‘কেমন সম্পর্ক চায়, সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাদেশকে’- ভারতের এই মন্তব্যের পাল্টা মন্তব্য ছুড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাফ বলে দিয়েছেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতকেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শংকর ২৩ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সঙ্গে চলমান সম্পর্কের গতিপথ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কেমন সম্পর্ক হবে, সেই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে নিতে হবে। 

আরো পড়ুন:

যশ কেন ‘রাবণ’ হলেন?

কোহলির সেঞ্চুরির রঙে রঙিন ভারতের ক্যানভাস

মূলত পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের সূত্রপাত জয়শংকরের মন্তব্য ধরেই। গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশে ক্ষমতার পালা বদলের পর ভারতের সঙ্গে দোদুল্যমান সম্পর্ক বিরাজ করছে। দুই দেশের সরকারি পর্যায়ের দায়িত্বশীল কতিপয় মানুষের বক্তব্য-বিবৃতি এবং ভারতীয় মিডিয়ার একচেটিয়া দোষারোপের খবর পরিস্থিতির উত্তাপ বাড়িয়েছে। 

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকরের বক্তব্যেও সেই উত্তাপের আঁচ রয়েছে। বাংলাদেশে ভারতবিরোধী বক্তব্যের অভিযোগের পাল্টায় তৌহিদ হোসেন ভারত থেকে বাংলাদেশিবিরোধী বক্তব্যের দিকে দৃষ্টিপাত করেছেন। এখানে আটকে না থেকে নয়াদিল্লিকে সুস্পর্কের দিকে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জয়শঙ্করের মন্তব্য নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, “আশপাশ থেকে দু-চারজন কী বললো, না বললো; সেটাতে মনোযোগ না দিয়ে আমরা বরং আমাদের সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করি।”

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস.

জয়শংকর (বাঁয়ে)। 

নয়াদিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন জয়শঙ্কর। সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন, যার সারাংশে সম্পর্কের দায় ঢাকার কাঁধে তুলে দেওয়া লক্ষ্ণণ স্পষ্ট।

জয়শংকর বলেন, “বাংলাদেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা নয়াদিল্লির সঙ্গে কোন ধরনের সম্পর্ক চায়। এই দুই প্রতিবেশী দেশ খুবই বিশেষ ইতিহাস ধারণ করে, যার শিকড় ১৯৭১ সাল।”

জয়শংকরের এই বক্তব্যের বিষয়ে তৌহিদ হোসেন বলেছেন, “তিনি (জয়শঙ্কর) বলেছেন, কেমন সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ, সেটা বাংলাদেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অবশ্যই বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নেবে, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়। একইভাবে ভারতকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়। এটা দুই পক্ষেরই বিষয়, এটা বলাতে দোষের কিছু নেই।”

অবশ্য ভারতের সঙ্গে কার্যকর সুসম্পর্ক ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্কের তাগিদ দিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের স্পষ্ট সিদ্ধান্ত আছে এ ব্যাপারে। আমরা ভারতের সঙ্গে গুড ওয়ার্কিং রিলেশনস, সেটা চাই এবং একটা পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ; যার যার আগ্রহের বিষয় আছে। এ ব্যাপারে আমাদের কোনো অস্পষ্টতা নেই।”

বাংলাদেশ থেকে ভারতবিরোধী আপত্তিকর কথা বলা হচ্ছে বলে জয়শংকরের যে অভিযোগ, সেটি খণ্ডন করতে গিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেছেন, “তবে তিনি (জয়শঙ্কর) বলেছেন, বাংলাদেশের বিভিন্নজন বিভিন্ন আপত্তিকর কথা বলছে, সরকারের ভেতর থেকে। আমি এটা নিয়ে ন্যায়-অন্যায় উচিত-অনুচিত বিচার করতে চাই না। কিন্তু আমার কথা হলো, এ রকম কথা আমাদের এখান থেকে বলছে, ওনাদের ওখান থেকেও বলছে।”

পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠানোর প্রস্তাবের প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা বলেন, “ওনাদের মুখ্যমন্ত্রী তো পারলে এখানে জাতিসংঘের ফোর্স পাঠায় দেন। ওনাদের একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অহরহ বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এগুলো চলতে থাকবে ধরে নিয়ে আমরা চেষ্টা করছি, সম্পর্ক ভালো করা যায় কি না; কাজেই আমোদের অবস্থান সেটাই।”

ভারতের পতাকার অবমাননা ও হিন্দুদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলে ২ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জাতিসংঘের মাধ্যমে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী পাঠানোর প্রস্তাব তুলেছিলেন। তবে তার অভিযোগ ও প্রস্তাব নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় বাংলাদেশে।

৫ ডিসেম্বর এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছিলেন, “উনি মনে হয় ভুল করে বাংলাদেশের নাম বলে ফেলেছেন। আমার তো মনে হয় উনার দেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা প্রয়োজন, কেননা আপনারা দেখেছেন সেখানে সংখ্যালঘুদের (মুসলমানদের) কীভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে।” 

এ ধরনের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য-মন্তব্য চলার মধ্যেই সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রয়াস লক্ষ্যণীয়। সম্প্রতি তৌহিদ হোসেন ও জয়শংকর তৃতীয় দেশে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করেছেন। অবশ্য সেই বৈঠকের কয়েকদিন পর সম্পর্কের বিষয়ে বাংলাদেশের ওপর দায় চাপিয়ে কথা বলছেন জয়শংকর, যা নিয়ে আবার পাল্টাপাল্টি বক্তব্য আসছে। 

ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য-বিবৃতিকে বাধা হিসেবে দেখছেন তৌহিদ হোসেন।

তিনি বলেছেন, “সম্পর্ক ভালো করতে গেলে বরং আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী যে ওখানে ভারতীয় আতিথেয়তায় থেকে বিভিন্ন কথাবার্তা বলছেন, এগুলো আসলে সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর। ওনার বক্তব্য আগুনে ঘি ঢালছে, এটা তো স্বীকৃত ব্যাপার, এটা সবাই জানে।”

শেখ হাসিনা যেন ভারতে বসে বক্তব্য-বিবৃতি না দেন, সে বিষয়ে নয়াদিল্লির কার্যকর পদক্ষেপ চেয়ে আগেও কথা বলেছে ঢাকা। তবে মাঝে মধ্যে শেখ হাসিনাকে লাইভে এসে, গ্রুপ কলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের অস্বস্তির কথা ভারতকে কয়েকবার জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।  

এসবের বাইরেও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের নানা দিক রয়েছে, বিশেষ করে ভিসা ইস্যু অন্যতম। বাংলাদেশিদের ভারতের ভিসা না পাওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, “ভিসা দেওয়া, না দেওয়া তাদের অধিকার। তারা কাউকে ভিসা না দিলে আমাদের কিছু বলার নেই।”

তবে তৌহিদ হোসেন ভারতের ভিসা না দেওয়ায় বাংলাদেশের বিকল্প উপায় বের করার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “যখন (ভারতের) ভিসা দেওয়া হচ্ছে না, তখন আমরা তো বিকল্প খুঁজে নেবই। কোনো সমস্যা থাকলে আমাদের বিকল্প দেখতেই হবে।”

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে জয়শংকরের অভিযোগকে ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। 
 
তিনি বলেছেন, “সংখ্যালঘু সম্পর্কে উনি (জয়শংকর) আবার বলেছেন। এই অভিযোগ প্রধানত ভারতীয় মিডিয়া যে তথ্যপ্রবাহ সৃষ্টি করেছে, তার ভিত্তিতে এইগুলো বিভিন্নজন বিভিন্নখানে বলে বেড়াচ্ছে। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ভারতের বিষয় হতে পারে না। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বাংলাদেশের বিষয়। ভারতের সংখ্যালঘুর বিষয়টি আবার তাদের বিষয়। কাজেই এ ব্যাপারটি অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ।”

২৯  মিলিয়ন ডলার প্রসঙ্গে
বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিমণ্ডল শক্তিশালী করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ২৯ মিলিয়ন ডলার নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। কয়েকদিন ধরে বিষয়টি মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি অন্তত দুইবার এই প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। 
ট্রাম্পের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির মাধ্যমে বাংলাদেশ রাজনৈতিক পরিবেশ-প্রতিবেশ শক্তিশালী করার জন্য ২৯ মিলিয়ন ডলার এসেছে; যা পেয়েছে এমন একটি সংস্থা, যেখানে মাত্র দুজন কর্মী কাজ করেন। তবে সেই সংস্থার নাম সরকার বা কোনো পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে অস্পষ্ট কাটছেই না।
  
সঙ্গত কারণেই সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রশ্নটির মুখে পড়েন তৌহিদ হোসেন। তার কাছে সাংবাদিকরা বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ২৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই সরকারের কাছে। এ বিষয়ে এনজিও ব্যুরোও কিছু জানে না।”

ঢাকা/হাসান/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পরর ষ ট র উপদ ষ ট ত হ দ হ স ন বল র পরর ষ ট র নয় দ ল ল প রসঙ গ বল ছ ন আম দ র মন ত র র মন ত ব ষয়ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু

বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।

ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।

জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।

সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।

বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ