পিতা-মাতার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির জন্য তাদের মারধর বা ভাত-কাপড় না দেওয়ার খবর পত্রিকার পাতায় আসে প্রায়ই। হৃদয়বিদারক ও নির্মম এমন বহু ঘটনা যেমন চোখ ভিজিয়ে দেয়, তেমনি মেহেরপুর সদরের কুতুবপুর ইউনিয়নের কুলবাড়িয়া গ্রামের বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের ঘটনাটি বেশ আশা জাগায়। ১৬ ফেব্রুয়ারি সমকালে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা সংবাদটির শিরোনাম– সত্তরেও খুশি আর ধরে না। পরে মনে হলো যেন ঈদগাহ মাঠে বছরের একটি বোনাস ঈদ হয়েছে। নবীনদের আয়োজনে প্রবীণদের জন্য এমন ভালোবাসা সত্যিই বিরল।
প্রবীণদের পাশাপাশি সম্মান, শ্রদ্ধা, স্নেহ আর অফুরান ভালোবাসা জানাই কুলবাড়িয়া গ্রামের সেই তরুণদের। যারা দৃষ্টান্ত হতে পারেন দেশের কোটি কোটি তরুণ-তরুণীর কাছে। নিজের মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধা আর সম্মানবোধ থেকেই অন্য বাবা-মাকে একটু শ্রদ্ধা জানানোর ধারণাটা অসাধারণ। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু তুলনামূলক বেশি। আমাদের দেশে সরকারি হিসাবে ৬৫ বছরের বেশি মানুষ প্রবীণ বা সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে গণ্য। ২০২৪ সালের সর্বশেষ তথ্যমতে, দেশর মানুষের গড় আয়ু ৭২.
দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে শতাধিক প্রবীণ নিবাস আছে। কিছু মহৎ মানুষের উদ্যোগে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও হয়েছে মেডিকেল সেবাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে। কিন্তু কথা হলো, মেহেরপুরের তরুণরা যা করেছে তা কি নতুন মডেল হতে পারে না সারাদেশের জন্য? বছরের কোনো নির্দিষ্ট দিনে এক একটি এলাকার তরুণ-তরুণীরা একসঙ্গে হয়ে তাদের স্থানীয় প্রবীণদের নিয়ে আনন্দে দিন কাটাতে পারেন না? এখন কর্মক্ষেত্রে এসে ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে শৈশবে ফেলে আসা স্কুলশিক্ষক, বাড়ির পাশের চায়ের দোকানি, স্কুলের সামনের চানাচুর বিক্রেতা, বাড়ির কাজের লোক বা প্রতিবেশী কাকা-কাকি, দাদা-দাদি যাদের বাগানের আম, লিচু বা কুলগাছে ঢিল দিয়েছেন এক সময়, তাদের জন্য বছরের একটি দিন হতে পারে না? আমাদের তারুণ্যের উত্তাল সাগরে তাদের জেঁকে ধরা বয়সের ভিড়কে একদিন হারিয়ে দিলে মন্দ হয় না তো। তাদের কাছ থেকে আগেভাগেই আমরা হয়তো এই জীবনের অভিজ্ঞতাও আগাম অর্জন করতে পারি, যা তারা পেছনে ফেলে এসেছেন।
পাশাপাশি সমাজ ও দেশের কল্যাণেই আমাদের প্রবীণদের দিকে এখনই আরও সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। শুধু বৃদ্ধাশ্রম বা প্রবীণ নিবাস নামের যন্ত্রণার সাগরে না ভাসিয়ে পরিবারের প্রবীণদের রাখতে হবে নিজের পরিবারের সঙ্গেই। মনে করুন, আপনার স্ত্রী বা স্বামী দু’জনই চাকরিজীবী। নিয়ম করে অফিসে যান এবং বাসায় ফেরেন। তখন আপনার সন্তান কিন্তু বেড়ে উঠছে কাজের লোকের কাছে। কিন্তু এই জায়গায় যদি আপনার বাবা-মা বাসায় থাকেন; দাদা-দাদি হিসেবে শিশুটি আপনজনকে পাশে পাবে। আপনার বাবা-মা আপনাকে যে শিক্ষা দিয়েছে, সেই পারিবারিক শিক্ষাগুলো আপনার সন্তানও পাবে। শহর বা কর্মক্ষেত্র থেকে আপনার গ্রাম যদি হয় নিরাপদ দূরত্বে তাহলে সন্তানকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গ্রামীণ পরিবেশেও রাখতে পারেন। যাতে সে দাদা-দাদি বা নানা-নানির কাছ থেকে পরিবারিক শিক্ষা পেল; ইট-কাঠের জঞ্জালের নগর ছেড়ে গ্রামকেও চিনল।
কুলবাড়িয়ায় তরুণ-যুবাদের আয়োজনে ‘মুরব্বিদের মিলনমেলা’ প্রবীণদের সম্মানের এক আয়োজন। সেখানে সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার আলাপ হয় চেনাজনের সঙ্গে; অচেনা সমবয়সী মানুষের সঙ্গে আলাপ হয় সংসার-সংকটের। সেটাও তো কম প্রাপ্তি নয়। প্রবীণদের সম্মান জানিয়ে এমন আয়োজন ছড়িয়ে পড়ুক দেশের সর্বত্র।
মো. আবু সাঈদ: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রব ণ র জন য আপন র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
অ্যালিস্টারের একমাত্র গোলে রিয়ালকে হারাল লিভারপুল
অ্যনফিল্ডের আলো-ঝলমলে এক রাতে ইউরোপের দুই পরাশক্তির লড়াইয়ে জয় ছিনিয়ে নিল লিভারপুল। একমাত্র গোলটি এসেছে দ্বিতীয়ার্ধে, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারের পক্ষ থেকে। তার সেই গোলেই মঙ্গলবার (০৪ নভেম্বর) দিবাগত রাতে রিয়াল মাদ্রিদকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে গুরুত্বপূর্ণ তিন পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে ‘দ্য রেডসরা’।
অবশ্য রিয়াল ভাগ্যবান যে হারের ব্যবধান আরও বড় হয়নি। কারণ তাদের প্রাচীর হয়ে ছিলেন থিবো কোর্তোয়া। পুরো ম্যাচ জুড়ে লিভারপুলের একের পর এক আক্রমণ ঠেকিয়ে রেখেছিলেন এই বেলজিয়ান গোলরক্ষক।
ম্যাচের শুরু থেকেই লিভারপুল ছিল আগ্রাসী মেজাজে। কোচ আর্নে স্লট আগের ম্যাচের মতো প্রায় একই দল মাঠে নামান। শুধু এক পরিবর্তন ছিল শুরুর একাদশে। ফ্লোরিয়ান ভার্টজ জায়গা নেন কোডি গ্যাকপোর পরিবর্তে। শুরুতেই ভার্টজের পাস থেকে দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন দমিনিক সোবোস্লাই। কিন্তু খুব কাছ থেকে নেওয়া তার শট ঠেকিয়ে দেন কোর্তোয়া।
রিয়ালের ভাগ্য আরও একবার রক্ষা পায় যখন ভিএআর দেখায় যে অরেলিয়েন চুয়ামেনির হাতে লেগে যাওয়া বলটি ইচ্ছাকৃত নয়। এরপর সোবোস্লাই আবারও ভয়ংকর এক শটে কোর্তোয়াকে পরীক্ষা নেন। তবে গোলরক্ষক ছিলেন অনড়।
রিয়ালও কিছু সুযোগ তৈরি করেছিল। কিন্তু কিলিয়ান এমবাপ্পে তার সাধারণ মানের অনেক নিচে ছিলেন। ১৭ ম্যাচে মাত্র দুইবার গোলবঞ্চিত থাকা ফরাসি তারকা এবার পোস্টের বাইরে শট নেন। প্রথম ৪৫ মিনিটে রিয়ালের প্রথম অনটার্গেট শট আসে জুড বেলিংহ্যাম থেকে। যা সহজেই ঠেকিয়ে দেন লিভারপুল গোলরক্ষক জিওর্গি মামারদাশভিলি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই লিভারপুল ঝাঁপিয়ে পড়ে। কোর্তোয়া তখন যেন একাই রিয়ালের রক্ষাকবচ। তিনি ভার্জিল ফন ডাইক, হুগো একিতিকে ও সোবোস্লাইর হেড ঠেকিয়ে দেন টানা তিনবার। কিন্তু ৬০ মিনিটে এসে ভেঙে যায় তার সেই প্রতিরোধ। সোবোস্লাইয়ের ফ্রি কিক থেকে উঠে আসা বলটিতে দুর্দান্ত হেডে জালে পাঠান অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার। আর অ্যানফিল্ডে গর্জে ওঠে হাজারো দর্শক।
দীর্ঘ ইনজুরির পর ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আর্নল্ড মাঠে নামেন শেষদিকে। ১৬ সেপ্টেম্বরের পর এটাই তার প্রথম ম্যাচ। যদিও লিভারপুল সমর্থকরা তাকে বিদ্রূপের সুরে অভ্যর্থনা জানায়। ম্যাচের আগে তার নামে থাকা অ্যানফিল্ডের পাশের দেয়ালে আঁকা মুরালটি ভাঙচুরের খবরও ছড়িয়ে পড়ে।
অন্যদিকে, ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন তরুণ কনর ব্র্যাডলি। এর ফলে এই প্রথমবারের মতো এই মৌসুমে গোলশূন্য থাকে রিয়াল মাদ্রিদ।
শেষ মুহূর্তে গ্যাকপোর শটও কোর্তোয়া ঠেকিয়ে দেন। কিন্তু লিভারপুলের রক্ষণের দৃঢ়তা এবার অটুট ছিল। ফলাফল চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথম ক্লিন শিট এবং মর্যাদাপূর্ণ এক জয়।
ম্যাচ শেষে ম্যাক অ্যালিস্টার বলেন, “এটা ছিল দারুণ এক জয়, সত্যি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমরা জানি, এটাই শেষ নয়। গত মৌসুমেও আমরা প্রথম ধাপ ভালোভাবে শেষ করেছিলাম। কিন্তু পরে দ্রুতই বিদায় নিয়েছিলাম। এবার তাই সতর্ক থাকতে হবে।”
অন্যদিকে, রিয়াল গোলরক্ষক কোর্তোয়া বলেন, “আমরা অনেক ভুল করেছি। বিশেষ করে বক্সের কাছাকাছি। এমন ম্যাচ ছোট ছোট ভুলেই নির্ধারিত হয়ে যায়। বড় দলের বিপক্ষে আমাদের আরও ঠান্ডা মাথায় খেলতে হবে।”
চার ম্যাচ শেষে লিভারপুল ও রিয়াল দু’দলই এখন নয় পয়েন্টে সমান। তবে আজকের জয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে লিভারপুল। দীর্ঘ ছয় ম্যাচে ছয় হারের পর টানা দ্বিতীয় জয়। যা তাদের মৌসুমে নতুন মোড় আনতে পারে।
ঢাকা/আমিনুল