হাঁটতে হাঁটতে তিতাস নদীর পাড় পর্যন্ত যেতেই কানে এলো মুড়ি ভাজার শব্দ। কয়েকজন নারী মুড়ি ভাজছেন। পুরাতন পদ্ধতিতে গরম বালুর সঙ্গে খোলায় ভাজা চালের স্পর্শে হাড়িতে মট-মট শব্দে ফুটে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু মুড়ি।

এখানে হাতে ভাজা মুড়ির মূল কারিগর অর্চনা দাস (৫৫)। 

অর্চনা দাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরশহরের পাইকপাড়া পাটগুদাম রোড দাস পাড়ার ঝান্টু দাসের স্ত্রী। ঝান্টু দাস পেশায় একজন মাছ ব্যবসায়ি। অর্চনা দাসের চার মেয়ে ও একজন ছেলে। চার মেয়েকেই দিয়েছেন বিয়ে এবং ছেলে এই বছর বিবিএ শেষ করেছে।

অর্চনা দাসের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই শাশুড়ি তরঙ্গ বালা দাস হাতে ভাজা মুড়ি ভাজতেন। শাশুড়ি আমাকে খুব ভালোবাসতেন। শাশুড়ির কাছাকাছি থাকতে থাকতে আমিও মুড়ি ভাজা শিখে ফেলেছি। শাশুড়ি ২০১৯ সালে মারা গেলে ছেলেমেয়েরা মুড়ি ভাজতে নিষেধ করেছিল কিন্তু শাশুড়ির ৫০ বছরের পেশাটাকে বাঁচিয়ে রাখতেই মুড়ি ভাজার দায়িত্বটা আমি কাঁধে নেই।”

মুড়ি ভাজতে উপকরণ হিসেবে তিনি বলেন, “হাতে ভাজা মুড়ি ভাজতে দেশি চাউল দিয়েও হয় তবে রমজান আসলে মুড়িগুলো সুন্দর করতে ‘শান্তি সিলভার’ নামে এক কোম্পানির চাউল আছে, সেটা ব্যবহার করি।  আমি চালগুলো লবণ পানি দিয়ে মেখে দেই। আমার ভাইয়ের মেয়ে সুলেখা দাস লবণ পানি দেওয়া চালগুলো তাওয়াতে ৪-৫ মিনিট গরম করে। তারপর আমার ভাসুরের ছেলের বউ বন্দনা দাস গরম বালুতে সেই চাউলগুলো ঢেলে চিকন কাঠি দিয়ে হাতে নাড়া দিলেই হয়ে যাচ্ছে হাতে ভাজা মুড়ি।”

অর্চনা দাস বলেন, “আমার শাশুড়ির বাড়িতে এসে আমি দেখেছি ১৯৯০ সালে এক কেজি মুড়ি ২৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতেন। এখন মুড়ি বিক্রি করি ১২০ টাকা দরে।” 

দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “এক বস্তা চালের দাম ৩৪০০ টাকা, লবণ লাগে ৩০ টাকা, রিকশাভাড়া ৩০ টাকা, ভাজা খরচ ১৪০ টাকা।  এক বস্তা চাউলে ৩৮ কেজি মুড়ি হয়। রমজান মাসে এক দিনে ৬০ কেজি মুড়ি বিক্রি করতে পারি। রমজান মাস ছাড়া ২৫ কেজি বিক্রি হয়।”

পাইকার ব্যবসায়িরা এক কেজি মুড়ি ৯৫ টাকা ধরে কিনে নিয়ে যায় পাইকাররা কেজি প্রতি ১২০ টাকা বিক্রি করেন।

প্রতিবেশি নিদু দাস বলেন, “আমরা ২০ বছর ধরে হাতে ভাজা মুড়ি বিক্রি করতাম। বর্তমানে শ্রমিক সংকটের কারণে পেশাটাকে ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের যা কাস্টমার ছিল এখন অর্চনা থেকে মুড়ি নিয়ে যায়। কেমিকেল মুক্ত হওয়ায় অনেকেই আসে মুড়ি নিতে। রমজান মাসে চাহিদা বেশি থাকে। আগে এখানে ১০টা পরিবারের মতো হাতে ভাজা মুড়ি তৈরি করতেন কিন্তু বর্তমানে লোকবল সংকটের কারণে এই পেশা থেকে মানুষ দূরে চলে গেছে।”

মুড়ি ক্রেতা ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি জাবেদ রহিম বিজন বলেন, “আমি ১০ বছর ধরে তাদের বাড়ি থেকে মুড়ি কিনি। সুস্বাদু ও কেমিকেল মুক্ত হওয়ায় আমার পরিবারের পছন্দ এই মুড়ি। দুই কেজি মুড়ি ২৪০ টাকা দিয়ে কিনেছি।”

কুমারশিল মোড়ের নিউ স্টোরের সত্ত্বাধিকারী হৃদয় রায় বলেন, “পাইকপাড়া থেকে হাতে ভাজা মুড়ি আমরা কিনে রাখি। হাতে ভাজা মুড়ি পুরাতন কাস্টমার যারা আছে তারা কিনে নিয়ে যায়। ক্যামিকেল মুক্ত হওয়ায় অনেকেই নিয়ে যায়।” 

ঢাকা/টিপু

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প
  • দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স