খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে রেকর্ড গড়েছিলেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালনকালে তিন শতাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছিলেন। এর মধ্যে দায়িত্ব ছাড়ার আগে এক মাসেই ১২৪ জনকে নিয়োগ দেন।

এসব নিয়োগে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও বাণিজ্যের অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সৃষ্টি হয়েছে আলোড়ন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্তে এর প্রমাণ মিললেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এসব নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়ে এবার অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে চিঠি দিয়ে এসব নিয়োগ ও পদোন্নতির তালিকা এবং নিয়োগ কমিটির সভার কার্যবিবরণীসহ বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে।

অধ্যাপক ফায়েক উজ্জামান ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলায়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১০ সালের নভেম্বরে তাঁকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কেসিসির সাবেক মেয়র ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেকের সুপারিশে ফায়েককে নিয়োগ দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, দুই মেয়াদে তিন শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগ ওঠে ফায়েকের বিরুদ্ধে। নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে দুদকের পক্ষ থেকে ইউজিসি চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে তদন্তের জন্য অনুরোধ করা হয়। ২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি দুদকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে বিষয়টির তদন্ত শুরু করেন। সে প্রতিবেদন আর আলোর মুখ দেখেনি। প্রতিপক্ষ দমনে কঠোর ছিলেন ফায়েক। বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর বদলি ও পদোন্নতি আটকে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, আবাসিক হল, গ্রন্থাগার, অতিথি ভবনসহ কয়েকটি ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে ফায়েক উজ্জামানের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর দুদকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।

দুদকের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো.

আবদুল ওয়াদুদ বলেন, আমরা নিয়োগ ও পদোন্নতির যাবতীয় নথি চেয়েছি। ৫ মার্চের মধ্যে এসব নথি দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। নথি পেলে পুরোদমে অনুসন্ধান কাজ শুরু হবে। 

অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। তাঁর বক্তব্য জানতে কয়েকবার ফোন করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: খ ব উপ চ র য উপ চ র য তদন ত এসব ন

এছাড়াও পড়ুন:

সন্দ্বীপ চ্যানেলে মাঝপথে জ্বালানি শেষ স্পিডবোটের, ২৭ যাত্রী নিয়ে ভেসে ছিল আড়াই ঘণ্টা

সন্দ্বীপ চ্যানেলে দুর্ঘটনায় পড়া একটি স্পিডবোট আড়াই ঘণ্টা সাগরে ভেসে থাকার পর কূলে পৌঁছেছে। বোটটিতে ৩ শিশু, ২ নারীসহ মোট ২৭ জন যাত্রী ছিলেন।

আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা বোটটি বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার ছোট কুমিরা উপকূলে পৌঁছায়। বোট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানটি হলো সন্দ্বীপ মেরিন সার্ভিস।

বোটের কয়েকজন যাত্রী প্রথম আলোকে জানান, কুমিরা ঘাটের কাছাকাছি আসতেই বোটটির গতি কমে যায়। এরপর প্রবল ঢেউ ও স্রোতের মুখে বারবার পানিতে আছড়ে পড়তে থাকে। চালক তখন যাত্রীদের জানান, বোটের জ্বালানি শেষ হয়ে গেছে। এর মধ্যে বোটের সামনের অংশে পানি ঢুকতে দেখা যায়। আতঙ্কিত যাত্রীরা তখন চিৎকার করতে থাকেন। পরে বোটটি ভাসতে ভাসতে কূলে পৌঁছায়।

বোটে থাকা যাত্রী ফুয়াদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বোটের তলা ফেটে পানি ঢুকছে আর আমরা এক কিলোমিটার দূরে উত্তাল সাগরে ভাসছি। একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল বেঁচে ফিরতে পারব না, এমনকি সমুদ্রে ঝাঁপ দেওয়ার কথাও ভাবছিলাম। কিন্তু ভাগ্য ভালো, শেষ পর্যন্ত কূলে পৌঁছাতে পেরেছি।’

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সবাই নিরাপদে কূলে নামতে সক্ষম হন বলে জানান ফুয়াদ।

বিকেলেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্পিডবোট ডুবে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। এতে প্রাণহানির আশঙ্কায় অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বিষয়টির কারণ জানতে বিভিন্ন মন্তব্য করেন।

জানতে চাইলে বোট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান সন্দ্বীপ মেরিন সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বোটের জ্বালানি শেষ হয়নি। তীব্র স্রোতের কারণে বোটটি কুমিরা ঘাট থেকে উত্তরে সরে গিয়ে তীরের কংক্রিট ব্লকে ধাক্কা খায়। এতে বোটের নিচের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু যাত্রীরা সবাই নিরাপদে কূলে পৌঁছাতে সক্ষম হন।’

বৈরী আবহাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বোট চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের সার্ভিস বন্ধ ছিল। তবে বিদেশগামী কয়েকজন যাত্রীর অনুরোধে এই একটি ট্রিপ চালু করতে হয়েছে।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এই সময়ে বোট চলাচলের অনুমতি ছিল না। তিনি বলেন, মাঝ সাগরে জ্বালানি শেষ হওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, তার দায় চালক ও মালিকের। ইতিমধ্যে স্বত্বাধিকারীদের কাছে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। চালকের লাইসেন্স স্থগিত করে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ