আদিবাসী ভাষা সুরক্ষায় নতুন প্রতিশ্রুতি নিয়ে ঢাকায় দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষাদশক সম্মেলন ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউনেস্কোর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, জাবারাং এবং মালেয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আয়োজিত এই সম্মেলনে আদিবাসী নেতা, তরুণ প্রতিনিধি, গবেষক, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা ভাষার বৈচিত্র্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চাকমা সার্কেলের প্রধান ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায়, মং সার্কেলের প্রধান রাজা সাচিং প্রু চৌধুরী, বাংলাদেশ আদিবাসী জনগোষ্ঠী নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড বায়োডাইভারসিটির মহাসচিব গিডিসন প্রাধান সুচিয়াং, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড.

মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এবং ইউনেস্কো বাংলাদেশের প্রধান ড. সুসান ভাইজ।
সম্মেলনে ভাষা সংরক্ষণ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা, প্যানেল সেশন এবং মতবিনিময় হয়। সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল অফ রুটস অ্যান্ড হেরিটেজ: টেলস ফ্রম দ্য হিলস বইয়ের মোড়ক উন্মোচন। ইউনেস্কোর হুকড অন পিস প্রকল্পের আওতায় প্রকাশিত এই বইটিতে বিভিন্ন আদিবাসী ভাষায় গল্প তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি আদিবাসী বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আদিবাসী লেখকদের সাহিত্যকর্ম প্রদর্শন করা হয়। আলোচকরা বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ভাষা সংরক্ষণ সম্ভব। ভাষা শেখা ও সংরক্ষণের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও অনলাইন টুলস ব্যবহারের পাশাপাশি গল্প বলা, কবিতা ও আদিবাসী গণমাধ্যমকে ভাষাগত ঐতিহ্য রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করার ওপর জোর দেন আলোচকরা। জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় আদিবাসী ভাষার অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিও উঠে আসে আলোচনায়। ভাষা সুরক্ষায় নীতি নির্ধারণ, নতুন নতুন উদ্যোগ, তরুণদের সম্পৃক্ততা এবং বহু ভাষার শিক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করেন তারা। সম্মেলনে বক্তব্য দেন ল্যাঙ্গুয়েজ রিসোর্স হাবের সামার মাইকেল সরেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাশরুর ইমতিয়াজ ও মং সার্কেল প্রধানের কার্যালয়ের রানী উখেংচিং মারমা, ভারতের টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক ড. বিশ্বরঞ্জন ত্রিপুরা, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব গুজরাটের পিএইচডি ক্যান্ডিডেট অমরেশ দেববর্মা, নর্থ ইস্টার্ন হিল ইউনিভার্সিটির পিএইচডি শিক্ষার্থী থমাস মলসম, নওগাঁ সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক যোগেন্দ্রনাথ সরকার, জুম ইসথেটিক্স কাউন্সিল (জাক)-এর সভাপতি ঝিমিত ঝিমিত চাকমা, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্য ফিফা চাকমা। ইউনেস্কোর প্রতিনিধি লিন আং মোরো ও বারশা লেখি আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বাংলাদেশের আদিবাসী ভাষার বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন।
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার ৫০টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যারা ৪১টি ভাষায় কথা বলে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, দেশের প্রায় ১৫টি ভাষা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে আদিবাসী ভাষা 
রক্ষায় অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
‘অফ রুটস অ্যান্ড হেরিটেজ: টেলস ফ্রম দ্য হিল’ গ্রন্থটি ইউনেস্কোর দীর্ঘদিনের এক উদ্যোগের ফসল। জাপান সরকারের সহযোগিতায় হুকড অন পিস প্রকল্পের আওতায় ২০ জন চাকমা ও ত্রিপুরা তরুণ গল্পকারকে গল্প বলা ও সম্পাদনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে এই গল্পগুলোকে নিয়ে আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে ইউনেস্কো। এ প্রকল্পের প্রশিক্ষক লেখক-সম্পাদক সাংবাদিক রিফাত মুনিম মূল প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তী সময়ে রিফাত মুনিম বইটি বাংলাসহ ইংরেজি, ত্রিপুরা ও চাকমা ভাষায় অনুবাদ ও বইটির সম্পাদনার দায়িত্ব নেন। এই ২০ জন গল্পকারকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এবং ইউনেস্কো মিলে প্রকাশ করেন বইটি। v

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউন স ক র অন ষ ঠ

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ