প্রথমবারের মত কুমিল্লা মহানগর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। 

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সম্মেলনে বিশেষ অতিথি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিন, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া, মোস্তাক মিয়া। সভাপতিত্ব করবেন মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী আবু। সম্মেলন সঞ্চালনা করবেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু। 

এদিকে অনুষ্ঠান শুরুর আগেই নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে টাউনহলে জড়ো হন দলটির নেতাকর্মীরা। 

সম্মেলনে শৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তত ৮০০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। টাউনহলজুড়ে শহীদ জিয়া স্লোগানে মুখর। 

দলীয় সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি হতে যাচ্ছেন বর্তমান আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবু, সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন বর্তমান সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হচ্ছেন বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রাজিউর রহমান রাজিব।

মহানগর বিএনপির ২৭টি ওয়ার্ডে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। ২৭টি ওয়ার্ডের মোট ২ হাজার ৭২৭ জন ভোটার ভোটের মাধ্যমে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করার কথা ছিল।

সারাদেশে কাউন্সিলে ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন করছে বিএনপি। ভোটের জন্য নির্বাচন কমিশনও গঠন করা হচ্ছে দলটির পক্ষ থেকে। কুমিল্লা মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ৫ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হয় অ্যাডভোকেট আলী আক্কাসকে।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মহানগর বিএনপির কমিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে গঠিত নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর মহানগর বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মাত্র একজন করে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

গত শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল। ওইদিন কোনো প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে গঠিত নির্বাচন কমিশন। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ তিন পদে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ভোট দেওয়ার কোনো প্রয়োজন পড়ছে না। বিনা ভোটেই পদ পেতে যাচ্ছেন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক।

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট আলী আক্কাস বলেন, “যে তিনটি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে প্রতিটি পদেই একজন করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে কেউ প্রত্যাহার না করায় ২৫ ফেব্রুয়ারি তিন প্রার্থীই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।”

মহানগর বিএনপির সভাপতি পদে চূড়ান্ত হওয়া উৎবাতুল বারী আবু বলেন, “আর কোন প্রার্থী না থাকায় তিনটি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় তিনজন দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন। আপাতত আমরা সম্মেলনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে চাই।” 

মহানগর বিএনপির সদ্য নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, “সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে উদ্দীপনা বিরাজ করছে। আমরা একটি স্মরণীয় সম্মেলন করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।”

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা হলেও ২০২২ সালের ৩০ মে প্রথমবারের মতো কুমিল্লা মহানগর বিএনপির ৪৪ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আমিরুজ্জামান আমিরকে আহ্বায়ক ও কুমিল্লা মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপুকে সদস্য সচিব করা হয়। ওই কমিটিতে উৎবাতুল বারী আবুকে ১৪ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়।

পরবর্তীতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ২০২২ সালের ২৭ জুলাই মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আমিরুজ্জামান আমিরকে প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে অব্যাহতি দেয় বিএনপি। পরে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয় প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক শওকত আলী বকুলকে। 

পরে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উৎবাতুল বারী আবুকে আহ্বায়ক এবং ইউসুফ মোল্লা টিপুকে সদস্যসচিব করে ২৫ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

ঢাকা/রুবেল/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউস ফ ম ল ল সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে 

বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।

বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।

ঢাকা/নাজমুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে