উৎপাদন ও সেবা খাতের ৫৭ কোম্পানি লোকসানে
Published: 3rd, March 2025 GMT
ভালো ব্যবসা করতে পারছে না উৎপাদন ও সেবা খাতের দেশীয় কোম্পানি। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এমন ২৩০ কোম্পানির মধ্যে গত বছরের শেষ ছয় মাসে ৫৭টি লোকসান করেছে, যার ৩৯টি আগের বছরেও লোকসানে ছিল। এর বাইরে ৪৫ কোম্পানি নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পরও আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। ধারণা করা হচ্ছে, এসব কোম্পানিও লোকসানে।
এদিকে ১২৮টি কোম্পানি গত বছরের শেষ ছয় মাসে বা দুই প্রান্তিক মিলে নিট মুনাফা করেছে, যার মধ্যে ৭৯টির মুনাফা আগের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে। তবে মুনাফা করা কোম্পানির মধ্যে শেয়ারপ্রতি ৫০ পয়সা মুনাফাও হয়নি এমন কোম্পানি ৫১টি। আবার ৪৮টির মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে।
গতকাল পর্যন্ত ঢাকার শেয়ারবাজার ডিএসইতে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি ২০২৪ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাদের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে। বর্তমানে ডিএসইর মূল প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ৩৬০টি। এর মধ্যে ২৪৩টি উৎপাদন ও সেবা খাতের, যাদের হিসাব বছর শেষ হয় জুনে। বাকি ১৩টি বহুজাতিক কোম্পানি, যাদের হিসাব বছর শেষ হয় ডিসেম্বরে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে মুনাফা করার পরও ১৮টি কোম্পানি চলতি হিসাব বছরের প্রথম ছয় মাসে লোকসান করেছে। এগুলো হলো– ইনফরমেশন সার্ভিসেস, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার, ল্যুব-রেফ, ইনটেক, ওরিয়ন ফার্মা, ইভিন্স টেক্সটাইল, আমরা টেকনোলজিস, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার, দেশবন্ধু পলিমার, শাইনপুকুর সিরামিক, সি পার্ল হোটেল, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, ইস্টার্ন কেবলস, বেক্সিমকো লিমিটেড, জেমিনি সি ফুডস, বসুন্ধরা পেপার, তিতাস গ্যাস এবং মেঘনা পেট্রোলিয়াম।
আগের হিসাব বছরের একই সময়ে লোকসান করার পর চলতি হিসাব বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালে মুনাফা করেছে ১০ কোম্পানি। এসব কোম্পানি হলো– পাওয়ার গ্রিড, ফারইস্ট নিটিং, আরামিট লিমিটেড, এস্কোয়ার নিট, শেফার্ড, দুলামিয়া কটন, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, স্টাইল ক্রাফট, জিবিবি পাওয়ার ও লিগ্যাসি ফুটওয়্যার।
লোকসান যাদের বেশি
চলতি হিসাব বছরের প্রথম ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি লোকসান করেছে বেক্সিমকো লিমিটেড। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের বিপরীতে এর লোকসান ৩ টাকা ৭৮ পয়সা। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় ৩৪০ কোটি টাকা। অথচ আগের হিসাব বছরের একই সময়ে প্রায় পৌনে ৩ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। একই গ্রুপভুক্ত শাইনপুকুর সিরামিক কোম্পানি শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৩৫ পয়সা বা টাকার অঙ্কে নিট প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান করেছে, যেখানে আগের বছর একই সময়ে ২৯ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল।
মেঘনা সিমেন্টও এবার বড় লোকসান করেছে। আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি ৩০ পয়সা মুনাফা করেছিল। এ বছর ১০ টাকার শেয়ারের বিপরীতে ৯ টাকা ৪৭ পয়সা হারে লোকসান করেছে বলে জানিয়েছে। লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। বড় লোকসানের তালিকায় আছে এপেক্স ট্যানারি, এসিআই লিমিটেড, তিতাস গ্যাস, বসুন্ধরা পেপার, বিডি ল্যাম্পস, জেমিনি সি ফুডস, এইচআর টেক্সটাইল, ইস্টার্স কেবলস ইত্যাদি। কমপক্ষে ১ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৭ টাকা লোকসান করেছে ২৭ কোম্পানি।
মুনাফায় থাকা কোম্পানি
শেয়ারপ্রতি কমপক্ষে ১ টাকা মুনাফা করা কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইসেস। কোম্পানিটি জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালে শেয়ারপ্রতি নিট ১ টাকা ৭১ পয়সা মুনাফা করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ১৫ পয়সা। ফাইন ফুডসের মুনাফা ৩৮ পয়সা থেকে ১ টাকা ৮১ পয়সায়, মতিন স্পিনিংয়ের ৫৮ পয়সা থেকে ২ টাকা ৬১ পয়সায়, ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের ৫ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১৭ টাকা ৫৯ পয়সায়, লাভেলোর ৫৭ পয়সা থেকে ১ টাকা ৫২ পয়সায় এবং এনভয় টেক্সটাইলের ১ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৫৮ পয়সায় উন্নীত হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র বছর র একই সময় র হ স ব বছর হ স ব বছর র ড স ম বর ছয় ম স পয়স য়
এছাড়াও পড়ুন:
সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’
মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’
২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’
মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।
শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।