পশ্চিমবঙ্গে ভোট প্রভাবিত করতে বিজেপি-তৃণমূল বিদেশি অনুদান ব্যবহার করেছে: সিপিআইএম নেতার অভিযোগ
Published: 24th, February 2025 GMT
ভারতের মার্ক্সপন্থী কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআইএম) পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ভোট প্রভাবিত করার জন্য বিজেপি ও তৃণমূল—দুই দলই বিদেশি অনুদান ব্যবহার করেছে।
২৭তম রাজ্য সম্মেলনের মধ্যে গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগ প্রসঙ্গে সেলিম এ কথা বলেন।
সম্প্রতি ট্রাম্প বলেছেন, ভারতের নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার দেওয়া হয়েছে। তাঁর এ মন্তব্যের পর ভারতের রাজনীতিতে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিজেপি বিষয়টিকে ‘বাইরের দেশের নাক গলানো’ বলে চিহ্নিত করেছে। কংগ্রেস অভিযোগটিকে ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে।
এ অবস্থায় রাজ্য সম্মেলনের মধ্যে সিপিআইএমের পশ্চিমবঙ্গের সম্পাদক বললেন, অর্থ নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূল—দুই দলই ভোট প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।
মহম্মদ সেলিম বলেন, ২০১১ সালের পর থেকে দেখা গেছে, নির্বাচনে ভোট লুটের নামে টাকা ব্যবহৃত হয়েছে। প্রথমে তৃণমূল ‘যুবা’র নামে। বিদেশের টাকা চিট ফান্ডের নামে রাজ্যে তৃণমূলের ঘরে ঢুকেছে। সেই টাকা গুন্ডা কিনতে, ভোট লুটের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। মানুষের ভোট প্রভাবিত করার জন্য বিজেপি ও তৃণমূল—উভয়েই বিদেশি টাকা ব্যবহার করেছে। তাই তারা একে অন্যকে দোষারোপ করে না।
শনিবার সিপিআইএমের রাজ্য সম্মেলন শুরু হয়েছে। প্রতি তিন বছর পরপর এ সম্মেলন হয়, যা এখন অন্য রাজ্যেও চলছে। এ সম্মেলনের পর আগামী এপ্রিলে জাতীয় স্তরে দলের পার্টি কংগ্রেস হবে।
দেশের রাজনীতিতে অন্য দেশের অর্থ ব্যবহার করার প্রসঙ্গে সেলিম গতকাল রোববার আরও বলেন, ‘সিপিআইএম বরাবরই এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেছে। বিদেশি অর্থ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার (এনজিও) মাধ্যমে কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আই কে গুজরাল সরকারের সময় একটি কমিটি হয়েছিল। সেই কমিটির প্রধান হিসেবে কাজ করেছিলাম। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর আর কোনো কমিটি করেনি। সেই কমিটি তুলে দিয়েছে। সাহস থাকলে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক, কীভাবে অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করতে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করতে এই টাকা ব্যবহার করা হচ্ছে।’
সেলিম অভিযোগ করেন, বিজেপি একাই এ কাজ করছে না, তৃণমূলও অনুদান নিচ্ছে। ট্রাম্প বলছে, ২ কোটি ১০ লাখ ডলার মোদিকে দেওয়া হয়েছে ভোটের হার বাড়ানোর জন্য। ২০১১ সালে কালীঘাটের ওপর একটা হোর্ডিং দেখা গিয়েছিল, তারপর তৈরি হলো ‘তৃণমূল যুবা’। তখন বলা হয়েছিল, বামপন্থীদের সময় রাজ্যে গণতন্ত্র কমে গিয়েছিল, তা আবার গড়ে তুলতে হবে। তখন টাকা ঢালা হয়েছিল।
২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যায় সিপিআইএমের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট। এর আগে তারা ৩৪ বছর ক্ষমতায় ছিল। সেলিম অভিযোগ করেন, বিদেশি অর্থ এনে বামফ্রন্টকে হারানোর চেষ্টা করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস।
তবে তৃণমূল কংগ্রেস বরাবরই এ ধরনের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করে আসছে।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও এই টাকা রাজ্যে ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে সেলিম বলেন, টাকা ছড়িয়ে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরি করা হয়েছিল। গণনাকেন্দ্র কেনা হয়েছিল। বেলডাঙ্গায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করা হয়েছিল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর র র জন হয় ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যয় বাড়ল ১৪৪ কোটি টাকা
‘খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ’ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয় ২০১১ সালে। ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এর পর আটবার প্রকল্পের সময় বেড়েছে, দুই দফা সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। এ অবস্থায় প্রকল্পটি শেষ হওয়া নিয়ে হতাশা দেখা দেয়।
আশার কথা, নতুন জেলা কারাগারের কাজ শেষ হয়েছে। গত ২৫ মে গণপূর্ত বিভাগের কাছ থেকে নতুন কারাগারটি বুঝে নেওয়ার কথা ছিল কারা কর্তৃপক্ষের। কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় হস্তান্তর হয়নি। চলতি জুন মাসে যে কোনো সময় নতুন কারাগার হস্তান্তরের কথা রয়েছে। জনবল পদায়ন হলেই নতুন কারাগারে বন্দি স্থানান্তর শুরু হবে।
১৯১২ সালে নগরীর ভৈরব নদীতীরে নির্মাণ করা হয় খুলনার প্রথম কারাগার। সেখানে বন্দি ধারণক্ষমতা ৬৭৮ জনের। রয়েছেন ১ হাজার ৪শর বেশি বন্দি। ১১৩ বছরের পুরোনো জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হয় তাদের। এসব বিবেচনায় নিয়েই নতুন কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
খুলনার সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কের জয় বাংলা মোড়ের অদূরে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর নতুন কারাগার নির্মাণ হচ্ছে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নতুন কারাগারে ৪ হাজার বন্দি থাকতে পারবেন। প্রকল্পের আওতায় আপাতত ২ হাজার বন্দি রাখার অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। পরে প্রয়োজন পড়লে পৃথক প্রকল্প নিয়ে অন্য অবকাঠামো নির্মাণ হবে।
নতুন কারাগার হবে সংশোধনাগার
কারাগার ঘুরে দেখা গেছে, ভেতরে সাজানো-গোছানো অভিজাত আবাসিক এলাকার মতো পরিবেশ। রং দেওয়া নতুন ভবন, পথের ধারে
ফুল, দামি পার্কিং টাইলস দেওয়া ফুটপাত ধরে হাঁটলে এটি কারাগারই মনে হয় না। নতুন এ কারাগার নির্মাণ হচ্ছে সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের পৃথক স্থানে রাখা হবে। কিশোর ও কিশোরী বন্দিদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যারাক। নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড আছে। একইভাবে বন্দিদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকবে।
আরও থাকবে কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, বিশাল লাইব্রেরি, ডাইনিং রুম, আধুনিক স্যালুন ও লন্ড্রি। কারাগারে শিশুসন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্য থাকবে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। এ ওয়ার্ডটিতে সাধারণ নারী বন্দি থাকতে পারবেন না। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা থাকবে। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দিদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্কশেড, বিনোদন কেন্দ্র ও নামাজের ঘর রয়েছে। মোট ৫২টি স্থাপনা রয়েছে এ কারাগারে।
গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম জানান, বন্দিদের প্রতিটি ব্যারাকের চারপাশে পৃথক সীমানাপ্রাচীর রয়েছে। এক শ্রেণির বন্দিদের অন্য শ্রেণির বন্দিদের সঙ্গে মেশার
সুযোগ নেই। কারাগারের ভেতরে শুধু সীমানাপ্রাচীরই রয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের। ভেতরে ড্রেন, ফুটপাত, নিজস্ব পয়োবর্জ্য শোধন কেন্দ্র, ওয়াকওয়ে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা, দুটি পুকুর ও সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সবকিছুর কাজ শেষ।
সময় বেড়েছে আটবার, ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ
২০১১ সালের অনুমোদিত খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১৪৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ৬ জুন প্রকল্পটি প্রথম দফা সংশোধন করা হয়। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি টাকা। নতুন লক্ষ্য নেওয়া হয় ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার। এর পর পাঁচ দফায় পাঁচ বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কাজ আর শেষ হয়নি। ২০২৩ সালের মে মাসে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৮ কোটি টাকায়।
হস্তান্তর ও চালু কবে
খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নতুন কারাগারের সব কাজ শেষ। কয়েকটি স্থাপনায় রঙের শেষ প্রলেপসহ টুকটাক কাজ বাকি রয়েছে। আগে করলে এসব নষ্ট হয়ে যাবে। এ কারণে হস্তান্তর তারিখ নির্ধারণ হলেই এসব কাজ করা হবে।
খুলনার জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, কিছু কাজ বাকি ছিল, সেগুলো শেষ করতে বলা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে চলতি জুন মাসেই আমরা কারাগার বুঝে নেব। তিনি আরও বলেন, কারাগার পরিচালনার জন্য ৬০০ জনবলের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পুরোনো কারাগারে প্রায় ২০০ জনবল রয়েছে। স্থাপনা বুঝে নেওয়ার পর কারাগার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।