ভারতের চারটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের পেট্রলজাত পণ্য বিক্রি ও পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

মার্কিন সরকারের বিদেশি সম্পদবিষয়ক অফিস ও পররাষ্ট্র দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারতের ওই চার প্রতিষ্ঠান হলো ফ্লুক্স মেরিটাইম এলএলপি, বিএসএম মেরিন এলএলপি, অস্টিনশিপ ম্যানেজমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড ও কসমস লাইনস ইনকরপোরেশন।

এই চার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কসমস লাইনস ইনকরপোরেশনকে ইরানের পেট্রলজাত পণ্য পরিবহনে জড়িত থাকার অভিযোগে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। বাকি তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ইরানের জ্বালানি তেল ও পেট্রলজাত পণ্য পরিবহনকারী বিভিন্ন নৌযানের বাণিজ্যিক অথবা কারিগরি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, নিজেদের জ্বালানি তেলের বিক্রি বাড়ানো এবং অস্থিতিশীল কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে নৌযান, পরিবহনকারী এবং মধ্যস্থতাকারীদের একটি গোপন নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করে যাচ্ছে ইরান।

স্কট বেসেন্ট আরও বলেন, ইরানের জ্বালানি তেল সরবরাহব্যবস্থার সব ক্ষেত্রকে লক্ষ্যবস্তু করতে নিজেদের সব সরঞ্জাম কাজে লাগাবে যুক্তরাষ্ট্র। আর যারা ইরানের তেল নিয়ে কাজ করবে, তারাও নিষেধাজ্ঞার উল্লেখযোগ্য ঝুঁকির মুখে পড়বে। কারণ, তেহরানের ওপর বড় পরিসরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অনেক দেশ ও প্রতিষ্ঠান সরাসরি ইরানের তেল কেনে না।

গতকাল যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ নিষেধাজ্ঞার পরও ইরানের জ্বালানি তেল–বাণিজ্য চলছে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ইরানের তেল পরিবহনকারী ট্যাংকারগুলো বন্দর এলাকার বাইরে নিষেধাজ্ঞার আওতায় না থাকা নৌযানে তেল সরবরাহ করছে। পরে ওই তেল বিদেশি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত ইরানের সামরিক বাহিনী এবং তাদের সমর্থিত বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর পেছনে এ তেল বিক্রির অর্থ ব্যবহার করছে তেহরান।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্র্রণালয় গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ভারতের চারটি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ইরানের জ্বালানি তেল বিক্রি ও পরিবহনে যুক্ত থাকার অভিযোগে সংযুক্ত আরব আমিরাত, হংকং ও চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইরানিয়ান অয়েল কোম্পানির প্রধান এবং ইরানিয়ান অয়েল টার্মিনালস কোম্পানিকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রাখা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা প্রতিষ্ঠানের ওপর আমদানি বা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা, তাদের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করা, তাদের সম্পদ জব্দ করা এবং এক বা একাধিক দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা ও মুদ্রা ব্যবহারে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

বর্তমানে সবচেয়ে বড় পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা দেশ হলো রাশিয়া। তিন বছর আগে ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর মস্কোর ওপর একরাশ নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয় ওয়াশিংটন। এ ছাড়া ইরান, উত্তর কোরিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ষ ধ জ ঞ র আওত য় র ওপর ন

এছাড়াও পড়ুন:

ইসিকে নিশানা করে ‘অ্যাটম বোমা’ ফাটালেন রাহুল গান্ধী, এখনো বাকি ‘হাইড্রোজেন বোমা’

ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটচুরির অভিযোগ এনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, এটা ‘অ্যাটম বোমা’। তবে আরও ভয়ংকর তথ্য তিনি পরে আনবেন, যা ‘হাইড্রোজেন বোমার সমতুল্য’।

আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আবার বিস্ফোরক অভিযোগ এনে রাহুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের মদদে কিছু লোক, সংস্থা ও কল সেন্টার সংগঠিতভাবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বেছে বেছে কংগ্রেস, দলিত, আদিবাসী ভোটারদের নাম বাদ দিচ্ছে।

আজ সংবাদ সম্মেলন করে রাহুল বলেন, নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে নকল আবেদন করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

‘অ্যাটম বোমা’ ফাটানোর দিন রাহুল কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রের ‘ভোট চুরির’ নমুনা পেশ করেছিলেন। আজ তিনি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন কর্ণাটকেরই আলন্দ কেন্দ্রকে।

রাহুলের অভিযোগ, নকল আবেদনের মাধ্যমে ওই কেন্দ্রের ৬ হাজার ১৮ জন ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। যেসব কেন্দ্রে কংগ্রেস শক্তিশালী, বেছে বেছে সেসব কেন্দ্রকেই নিশানা করা হয়েছে। ভুয়া ভোটারের নাম তোলার পাশাপাশি বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটা সংগঠিতভাবে করা হচ্ছে। কর্ণাটক পুলিশ সেই বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলেও নির্বাচন কমিশন কোনো তথ্য দিচ্ছে না।

রাহুলের অভিযোগ, যাঁদের নামে আবেদন জানানো হচ্ছে এবং যাঁদের নাম মোছার আরজি জানানো হচ্ছে, তাঁদের কেউ–ই তা জানতে পারছেন না। সংবাদ সম্মেলনে এই ধরনের কিছু মানুষকে রাহুল হাজিরও করান।

কিছু নম্বরও দাখিল করে রাহুল বলেন, এসব নম্বর থেকে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। তাঁর প্রশ্ন, ওই নম্বরগুলোয় ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ‘ওটিপি’ কীভাবে গেল?

কংগ্রেস নেতা বলেন, নির্দিষ্ট কিছু ঠিকানা থেকে নির্দিষ্ট ‘আইপি’ অ্যাড্রেস ব্যবহার করে নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে। অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে কর্ণাটক পুলিশের গোয়েন্দারা ইসির কাছে কিছু তথ্য চেয়েছিলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমার কোনো তথ্যই দেননি। এতেই বোঝা যাচ্ছে, ইসি ভোটচোরদের আড়াল করছে।

রাহুল বলেন, কর্ণাটক সিআইডি ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে ইসিকে ১৮ বার চিঠি লিখেছে। অথচ একটি চিঠিরও জবাব ইসি দেয়নি। ইসিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাহুল বলেন, কমিশন স্বচ্ছ হলে এক সপ্তাহের মধ্যে কর্ণাটক সিআইডিকে যাবতীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করুক।

রাহুল মহারাষ্ট্রের রাজুরা বিধানসভা আসনের ভোটার তালিকা তুলে ধরে বলেন, সেখানে অনলাইনে ৬ হাজার ৮৫০ জনের নাম অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন রাজ্যে ভোটার তালিকায় এভাবে সংযোজন–বিয়োজন চলছে।

এর আগেও রাহুল নিশানা করেছিলেন সিইসি জ্ঞানেশ কুমারকে। আজও তিনি তাঁকে কাঠগড়ায় তোলেন। রাহুল বলেন, নির্বাচন স্বচ্ছ ও অবাধ করার বদলে তিনি পক্ষপাতমূলক আচরণ করেই চলেছেন। ভোট চুরি করাচ্ছেন। ভোটচোরদের রক্ষাও করছেন।

রাহুলের অভিযোগ এবারও খারিজ করে দিয়েছে ইসি। রাহুলের ডাকা সংবাদ সম্মেলনের পর আজ ইসি এক বিবৃতি দেয়। তাতে রাহুলের অভিযোগ ‘অসত্য ও ভিত্তিহীন’ জানিয়ে বলা হয়, অনলাইনে কেউ কোনো ভোটারের নাম বাদ দিতে পারেন না। নাম বাদ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য শোনা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ