঁদের অংশ ছিল৩১ জানুয়ারি ২০২৫গ্রহাণুটি আকারে বেশ বড় হওয়ায় পৃথিবীতে আঘাত হানলে বেশ ক্ষতি হতে পারে। আর তাই গ্রহাণুটির গতিপথ নিয়মিত পর্যালোচনা করছেন বিজ্ঞানীরা। ২০২৪ সালে নাসার সেন্টার ফর নেওয়ার আর্থ অবজেক্ট স্টাডিজের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, পৃথিবীর সঙ্গে গ্রহাণুটির সংঘর্ষের সম্ভাবনা ২ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে গত মাসের শেষ নাগাদ তাঁরা জানান, পৃথিবীর দিকে ধেয়ে এলেও গ্রহাণুটির আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশ কম, মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ।
আরও পড়ুনগ্রহাণুর আঘাতে বদলে গেছে যে গ্রহের চাঁদের গতিপথ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪নাসার অনুমান, ২০৩২ সালের ডিসেম্বর মাসে পৃথিবীতে আঘাত না হানলেও পৃথিবী থেকে ৬৬ হাজার মাইলের মধ্যে চলে আসবে গ্রহাণুটি। আর তাই গ্রহাণুটিকে ঝুঁকির তালিকায় রাখা হয়েছে। ফলে বিজ্ঞানীরা এখন গ্রহাণুটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন। ২০২৮ সালের আগে আর দেখা যাবে না গ্রহাণুটি।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।
যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে
২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।
শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’
গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’