দল ও নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে নিজেদের মধ্যে ইস্পাতকঠিন ঐক্য ধরে রাখার কথা বলেছেন বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা। তারা বলছেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ সরকার পালিয়ে গেলেও এখনও রয়ে গেছে দোসররা। দোসরদের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী আঁতাত করে বিএনপিকে নিয়ে নানা চক্রান্ত করছে। এই চক্রান্ত মোকাবিলায় নিজেদের যেমন সজাগ থাকতে হবে, তেমনি জনগণের কাছাকাছি যেতে হবে। দলের গুটিকয়েক নেতাকর্মীর অপকর্ম রোধ করতে হবে।

 ওই কয়েকজনের দায়ভার পুরো দল নিতে পারে না। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে শুধু সাংগঠনিক ব্যবস্থা নয়, আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা। 

প্রায় সাত বছর পর গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির বর্ধিত সভায় সারাদেশ থেকে আসা বিভিন্ন জেলা, মহানগর ও থানা পর্যায়ের নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে এ আহ্বান জানান। ‘সুদৃঢ় ঐক্য রুখে দিতে পারে সকল ষড়যন্ত্র’ স্লোগান নিয়ে সংসদ ভবনের এলডি হলের মাঠে এই বর্ধিত সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর আগে বেলা ১১টার দিকে শুরু হওয়া এই সভায় তারেক রহমান ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উদ্বোধনী বক্তব্য দেন। সারাদেশের তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের প্রায় সাড়ে তিন হাজার নেতা এই বর্ধিত সভায় অংশ নেন। সভার শুরুতে গত সাড়ে ১৫ বছরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহত এবং দলের প্রয়াত নেতাকর্মীর স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। 

পরে শুরু হয় সারাদেশ থেকে আসা নেতাকর্মীর বক্তব্যের পালা। বেশির ভাগ নেতার বক্তব্যে হাইব্রিড নেতাকর্মীর আনাগোনা বেড়ে যাওয়া, বিভিন্ন স্থানে দলের নাম ব্যবহার করে কতিপয় নেতাকর্মীর দলের আদর্শবিরোধী অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়া, আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে এলাকায় কোন্দল সৃষ্টির অভিযোগ ছাড়াও বর্তমান প্রেক্ষাপটে জামায়াতের ষড়যন্ত্র বিষয়টি উঠে আসে। এ ছাড়া আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের দাবি যেমন ছিল, তেমনি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের বিরোধিতাও করেন কোনো কোনো নেতা। কেউ কেউ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরের সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ের কোনো কোনো নেতার আঁতাতের অভিযোগও তোলেন।

তবে সব নেতার বক্তব্যে সংসদ নির্বাচন নিয়ে অভিন্ন সুর ছিল। তারা দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে, মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দাবি তোলেন। নেতাকর্মীরা নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই সংসদ নির্বাচন চান। দু-একজন নেতা তাদের বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনাও করেন। তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কালক্ষেপণ করে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করছে।

সভায় পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুন নাহার খানম বলেন, চিরস্থায়ীভাবে গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপিকে টিকিয়ে রাখতে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শুধু কেন্দ্রীয়ভাবে বর্ধিত সভা নয়, বিভাগীয় পর্যায়ের সম্মেলন করতে হবে। সেখানে তৃণমূলের কষ্টের কথা জানতে হবে। সেটির প্রতিকার করতে হবে। দলকে করতে হবে জনমুখী। তিনি বলেন, সারাদেশে বিএনপি কার্যালয়ভিত্তিক রাজনীতি করলেও এখন তাদের প্রতিপক্ষ একটি দল (জামায়াত) মসজিদভিত্তিক রাজনীতি করছে। এই মসজিদভিত্তিক রাজনৈতিক দল থাকবে কিনা, তা এই অন্তর্বর্তী সরকারকে ভেবে দেখতে হবে। প্রতিপক্ষ ও দলটি বিএনপির বিরুদ্ধে অনেক গুজব, অপপ্রচার করছে। সেটির বিরুদ্ধে দলকে প্রস্তুতি নিতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিতে বিগত দিনে যারা সক্রিয় ছিলেন না, আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ছিলেন তাদের বিষয়ে দল থেকে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিতে হবে। যদি এসব নেতাকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তাহলে সেটা হবে আত্মঘাতী।

পিরোজপুরের এক নেতা বলেন, জামায়াতকে মোকাবিলায় সকালে মসজিদে নামাজ পড়তে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে সরকারের গঠিত কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছে, এর বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ইউপি সদস্যদের ভোটে চেয়ারম্যান নন, জনগণের ভোটে চেয়ারম্যান না হলে ওই সব জনপ্রতিনিধি দায়ভার নেবে না। অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।

খুলনা সদর থানা বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, একটি গুপ্ত সংগঠন সারাদেশে মব সৃষ্টি করছে, অরাজকতা করছে, বিএনপিকে নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। এই দলটি গত সাড়ে ১৫ বছর বিএনপির সঙ্গে থেকে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন করলেও এখন তারা সুবিধাজনক সময়ে আওয়ামী লীগের দোসরদের প্রতিষ্ঠা করছে, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আঁতাত করছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক নেতা বলেন, বিএনপির ঐক্য বিনষ্টের চেষ্টা করছে নিজেদের লোকজন। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকতে না পারি, তাহলে আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে– কে সেই ঐক্য বিনষ্টকারী, তাকে খুঁজে বের করুন।

টাঙ্গাইলের মধুপুরের নেতা জাকির হোসেন সরকার বলেন, শেখ হাসিনা যদি বিএনপিকে ধ্বংসই করতে পারত, তাহলে আজ বিজয় আসত না। যারা গত সাড়ে ১৫ বছর ছিল না, তারা এখন আমাদের ঘরে ঢুকে ঐক্য বিনষ্ট করতে চাইছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে তৃণমূলে কোন্দল বাড়ছে। দল বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এটি যাতে সামনে না বাড়ে, এ জন্য দলের হাইকমান্ড থেকে এখনই সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিতে হবে। বিগত দিনের সুবিধাভোগীরা যাতে মনোনয়ন না পান, সেটির নিশ্চয়তা দিতে হবে। 

নওগাঁর মহাদেবপুর এলাকার নেতা রবিউল আলম বলেন, ৫ আগস্টের পর এখন অনেক নেতাকর্মী দেখা যাচ্ছে। যাদেরকে বিগত আন্দোলনে দেখা যায়নি। সুবিধাভোগী নেতাকর্মীর ভিড় দেখে মনে হচ্ছে আমরাই এখন দলে সংখ্যালঘু। 

হবিগঞ্জের নেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিগত দিনে যারা গর্তে লুকিয়ে ছিল, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করেছিল, তাদের আস্ফালন এখন দেখা যাচ্ছে। এই সুবিধাভোগীর কাছে ত্যাগীরা হারিয়ে গেলে পুরো বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দলের দুর্দিনে তৃণমূল বেইমানি করেনি। যে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে। অথচ একশ্রেণির মৌসুমি নেতা সুবিধা নিয়ে মোটাতাজা হয়েছে। আর ত্যাগীরা হয়েছেন স্বাস্থ্যহীন। এই ত্যাগীরা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আছে। 

সৈয়দপুরের নেতা আলমগীর মাতুব্বর বলেন, যারা আমাদের বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে, তারাই আজ বিএনপির প্রথম কাতারে। এই হাইব্রিড যেন বিএনপিতে না ঢোকে। 

জামালপুরের নেতা আতিকুর রহমান সাজু বলেন, জুলাই-আগস্টে যারা আন্দোলন করেছে, তারা আমাদেরই সন্তান। তারা আওয়ামী লীগের দোসরদের কেউ নয়। তাই ছাত্রদের পড়ার টেবিলে ফিরে যাওয়া উচিত। আর দেশে এখন ষড়যন্ত্র চলছে। এ জন্য বিএনপির কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগঠনকে চাঙ্গা করতে হবে। যেসব জায়গায় কমিটি নেই, সেখানে কমিটি দিতে হবে। 

ঠাকুরগাঁওয়ের বিএনপি নেতা জিয়াউল ইসলাম জিয়া বলেন, দেশে অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছে। তাই আপনি (তারেক রহমান) নিজস্ব সেল ও জরিপের মাধ্যমে মনোনয়ন দেবেন। তাঁকেই মনোনয়ন দেবেন, যাঁর অবস্থান সবচেয়ে ভালো হবে। আর যারা দলের ক্ষতি করবে, গোপন সেল করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। 

ভোলার নেতা মফিজুর রহমান মিলন বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আর বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসীর জায়গা হবে না। বিএনপিতে যাতে আওয়ামী লীগের দোসরদের জায়গা না হয়। 

যশোরের নেতা আসাদুজ্জামান মিন্টু বলেন, প্রতিটি জায়গায় হাইব্রিড ও গ্রুপিং রয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে গ্রুপিং দূর করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিএনপিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিতে হবে। 

দিনাজপুরের নেতা আবদুস সালাম মিলন বলেন, সংসদ নির্বাচনের আগে দলকে শক্তিশালী করতে হবে। ৫ আগস্টের পরে বিএনপির ভেতরে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তাদের চিহ্নিত করতে হবে। 

নোয়াখালীর নেতা দেওয়ান শামসুল আরেফিন শামীম বলেন, এতদিন আন্দোলন-সংগ্রামে যাদের ডেকে পাইনি, দলে তাদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাদের দায়িত্ব দিলে আগামীতে তারা দলের সঙ্গে বেইমানি করবে।

কুষ্টিয়ার নেতা জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, আমরা অনেক মামলা-হামলার শিকার হয়েছি। দলের দুঃসময়ে যারা ছিলেন না, তারা এখন বিএনপিতে ভালো জায়গায় আছেন।

নীলফামারীর নেতা মাসুদ চৌধুরী বলেন, দলের ত্যাগীদের কথা যেন ভুলে না যাই।

২০টির বেশি প্রস্তাব পাস

তৃণমূলের বক্তব্য শেষে রাত পৌনে ১০টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া ২০টির বেশি মতামত সিদ্ধান্তের জন্য উত্থাপন করেন। এগুলো কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো– ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেসব সংস্কার প্রস্তাব নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, তা অতিদ্রুত বাস্তবায়ন করা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল ও মানুষকে আস্থায় আনতে হবে। সিন্ডিকেটের পাশাপাশি দেশের ঘোলাটে পরিবেশ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সরকারের ব্যর্থতা গ্রহণযোগ্য নয়। গুম-খুন-গায়েবি মামলাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতরা কীভাবে নির্বিঘ্নে দেশ ছাড়লেন তার একটি ব্যাখ্যা দিতে হবে। যারা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসরদের প্রশ্রয়দানকারীদের প্রত্যাহার করতে হবে।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ন ত কর ম র ষড়যন ত র পর য য় র র ব এনপ ব যবস থ সরক র র ব এনপ ক ব এনপ ত ল ইসল ম ব এনপ র দ সরদ র র জন ত ম বল ন আওয় ম ক ষমত রহম ন আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

জেলা কৃষকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন 

নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে একটি পক্ষের ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক ডা. শাহীন মিয়া।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক ডা. শাহীন মিয়া আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করেন।

এসময়ে উপস্থিত ছিলেন, জেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব আলম মিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক জুয়েল আরমান, ফজলু মেম্বার, মনির মল্লিক, শাহাদাত হোসেন, ওবায়দুর রহমান, শাহ আল বেপারী, সেলিম হোসেন দিপু।

সংবাদ সম্মেলনে শাহীন মিয়া বলেন, কোন চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও স্বৈরাচারের দোসর এদের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র যেকোনো অঙ্গ সংগঠনের পদে থাকতে পারে না। নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি হিসেবে আমার সংগঠনে যারা চাঁদাবাজ, দখলবাজ স্বৈরাচারের দোসর আমি তাদেরকে বহিষ্কার করেছি। 

আওয়ামীলীগের সাথে শাহীনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনাদের ব্যাপারে পাল্টা তিনি বলেন, রূপগঞ্জ থানার সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলামকে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসর, দলীয় নেতাকর্মীদের নির্যাতন ও সাংগঠনিক দূর্বলতার কারণে তাকে ৩০ নভেম্বর ২০২৩ সালে সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। 

এছাড়াও বিএনপির অসহযোগ আন্দোলনে নজরুলের কোন প্রকার সম্পৃক্ততা ছিল না। সে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম হত্যা মামলার আসামি রূপগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সালাউদ্দিনের যোগসাজসে রূপগঞ্জ ইউনিয়নের একাধিক মৌজার আবাদী জমিতে বালি ভরাট করে সাধারণ কৃষকের দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করেছিল। 

এছাড়াও অসহায় ও সাধারন মানুষের বসতবাড়ি সহ জবরদখল করে নেয় তারা। নজরুল দোসরদের আস্থাভাজন হওয়ার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের উপর বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নির্যাতন করেছিল। এভাবে বিগত ১৭ বছরে স্বৈরাচার সরকারের আস্থাভাজন হয়ে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন এই নজরুল। সে হলো মৌসুমী পাখি। 

তিনি বলেন, ১৭ টি বছর জুলুম নির্যাতন সহ্য করে এই নারায়ণগঞ্জে কৃষক দলকে হাতের মুঠোয় রেখেছি আজ সেই কৃষক দলের ভাবমূতি ক্ষুন্ন করতে এই নজরুল স্বৈরাচারের সাথে হাত মিলিয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনের মানহানি করেছে।

আমি এরই মিথ্যা সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং তার বিরুদ্ধে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। বিষয়টি আমি আমার হাইকমান্ডকে অবগত করেছি।

তিনি আরও বলেন, রূপগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি সার্জন মোমেনকে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও দলীয় শৃংখল বঙ্গের দায়ে ১০ই এপ্রিল সভাপতি পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। সে বিগত সতেরো বছর নেতাকর্মীদের নির্যাতন করে নিজের স্বার্থ হাসিল করেছে। ৫ ই আগস্টের পর ৪০ বিঘা জমির উপর মাছের প্রজেক্ট দখল করে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন মোমেন। 

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সময় সে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন তার নিজের জন্য। এখনো সে এলাকায় সাধারণ মানুষকে মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করছে এর যথেষ্ট প্রমাণ আমার কাছে এসেছে এবং অনেক সাধারণ মানুষ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। যে সমস্ত মানুষ কোন দল করে না দল বুঝেনা। এ সমস্ত অভিযোগের কারণে তাকে তার পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গতকাল নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে নজরুলসহ কৃষকদলের বেশ কয়েকজন নেতা সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় শাহীনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের লোকজনকে টাকার বিনিময়ে পুনর্বাসনসহ বেশ কিছু অভিযোগ  আনেন তারা।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেউ অপকর্ম করতে চাইলে সরাসরি ধরে পুলিশের কাছে দেবেন: মির্জা ফখরুল
  • জেলা কৃষকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন