‘রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের একটাই পুঁজি, তা হলো জনগণের আস্থা। জনগণের আস্থা নষ্ট হয়ে গেলে কী হয়, তা আমরা দেখেছি ৫ আগস্ট, দেখেননি স্বৈরাচারের কী অবস্থা হয়েছে,’ বিএনপির নেতাদের সতর্ক করে কথাগুলো বলেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই পরিণতির মুখে যেন কখনো পড়তে না হয়, সে জন্য খারাপ কাজগুলোকে যতটুকু সম্ভব দূরে সরিয়ে রেখে মানুষের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে ঢাকায় দলের বর্ধিত সভায় সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল প্রাঙ্গণে শুরু হয় বিএনপির বর্ধিত সভা। সভায় ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর রেকর্ড করা বক্তব্য সভায় প্রচার করা হয়।

বর্ধিত সভার দ্বিতীয় অধিবেশনে বিভিন্ন জেলা ও মহানগরের ১০৫ জন নেতা বক্তব্য দেন। এ সময় বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখল, টেন্ডারবাজির বিষয়টি কয়েকজন নেতার বক্তব্যে উঠে আসে। এসব কাজে দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তাঁরা। এ ছাড়া দলে অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেন তৃণমূলের এই নেতারা। পাশাপাশি যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলেছেন বেশির ভাগ নেতা।

তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্যের পর সমাপনী বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনাদের নেতা হিসেবে আমার নির্দেশনা, আজকে এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে এবং নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যাওয়ার পরে আপনারা উদ্যোগ গ্রহণ করুন, যে উদ্যোগের মাধ্যমে আপনি দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন, খারাপকে যতটুকু সম্ভব দূরে সরিয়ে দিতে পারবেন, আপনি আপনার এলাকার মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবেন।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনারাই আমার শক্তি, আপনারাই আমার আস্থা, আপনারাই ভরসা। আমার চোখ ও কান তৃণমূল। আমি তখনই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারব, যখন আপনারা সঠিক দেখবেন।’

একই সঙ্গে ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে সতর্ক করে নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেন তারেক রহমান। যেকোনো মূল্যে ঐক্য ধরে রাখার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ যদি না থাকি, আপনারা তিস্তা বাঁধ নিয়ে কথা বলেছেন, ফারাক্কা নিয়ে কথা বলেছেন, ফেলানী হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলেছেন, বিডিআর ও পিলখানা নিয়ে কথা বলেছেন। আপনারা কি মনে করেন, ওপাশ থেকে আপনাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থেমে যাবে? দেশের সীমানার ভেতরেও তাদের সহযোগীরা আছে। বিভিন্ন বিষয়ে যখন জনগণের সামনে বক্তব্য তুলে ধরেছেন, এরপরও কি তারা বসে থাকবে? ষড়যন্ত্র বন্ধ করে বসে থাকবে না। কিন্তু এই ষড়যন্ত্রকে আমরা মোকাবিলা করতে পারব শুধু যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি। সে জন্য ঐক্যের বাইরে আর কোনো বিকল্প নেই। ঐক্য না হলে ষড়যন্ত্র চলবে।’

আরও পড়ুনঅন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে ইতিমধ্যে জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে: তারেক রহমান১১ ঘণ্টা আগে

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই প্রথম এক ছাতার নিচে সব নেতাকে নিয়ে বর্ধিত সভা করল বিএনপি। সভাটি বিএনপি নেতাদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

বর্ধিত সভার মূল মঞ্চে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, মেজর (অব.

) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ষড়যন ত র ব এনপ র জনগণ র বল ছ ন আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিলেন ইশরাক হোসেন

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে ঈদের বিরতির পর ফের অবস্থান নিয়েছেন সংস্থাটির কর্মচারীরা। এর সঙ্গে ঢাকাবাসীর ব্যানারে নগরভবনে একত্রিত হয়েছেন ইশরাকের অনুসারীরা। সেখানে উপস্থিত হয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ইশরাক হোসেন।

আজ রোববার সকাল থেকে ইশরাকের অনুসারীরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগরভবনে একত্রিত হয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও। সকাল ১১ টার দিকে নগরভবনে প্রবেশ করেন ইশরাক হোসেন এবং আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তিনি।

ইশরাক হোসেন বলেন, সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করেন। তাহলে অচল অবস্থা কেটে যাবে। এই সমস্যা সুরাহা না করা পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এই আন্দোলন চলমান থাকবে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা সংবিধান লংঘন করেছেন। আন্দোলন চলমান থাকবে। এখান থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। এই লড়াই থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানাবো, তিনি যেন বিষয়টি সরাসরি নিজে তত্ত্বাবধান করেন। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশ্বাস করি। এখন আমাদের আন্দোলন যেভাবে চলছে কোনো অবস্থাতেই আমরা এখান থেকে ফিরে যেতে পারি না। আদালতের রায় জনগণের রায়কে আপনারা মেনে নিন। 

ইশরাক বলেন, আমরা যদি এখান থেকে পেছনের দিকে চলে যাই, তাহলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। সরকারকে আহ্বান জানাবো, আপনারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটা নিষ্পত্তি করেন। নইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এই সংকটে চলবেই। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যেসব দৈনন্দিন কার্যক্রম চলবে, জনগণের জন্য ভোগান্তি না হয়। এগুলো আমাদের তত্ত্বাবধানে চলমান থাকবে।

এদিকে তারা ‘শপথ শপথ শপথ চাই, ইশরাক ভাইয়ের শপথ চাই’, ‘মেয়র নিয়ে তালবাহানা, সহ্য করা হবে না’, ‘চলছে লড়াই চলবে, ইশরাক ভাই লড়বে’, ‘নগর পিতা ইশরাক ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’- এমন নানা স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের স্লোগানে উত্তাল ছিল পুরো নগরভবন। তাদের আন্দোলনের ফলে বিরতির আগে ১৫ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত নগর ভবন থেকে দেওয়া সব নাগরিক সেবা বন্ধ ছিল। ঈদের ছুটির পর আজ থেকে ফের তারা আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন ইশরাকের অনুসারীরা।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। সে সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয়; সেজন্য গত ১৪ মে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গত ১৫ মে থেকে আন্দোলন নামেন ইশরাক সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনের কারণে ডিএসসিসি নগর ভবন কার্যত অচল হয়ে পড়ে। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

এরপর এ রিট মামলার ওপর কয়েক দফা শুনানির পর তা খারিজ করে আদেশ দেন হাইকোর্টের বেঞ্চ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন ইশরাক হোসেন
  • আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিলেন ইশরাক হোসেন
  • আসামে বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্র মামলায় পরেশ বড়ুয়াসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
  • বাজেটের ত্রুটি সংশোধনের আহ্বান
  • ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক ষড়যন্ত্রকারীদের কফিনে শেষ পেরেক: প্রেস সচিব
  • ড. ইউনূসকে দেশের কাজে যুক্ত রাখতে চায় বিএনপি
  • জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন ইরানের প্রেসিডেন্ট
  • সহসাই রাজনীতির কালো মেঘ কেটে যাবে: ডা. জাহিদ  
  • চামড়াশিল্প ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
  • ‘সংস্কার ছাড়া নির্বাচন মানবে না জনগণ’