বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার রেকর্ড পরিমাণ ছোট করা হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল এডিপি থেকে ব্যয় কমানো হয়েছে ১৮ শতাংশ। পরিমাণে কমানো হয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। এতে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। মূল এডিপি ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কােটি টাকার। ইতোপূর্বে কখনও এত বেশি হারে এডিপি কাটছাঁট হয়নি।

গতকাল সোমবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে আরএডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.

মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন। উপদেষ্টা পরিষদের সব সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। 
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে আরএডিপির বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এনইসি বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা প্রসঙ্গে তিনি জানান, সব প্রকল্প ইএমআইএস সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এতে কোন প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতির কী অবস্থা, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানা যাবে। যদি কোনো প্রকল্পের হালনাগাদ তথ্য না থাকে তাহলে অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় করবে না। এ ছাড়া প্রকল্প গ্রহণের পরিবেশের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। 
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ‘আগে কীভাবে পরিবেশ অধিদপ্তরের না মতকে হ্যাঁ করা হতো, সেটি আমরা সবাই জানি। এমনকি বাড়ি করতেও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দিতে অনিয়ম হয়েছে। সেগুলো এখন কঠোরভাবে দেখা হবে।’ 

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পেনশনের ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে জানিয়ে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বিষয়টির একটা সুরাহার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার (আধা সরকারিপত্র) দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, দুর্নীতির কারণে এ মন্ত্রণালয়ের অনেক প্রকল্প বন্ধও করা হয়েছে।
আরএডিপির এত বড় কাটছাঁটের ব্যাখ্যায় ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘চলতি অর্থবছর আমরা চাইছি আরএডিপি ছোট থাকুক। কারণ অনেক বড় বরাদ্দ দিয়ে ব্যয় করতে না পারলে সেটি ভালো দেখায় না। সেই সঙ্গে আগামী অর্থবছরের বাজেট ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আগে থেকেই রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় ঘাটতি বেশি রেখে বরাদ্দ দেওয়া হবে না।’ 
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, অনুমোদিত আরএডিপি বরাদ্দের মধ্যে রয়েছে সরকারের নিজস্ব তহবিলের অংশ ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশের ঋণ থেকে ৮১ হাজার কোটি টাকা। মূল এডিপিতে প্রকল্প ছিল ১ হাজার ৩৫২টি। সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্প সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৩৭টি। এ ছাড়া অননুমোদিত নতুন প্রকল্প কমে হয়েছে ৭৭০টি, যা মূল এডিপিতে ছিল ৯১০টি।  
সংশোধিত এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া পাঁচটি খাতের মধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগে ৪৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ৩১ হাজার ৮৯৭ কোটি, শিক্ষায় ২০ হাজার ৩৪৯ হাজার কোটি, গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধায় ১৯ হাজার ৬৫৩ কোটি এবং স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৬ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 
মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ (৩৬ হাজার ১৫৮ কোটি  টাকা)। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ বিভাগ (২১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা)। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে (১৮ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা)।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এড প বর দ দ দ প রকল প সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে বিদেশি ঋণ শোধ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়াল

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ ৩২১ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের প্রায় সমান। গত অর্থবছরে (২০২৩–২৪) মোট ৩৩৭ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে। এর মানে হলো, এবার প্রথম ৯ মাসেই গত অর্থবছরের কাছাকাছি ঋণ পরিশোধ হয়ে গেছে।

আজ বুধবার বিকেলে প্রকাশিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তৈরি জুলাই–মার্চ মাসের বিদেশি ঋণ পরিস্থিতির হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। সেখানে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধের এই তথ্য পাওয়া গেছে।

ইআরডির তথ্য অনুসারে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) দেশে মোট প্রায় ৪৮১ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি ঋণ এসেছে। এ সময়ে ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হয়েছে অর্থছাড়ের প্রায় দুই–তৃতীয়াংশের সমান।

অন্যদিকে আলোচ্য ৯ মাসে বিদেশি ঋণ বাবদ পরিশোধের মধ্যে আসলের পরিমাণ ২০১ কোটি ডলার। আর সুদ বাবদ ১২০ কোটি ডলার পরিশোধ হয়েছে। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২৫৭ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে ৬৪ কোটি ডলার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে।

এদিকে গত জুলাই–মার্চ সময়ে ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ, যা গতবারের একই সময়ে পাওয়া প্রতিশ্রুতির অর্ধেকের কম। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৭২৪ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল।

জুলাই–মার্চ সময়ে সবচেয়ে বেশি ১২২ কোটি ডলার ছাড় করেছে এডিবি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ১০৭ কোটি ডলার ও জাপান ৮৯ কোটি ডলার দিয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশ
  • চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে বিদেশি ঋণ শোধ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়াল
  • তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফা কমেছে স্কয়ার ফার্মার
  • ৯ মাসে ১৪ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা
  • শিক্ষার মানোন্নয়নে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন
  • ২০২৭ সালের জুনের পর ‘করছাড়’ থাকবে না
  • ৯ মাসে ৪,৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা ওয়ালটনের
  • যমুনা অয়েলের মুনাফা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ