বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ করে তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে তুলেছেন লক্ষ্মীপুরের মো. দেলোয়ার হোসেন নামের এক যুবক। প্রবাস থেকে ফিরে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় অল্প পুঁজিতে মাশরুমের খামার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। 

সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জের বিনোদধর্মপুর গ্রামের সফল এ উদ্যোক্তার দেখাদেখি মাশরুম চাষে এখন আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেকে। স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভজনক এ পণ্য বিদেশে রপ্তানী করে নিজের উন্নয়নের পাশাপাশি ও এলাকার বেকারদের কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখছেন এ উদ্যেক্তা। 

কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় নতুন এ খাদ্যপণ্যকে ঘিরে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আগ্রহীদের পাশে আছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর সুস্বাদু ও ঔষধি গুণ সম্পূর্ণ খাবার। পুষ্টি ও ঔষধিগুণ থাকায় ইতোমধ্যেই এটি সারাদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকদের মাঝে মাশরুম চাষে বেশি আগ্রহ বাড়ছে। মাশরুম চাষে বেকার সমস্যার সমাধান ও বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মাশরুম চাষে কোনো আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না। 

চাষের জমি না থাকলেও বসতঘরের পাশে অব্যবহৃত জায়গা ও ঘরের বারান্দা ব্যবহার করে অধিক পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা সম্ভব। মাশরুম বীজ উৎপাদনের জন্য যেসব কাঁচামালের প্রয়োজন হয়ে থাকে যেমন, খড়, কাঠের গুঁড়া, কাগজ, গমের ভূসি ইত্যাদি জিনিস আমাদের দেশে সহজলভ্য।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, খড়কুটো, কাঠ ও গমের ভূষি, ক্যালসিয়াম চুন এবং পানির মিশ্রণে তৈরি করা হচ্ছে স্পন (মাশরুম তৈরির প্রধম ধাপ)। লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় কৃষক দেলোয়ারের মাশরুম খামারের প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততার চিত্র এটি। বাড়ির পাশে গড়ে তোলা এ খামারটিতে নিজেও স্ত্রী-স্বজনসহ শ্রমিকদের প্রতিদিনের কর্ম ব্যস্ততা। পলিথিনের মোড়ানো প্যাকেটে গর্ত করে প্লাস্টিকের সাদা মুখ লাগিয়ে এসব ভর্তি করা হয় প্রথমে। 

পরে জীবানুনাশক মেশিনে ২৪ ঘণ্টা রাখা হয়। এরপর ল্যাবে নিয়ে টেস্ট টিউবে মাদার টিস্যু দিয়ে ২৮ দিন রাখা হয় ল্যাব ঘরে (এসি রুমে)। পরে মূল খামারে সারিবদ্ধভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয় প্যাকেটগুলো। এতে পলিথিনগুলো ভেদ করে বেরিয়ে আসে ছোট-বড় মাশরুম। 

প্রতিদিন ২০-২৫ কেজি হারে তা তুলে বাজারজাত করেন এ খামারী। প্রতি কেজি মাশরুম বিক্রি করা হয় ২০০-২৫০ টাকা হারে। সুস্বাদু মজাদার খাবার হিসেবে আশে পাশের মানুষ কিনে নিয়ে যান মাশরুম। 

নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও ঢাকায়ও বিক্রি হয় এখানকার উৎপাদিত পণ্য। কেউ মাংসের সঙ্গে, আবার কেউবা স্যুপ ও সবজি হিসেবে খেতে পছন্দ করেন।

জানা যায়, বিদেশে সুস্বাদু মাশরুম খেয়ে দেশে ফিরে খামার গড়ার স্বপ্ন জাগে প্রবাস ফেরৎ লক্ষ্মীপুরের যুবক দেলোয়ারের মনে। অধিক পুষ্টি গুণ সম্বৃদ্ধ মাশরুমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ২০২২সালে সেই স্বপ্ন পূরণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে মাশরুমের খামার গড়ে তোলেন তিনি। ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ শুরু করেন। বর্তমানে ৩ জাতের মাশরুম রয়েছে তার খামারে।

নিজের চেষ্টা, শ্রম আর মেধায় খামারজুড়ে সারিসারি পলিথিনের প্যাকেট সাদা রঙ্গের মাশরুমে স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি এ উদ্যোক্তা।

উদ্যেক্তা দেলোয়ার জানান, এসব মাশরুমকে ঘিরে শুরুতে অনেকের অনীহা ছিল। বর্তমানে সবাই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সচেতনতা সৃষ্টি আর সঠিক বাজারজাত করতে পারলে মাশরুম উৎপাদনে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ১০০ টাকা খরচে ৪০ টাকা আয় হয় বলে জানান তিনি। লাভজনক হওয়ায় আশে পাশের যুবকরা মাশরুম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠৈছেন।

বর্তমানে তার খামারে ২০-২৫ কেজি মাশরুম উৎপাদন হয়। আগামীতে ৫০০ কেজি কিংবা চাহিদার আলোকে আরো বাড়তি মাশরুম উৎপাদন করার ব্যাপারে আশাবাদী এ উদ্যোক্তা। এছাড়া মাশরুমকে ঘিরে বিদেশে রপ্তানি করে নিজের উন্নয়নের পাশাপাশি এবং গ্রামের বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে সরকারি সহায়তার দাবী জানান তিনি।

স্থানীয়রা বলছেন, দেলোয়ারেরর মাশরুমের খামার এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তার দেখাদেখি মাশরুম চাষে আগ্রহী উঠেছেন অনেকে।

এদিকে দেলোয়ারের এ উদ্যোগকে আরো সফল করতে তার স্ত্রী ও স্বজনরা সহযোগিতা করছেন। এছাড়া প্রতিবেশীরা শ্রম দিয়ে বাড়তি টাকাও আয় করছেন।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা সোহেল মো.

শামসুদ্দিন ফিরোজ জানান, জেলায় নতুন এ খাদ্যপণ্যকে ঘিরে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আগ্রহীদের পাশে আছে কৃষি বিভাগ। প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন এ কর্মকর্তা।

ঢাকা/লিটন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র কর ম

এছাড়াও পড়ুন:

গলার কাঁটা পানি শোধনাগার

বিয়ানীবাজার পৌরসভার গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে সেখানে স্থাপিত পানি শোধনাগার প্লান্টটি। দুই বছর ধরে পুষতে থাকা এই প্রকল্পকে কীভাবে লাভজনক প্রকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়, তার পথ খুঁজছেন সংশ্লিষ্টরা। পৌরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা এই পানি শোধনাগার প্লান্ট উদ্বোধন করা হয় ২০২৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। উদ্বোধনের পর এই প্রকল্প থেকে গত ২৬ মাসে এক টাকাও আয় করতে পারেনি পৌরসভা। উল্টো এই সময়ে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে মাসে ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করা হচ্ছে এর পেছনে। পৌর সূত্র মতে, ২৬ মাসে এ ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

দৈনিক ৪ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে স্থাপিত পানি শোধনাগারটির পানির প্রতি পৌরবাসীর কোনো আগ্রহই নেই। এখানে প্রাকৃতিকভাবে পানি সহজে আহরণ করা যায় বলে কৃত্রিম উৎসে পরিশোধিত পানির চাহিদা একেবারে নেই বললে চলে। যার কারণে শোধনাগারটি কোনো কাজেই আসছে না। উদ্বোধনের পর থেকে অকার্যকার হয়ে আছে এটি।

স্থানীয় পৌরবাসীর ভাষ্য, প্রাকৃতিকভাবে বিশুদ্ধ পানি প্রাপ্তির উৎস থাকায় শোধনাগারের পানির প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ নেই। যারা এসব প্রকল্পের কাজ করেন, তারা নিশ্চয় প্রতিটি স্থানের ভৌগোলিক অবস্থা সম্পর্কে জানেন। যেখানে স্বাভবাবিক উৎস থেকে পানি পাওয়া যাচ্ছে সহজে, সেখানে এমন একটি প্রকল্প যে অপরিকল্পিতভাবে করা– তা বোঝাই যায়। 

এদিকে পৌর কর্তৃপক্ষের বোঝায় পরিণত হওয়া এই প্রকল্পটিকে ঘিরে সৃষ্ট সমস্যা উত্তরণে এবং এটিকে আর্থিকভাবে লাভজনক প্রকল্পে পরিণত করার উপায় খুঁজছে পৌরসভা। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে পানি সরবরাহের পাইপলাইন সম্প্রসারণ করা বা পানি শোধনাগারটি লিজ দেওয়ার মতো বিষয় নিয়ে ভাবছে  কর্তৃপক্ষ।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, শোধনাগারটিতে উৎপাদিত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার লক্ষ্যে পৌরসভার আংশিক এলাকায় স্থাপন করা হয়েছিল ২২ কিলোমিটার পাইপলাইন। এ পাইপলাইন থেকে পৌর শহর, শহরতলি ও আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা কোনো সংযোগ নেননি। বাণিজ্যিক সংযোগ না থাকায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পুরো প্রক্রিয়াটি অকার্যকর হয়ে পড়েছে, যার কারণে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বাড়তি ব্যয়ের চাপ নিতে হচ্ছে পৌরসভাকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতেই টানাটানি তার ওপর বাড়তি ব্যয়। 

সিলেট বিভাগের ১৯টি পৌরসভার উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে বিয়ানীবাজার পৌরসভার পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হয় পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র আব্দুস শুকুরের সময়ে।

২০২০ সালের ২৩ অক্টোবর এ প্লান্ট স্থাপনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। সে সময় এ প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পৌর পরিষদের মাসিক আলোচনায় কয়েকজন কাউন্সিলর আপত্তি তুলেছিলেন। সে সময় তাদের আপত্তি আমলেই নেননি তৎক্ষালীন মেয়র আব্দুস শুকুর।

২০২৩ সালে শোধনাগারটিকে কার্যকর করতে পৌরসভার ২০০ পরিবারকে বিনামূল্যে পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেন সাবেক মেয়র ফারুকুল হক। তবে পৌরসভার সে উদ্যোগেও আগ্রহ দেখায়নি পৌরবাসী। যার কারণে উন্নয়নের নামে সরকারের ৯ কোটি টাকা গচ্চার পাশাপাশি পৌরসভা প্রতি মাসে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।

অকার্যকর হয়ে পড়ে থাকা পানি শোধনাগারটি বন্ধের সুযোগ নেই জানিয়ে পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মুস্তফা মুন্না বলেন, এটি স্থাপন করার আগে এর প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা, সেটি সেভাবে সার্ভে করা হয়নি, যার ফলে বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং পৌরসভা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এই পানি শোধনাগারটিকে লাভজনক খাতে নিয়ে আসতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেতে কাজ করা হচ্ছে। দৈনিক ৪ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার মতো প্রয়োজনীয় পাইপলাইন স্থাপন করা হয়নি। পুরো পৌরসভাকে পানি সরবরাহের আওতায় নিয়ে আসতে হলে অবশিষ্ট অংশে পাইপলাইন স্থাপন করতে ব্যয় হবে ৩ কোটি টাকা।

এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরও বলেন, পুরো পৌরসভায় পানির সরবরাহ লাইন স্থাপন করা গেলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে গভীর ও অগভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেবে বিএসইসি
  • গলার কাঁটা পানি শোধনাগার