সাবিত সারওয়ারের গল্পের বই ‘মেছো ভূতের কান্না’
Published: 27th, February 2025 GMT
‘মেছো ভূতের কান্না’ ছোটদের গল্পের বই। গতানুগতিক ভূতের গল্প নয়। বাস্তব কাহিনী অবলম্বনে লেখা। তবে, বয়ানের ভাঁজে ভাঁজে লেখক খানিকটা কল্পনার রঙ ছিটিয়ে দিয়েছেন। যে কারণে বৈঠকি ঢঙে জমে ওঠে গল্পের আসর। এক মলাটে ৯টি ভিন্ন স্বাদের গল্পে গল্পকার চেষ্টা করেছেন শিশুকিশোরদের মনন ও বিনোদনের মেলবন্ধন ঘটাতে। প্রায় প্রতিটি গল্পে প্রাধান্য পেয়েছে শিশুমনের কল্পনা ও কৌতূহল। বিষয়বস্তুতে নজর দেওয়া হয়েছে শিক্ষণীয় দিক। যেন মানবিক হতে পারি আমরা। নতুন প্রজন্ম যেন বেড়ে ওঠে সম্প্রীতি ও সহনশীলতার চর্চা নিয়ে।
নাম শিরোনামের গল্প মেছোভূতের কান্নায় গল্পকার তুলে ধরেছেন গ্রামীণ এক গল্পের পটভূমি। ছায়াসুনিবিড় সেই গ্রাম এখন খানিকটা শহুরে আদল পেয়েছে। তবুও গল্পের সেই কাল এখনও সমান তালে প্রাসঙ্গিক। কাহিনী পর্বের খণ্ডচিত্রে দেখানো হয়েছে অখণ্ড সেই গ্রামীণ পরিবেশ। যেখানে দবির ও মতি ভাই নামে দুই বন্ধু চরিত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে গল্পটি। প্রতিদিন ভোররাতে নদীতে মাছ শিকারে যান। একদিন ভরা পূর্ণিমায় দবির সেজে মতি ভাইকে শ্মশানঘেরা নদীতে ডেকে নেয় মেছোভূত। মতি ভাই বুঝতে পারে না এখনও সকাল হয়নি। বরং দিনভর ক্লান্তির কারণে তার মনে হয় গাঢ় ঘুমে আচ্ছন্ন সে। বারবার দবির ডাক শুনে জাল-দড়ি নিয়ে বন্ধু দবিরের পেছন পেছন রওনা হয়। আকাশে তখন খণ্ড মেঘের ওড়াউড়ি। কাঁচা জোছনার আলোয় পথঘাট স্পষ্ট দেখা যায়। দীর্ঘ পথ নানা গল্পগুজব। সেই তড়িৎ পায়ে গন্তব্যে যাত্রা। তবে সব কথাই মতি ভাইয়ের। দবির সমস্ত পথ নিশ্চুপ। একই সঙ্গে কোনোভাবেই তার নাগাল পায় না মতি ভাই।
একপর্যায়ে পৌঁছে যায় সালতা নদীর বাঁকে। শ্মশানঘাটের পাশে ঝপ ঝপ করে দ্রুত জাল ছোড়ে দবির। জাল ভরে মাছ ওঠার শব্দ শোনে মতি ভাই। অথচ মতি ভাইয়ের মাছশূন্য জাল। কৌতূহল বেড়ে যায় তার। হঠাৎ দ্রুত পায়ে দবিরের আরো কাছাকাছি চলে যায়। দেখে এক অবাক কাণ্ড। দবির জাল থেকে মাছ ছাড়িয়ে পাত্রে না রেখে মুখে ভরছে। কাঁচামাছ চিবিয়ে কসমস করে গিলছে। দেখেই বেহুশ হয়ে পড়ে মতি ভাই। এরপর শুরু হয় মেছোভূত ও মতি ভাইয়ের সংলাপ। চলে দীর্ঘ সময় একে অপরকে পরাস্ত করার কসরত। পুরো গল্প পড়লে যেকোনো বয়সী পাঠকই নতুন এক স্বাদ অনুভব করতে পারবেন।
আরো পড়ুন:
বইমেলায় ‘ভূতের উপহার’
বইমেলায় রিদওয়ান আক্রামের ‘ম্যাওয়ের কত সাহস’
এ ছাড়াও, কালরাতে ফুলপরি এসেছিল, দুষ্টু ইঁদুরের কাণ্ড, একজন বাবার অভাবে এবং থ্যাংক ইউ মিসসহ চমৎকার চমৎকার ৯টি গল্প। যেখানে শুধু বিনোদন নয়- বরং মনন ও বিনোদনের সমন্বয়ে শিশুকিশোরদের মানসিক বিকাশ তৈরির রসদ রয়েছে।
৪ কালারের প্রচ্ছদে বইটি প্রকাশ করেছে পুথিনিলয় প্রকাশনী। মেলার ১৬ নম্বর প্যাভিলিয়নসহ দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে অনলাইনেও বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন।
ঢাকা/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।
গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।
পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।”
আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।
ঢাকা/আমিরুল/ইভা