সাকিব আল হাসান দলের সঙ্গে নেই। ফেরার সম্ভাবনাও নেই। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম দিব্যি খেলে যাচ্ছেন। কিন্তু অভিজ্ঞতা বোঝা বইছে বাংলাদেশ। তাদের থেকে যে পারফরম্যান্স পাওয়ার কথা ছিল তা পাচ্ছে কই। বরং জায়গা ধরে রাখায় তরুণদের সুযোগ নষ্ট হচ্ছে। আরেকটি আইসিসি ইভেন্টে বাংলাদেশের হতশ্রী পারফরম্যান্স।

মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ অংশগ্রহণের পরও মেলেনি প্রত্যাশিত সাফল্য। তাদের কি এখানেই থেমে যাওয়া উচিত কিনা সেই প্রশ্নও উঠল নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ হারের পর।

ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ-এর শো’তে হাজির হয়েছিলেন ভারতের দুই সাবেক ক্রিকেটার দিনেশ কার্তিক ও পার্থিব পাটেল। এক মেরুতে দুজনের অবস্থান, সাকিব-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহকে ছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এগিয়ে যেতে হবে। তাদের পেছনে ফেলে তরুণদের যথেষ্ট সময় দিয়ে নতুন করে দল সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

স্বপ্ন আকাশছোঁয়া অথচ পারফরম‌্যান্স গড়পড়তা

অস্ট্রেলিয়া-দ.

আফ্রিকার ম্যাচে বৃষ্টির বাগড়া

কার্তিক বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয়, তাদের সামনে তাকানো উচিত, তরুণদের সুযোগ দেওয়া উচিত এবং আমার ভালো লাগবে, ক্রিকেটার হিসেবে তরুণদের বেড়ে উঠতে দেখলে। বারবার অদলবদল যেন না করা হয়। খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে ওঠার সময় দিতে হবে তাদেরকে।”

“বেশ কিছু ভালো প্রতিভা তাদের আছে। তানজিদকে মাঠে আরও জ্বলে ওঠার পথ বের করে দিতে হবে তাদের। তাওহিদকে (হৃদয়) মনে হচ্ছে ভালো ক্রিকেটার, জাকের আলি ভালো প্রতিভা। এই দলে প্রতিভা কিছু আছে। এখন ব্যাপারটি হলো, তাদেরকে নিরাপদ অনুভব করানো, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যোগ্য মনে করানো এবং বোর্ড যেন তাদের পাশে থাকে, যেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” –যোগ করেন তিনি।

পার্থিব পাটেলও বললেন একই কথা, ‘‘তাওহীদ হৃদয় অবশ্যই সবাইকে মুগ্ধ করেছে এখানে। নাজমুল হোসেন শান্ত আছে, তাদের অধিনায়ক। জাকের আলী আছে, তানজিদ হাসানে প্রতিভা আছে দারুণ, তার বড় ইনিংস খেলা প্রয়োজন। তাসকিন আহমেদ, রিশাদ হোসেন, নাহিদ রানা, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাদের স্কোয়াডে থাকা উচিত।”

“ওই ক্রিকেটারদের আর ফিরিয়ে আনবেন না। সামনে তাকাতে হবে। সমস্যা এখানেই। বলা হচ্ছে, কেউ বাদ পড়লে সৌম্য সরকার দলে আসছে। আলোচনা হচ্ছে কাউকে বাদ দেওয়ার, লিটন দাস তখন চলে আসছে। এভাবে স্কোয়াড গড়ে তোলার যাবে না।” – যোগ করেন তিনি।

২০২৩ বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশের নতুন করে ভাবনার প্রয়োজন ছিল বলে মনে করছেন দুজনই। চলতি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর বৈশ্বিক ওয়ানডে আসর ২০২৭ সালে। আইসিসি ইভেন্টে ভালো করতে হলে রি-স্টার্ট দেওয়ার সুযোগ এখনই।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা

লরা উলভার্ট- দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বয়স মাত্র ছাব্বিশ, কিন্তু মনের দৃঢ়তায় যেন পাহাড়। এবারের ২০২৫ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন প্রোটিয়া আশার একমাত্র আলোকবর্তিকা। নিজের একক নৈপুণ্যে, এক অসম্ভব সাহসিকতায় দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে।

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ফেলেছিলেন ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস। যেন একক নাটকের একমাত্র নায়িকা তিনি। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অনবদ্যভাবে। শতরান ছুঁয়ে যখন আকাশে ছুড়লেন ব্যাট, তখন মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের ট্রফি যেন হাতের নাগালেই। কিন্তু ক্রিকেটের নির্মম বাস্তবতা! উলভার্ট যখন সাজঘরে ফিরলেন, ঠিক তখনই প্রোটিয়া শিবিরে নেমে এল নীরবতা। জয় হাতছাড়া হলো নিঃশ্বাস দূরত্বে।

আরো পড়ুন:

আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র

মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা

চোখের কোণে জলের কণা তখনও ঝলমল করছিল। সেটা ঘামের ছিল, নাকি অপূর্ণতার অশ্রু, তা কেউ জানে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, হৃদয়ের গভীরে আগুন জ্বলছে। একটা স্বপ্নের দগ্ধ ছাই হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।

তবুও এই ব্যর্থতার মাঝেই উলভার্টের জয় আছে। বিশ্বকাপে তিন ফাইনাল, টানা তিনবার! এবং প্রতিবারই দলের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৭১ রান, গড়ে ৭১.৩৭। যা নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ। এর আগে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রান ছিল শীর্ষে।

শুরুটা ছিল নিস্তরঙ্গ- প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫, পরেরটিতে ১৪। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুন জ্বলে উঠল তার ব্যাটে। ভারতের বিপক্ষে ৭০, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০, আর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯। প্রতিটি ইনিংস যেন নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়া একেকটি যাত্রা।

তবে উলভার্টের কীর্তি শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়। ২০২৩ ও ২০২৪ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতিবারই দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। তিনটি ফাইনাল, তিনটি পরাজয়।

তবু লরার গল্পটা হারের নয়- এ এক অনমনীয়তার গল্প, এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রার গল্প। যেমন শেরপা অক্সিজেনহীন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় অন্যদের। কিন্তু নিজে ফিরে আসে নীরবে, তেমনি উলভার্টও দলের স্বপ্নগুলো কাঁধে তুলে বয়ে নিয়েছেন, একা।

ফাইনাল শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়রাও যখন এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন বোঝা গেল; এই হার, এই অশ্রু, এই নীরবতা- সবই সম্মানের প্রতীক।

রবিবার ফাইনাল শেষে লরা বলেছেন অনেক কথা। সেখানে হাতাশার কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে প্রেরণা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।

“আমি মনে করি, ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত) পর থেকেই আমাদের জন্য অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ঘরোয়া পর্যায়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের দলের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।”

“এরপরের (২০২৪ সালের) বিশ্বকাপটা আমাদের দলের নামটা বিশ্ব ক্রিকেটে আরও বড় করে তুলেছে, আমার তাই মনে হয়। এখন আমরা এমন একটি দল, যারা নিয়মিত ফাইনালে পৌঁছাচ্ছে। যেখানে আগে এটা একবারের সাফল্য বলেই ধরা হতো।”

“টানা তিনবার ফাইনালে উঠতে পারাটা সত্যিই গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দলীয় কাঠামোয় সঠিক দিকেই এগোচ্ছি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এই ফলেই আমরা এখানে পৌঁছেছি। আশা করি, আমরা এমন আরও ফাইনাল খেলতে থাকব… আর একদিন, হ্যাঁ, একদিন আমরা অবশ্যই একটা জিতব।”

টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে উলভার্ট বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের এই আসরটা অসাধারণ কেটেছে। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোই একটা বড় সাফল্য। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। এই বিষয়টা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি গর্বিত।”

“একপর্যায়ে আমরা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতেছিলাম। যা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দুই দলের মধ্যকার সিরিজগুলোতে আমরা সবসময় এই ধারাবাহিকতা পাই না। তাই বড় মঞ্চে, বড় টুর্নামেন্টে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারাটা সত্যিই গর্বের। আমরা প্রমাণ করেছি, বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন বড় দল।” 

সত্যিই তাই। লরার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বড় দল। হয়তো একদিন, কোনো এক প্রভাতে, লরা উলভার্ট সেই অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু আজকের দিনে, তিনি রয়েছেন বিশ্বকাপের হিমালয়ের চূড়ায়, এক নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে। যিনি নিজের কীর্তিতে চূড়ায় উঠেছেন।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
  • অ্যালবামের গল্প বলবে ‘পেনোয়া’