ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদন: স্বাধীনতার সূচকে সবচেয়ে বেশি উন্নতি হওয়া দেশের তালিকায় বাংলাদেশ
Published: 26th, February 2025 GMT
গত বছর কর্তৃত্ববাদী শাসকেরা তাঁদের হাত আরও শক্ত করেছেন, তাতে বিশ্বজুড়ে মানুষের স্বাধীনতা চর্চার অধিকার আরও কমেছে। এর মধ্যেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো কয়েকটি ক্ষেত্রে আশার আলো দেখিয়েছে।
২০২৪ সালে স্বাধীনতার সূচকে সবচেয়ে বেশি উন্নতি হওয়া চার দেশের মধ্যে তিনটিই দক্ষিণ এশিয়ার। দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, ভুটান এবং শ্রীলঙ্কা। অন্য দেশটি হচ্ছে সিরিয়া।
তবে স্বাধীনতার সূচক মানে সবচেয়ে বেশি উন্নতি হওয়া দেশগুলোর তালিকায় নাম থাকলেও বাংলাদেশ এখনো রাজনৈতিক অধিকারচর্চা ও নাগরিক স্বাধীনতার চর্চায় ‘আংশিক স্বাধীন’ দেশ। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৪০। ২০২৪ সালে উন্নতি হলেও শ্রেণি পরিবর্তন হয়নি, বাংলাদেশের এবার স্কোর ৪৫।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউসের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ বুধবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
ফ্রিডম হাউস প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে স্বাধীনতার সূচকে দুটি দেশ নতুন করে ‘স্বাধীন’ দেশের শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। দেশ দুটি হলো সেনেগাল ও ভুটান।
দেশ দুটির উত্তরণের কারণ ব্যাখ্যায় এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনেগালে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ভোট পিছিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিরোধীদের আন্দোলনের মুখে সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং ভোটে বিরোধীরা জয়ী হন।
আর হিমালয় অঞ্চলের ছোট্ট দেশ ভুটান প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে সুসংহত করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ভুটানই ‘স্বাধীন’ দেশের শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা প্রসঙ্গে ফ্রিডম হাউস প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রেণিতে অবস্থান পরিবর্তন না হলেও ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের এ দুই দেশের বড় ধরনের উন্নতি লক্ষ করা গেছে।
বাংলাদেশে গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রায় ১৫ বছর বাংলাদেশের ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে ছিলেন।
বাংলাদেশ ছাড়াও গত বছরের ডিসেম্বরে সিরিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল–আসাদের পতন হয়। ইসলামপন্থী যোদ্ধারা তাঁকে উৎখাত করেন। তিনিও দেশে ছেড়ে পালিয়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নেন।
ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ও সিরিয়া প্রসঙ্গে বলা হয়, যদিও উভয় দেশেই সরকার পতনের পর দ্রুত নাগরিক স্বাধীনতার মান উন্নত হয়েছে। তবে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বে এ উন্নয়ন দেখতে আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।
অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসেন প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। অনূঢ়ার জয়ের মধ্য দিয়ে দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা দুই দলের আধিপত্যে ভাঙন ধরেছে।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশ ও অঞ্চল মিলিয়ে তালিকায় সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয়েছে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে। ৩৮ স্কোর নিয়ে কাশ্মীর এখন ‘আংশিক স্বাধীন’। ২০১৯ সালে ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকার মুসলিম–অধ্যুষিত ওই অঞ্চলটির বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর গত বছর সেখানে প্রথমবার বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে।
তবে ফ্রিডম হাউসের তালিকায় দেশ হিসেবে ভারতের অবনতি হয়েছে। এ জন্য ভারতের বিচার বিভাগে নিয়োগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
গবেষণা সংস্থাটি ভারতকে ‘ আংশিক স্বাধীন’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে, স্কোর ৬৩। গত বছর ভারতের স্কোর ছিল ৬৬। ২০২১ সালে ভারত ‘স্বাধীন’ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
২০২৪ সালে স্বাধীনতা সূচকে সবচেয়ে বেশি অবনমন হওয়া চার দেশ হচ্ছে—এল সালভাদর, হাইতি, কুয়েত ও তিউনিসিয়া। এর মধ্যে এল সালভাদর (স্কোর ৪৭) ও তিউনিসিয়া (স্কোর ৪৪) ‘আংশিক স্বাধীন’। আর হাইতি (২৪) ও কুয়েত (স্কোর ৩১) ‘স্বাধীন নয়’।
প্রতিবেদনের সহ–লেখক ইয়ানা গোরোখোভস্কায়া বলেছেন, টানা ১৯ বছর ধরে বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতার মানের অবনমন হচ্ছে। তবে ২০২৪ সাল বিশেষভাবে অস্থিতিশীল ছিল। কারণ, গত বছর বেশ কয়েকটি দেশে নির্বাচন হয়েছিল।
ইয়ানা বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো, আগের বছরগুলোর মতো এবারও বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতা কমেছে। কিন্তু এত সব নির্বাচনের কারণে আগের বছরগুলোর তুলনায় ২০২৪ সাল বেশি নাটকীয় বছর ছিল।’
ইয়ানা বলেন, বাংলাদেশ ও সিরিয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে নাগরিক স্বাধীনতায় উন্নতি হয়েছে। তবে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব অর্জনের জন্য তাদের আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।
ইয়ানা মনে করেন, ‘রাজনৈতিক অধিকার অনেকটা প্রতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। এগুলো ভেঙে ফেলা খুব সহজ, কিন্তু গড়ে তোলা খুবই কঠিন।’
২০৮টি দেশ ও অঞ্চলের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা চর্চার সুযোগ কতটা আছে, তার ওপর ভিত্তি করে ফ্রিডম হাউস বার্ষিক এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে।
আরও পড়ুনফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদন: নাগরিক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ‘আংশিক স্বাধীন’০৯ মার্চ ২০২৩.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০২৪ স ল র জন ত ক গত বছর সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশ
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ ৩২১ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-মার্চ) ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ২৫৭ কোটি ডলার। সেই হিসেবে এ বছর বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এমনকি চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে গত অর্থবছরের কাছাকাছি ঋণের সুদাসল পরিশোধ হয়ে গেছে।
বিদেশি ঋণ-অনুদান পরিস্থিতির ওপর গতকাল বুধবার প্রকাশিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বিদেশি ঋণ বাবদ পরিশোধের মধ্যে আসলের পরিমাণ ২০১ কোটি ডলার। সুদ বাবদ ১২০ কোটি ডলার পরিশোধ হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২৫৭ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে ৬৪ কোটি ডলার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে।
ইআরডির একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আগ্রাসী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় পরিণাম চিন্তা না করে বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হারের তারতম্য বাড়াসহ নানা কারণে এখন বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে দেশে মোট প্রায় ৪৮১ কোটি ডলার সমপরিমাণ বিদেশি ঋণ-অনুদান এসেছে। এ সময়ে ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হয়েছে অর্থছাড়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের সমান। এদিকে গত জুলাই-মার্চ সময়ে ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ, যা গতবারের একই সময়ে পাওয়া প্রতিশ্রুতির অর্ধেকের কম।
গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৭২৪ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল। জুলাই-মার্চ সময়ে সবচেয়ে বেশি ১২২ কোটি ডলার ছাড় করেছে এডিবি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ১০৭ কোটি ডলার ও জাপান ৮৯ কোটি ডলার দিয়েছে।