মিয়ানমারের ‘হাতি কূটনীতির’ প্রশংসা করলেন পুতিন
Published: 5th, March 2025 GMT
মিত্র মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও সম্প্রসারণের প্রশংসা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গতকাল মঙ্গলবার মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ প্রশংসা করেন তিনি। মস্কোকে ছয়টি হাতি উপহার দেওয়ার জন্য তিনি হ্লাইংকে ধন্যবাদ দেন।
সামরিক বিশ্লেষকেরা এ উপহারকে ‘হাতি কূটনীতি’ বলেছেন। তাঁদের মতে, ঠিক একই সময়ে মিয়ানমারকে ছয়টি যুদ্ধবিমান সরবরাহ করেছে রাশিয়া। সেই যুদ্ধবিমানগুলো ইতিমধ্যে মিয়ানমারে পৌঁছে গেছে।
শান্তিতে নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চির দলের সরকারকে উৎখাত করে ২০২১ সালে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।
ক্রেমলিনের ওই বৈঠকে মিয়ানমারের প্রধানমন্ত্রী মিন অং হ্লাইংকে পুতিন বলেছেন, ‘এ বছর আমরা আমাদের দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরের ২৫তম বার্ষিকী উদ্যাপন করছি। এখন পর্যন্ত আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে।’
এ সময় পুতিন দুই দেশের মধ্যে গত বছর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৪০ শতাংশ বৃদ্ধির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
এবারের বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে একটি চুক্তি সই হয়েছে। রাশিয়া মিয়ানমারে ছোট আকারের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে চায়।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি কোম্পানি ‘রোসাটম’ থেকে বলা হয়েছে, এ কেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ১০০ মেগাওয়াট হবে এবং এর উৎপাদনক্ষমতা তিন গুণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
আগামী ৯ মে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয়ের ৮০তম বার্ষিকী উদ্যাপন করবে রাশিয়া। সেদিন মিয়ানমারের একটি সামরিক দল মস্কোয় কুচকাওয়াজে অংশ নেবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন পুতিন। মিন অং হ্লাইংও সেদিন কুচকাওয়াজে থাকবেন।
চীনের মতো রাশিয়াও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে সমর্থন করে এবং এ সহযোগিতা দিন দিন আরও বাড়ছে।
বৈঠকের শেষে পুতিন বলেছেন, ‘আপনার খুবই উষ্ণ উপহারের জন্য আমি আপনাকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারছি না। আপনি গত বছর আমাদের জন্য ছয়টি হাতি এনেছিলেন। সেগুলোকে মস্কো চিড়িয়াখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
জবাবে মিন অং হ্লাইং তাঁর দেশে রাশিয়ার পাঠানো সামরিক যন্ত্রাংশের মানের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে তিনি রাশিয়াকে সমর্থন করেন এবং বিশ্বাস করেন, মস্কো দ্রুতই সেখানে বিজয় অর্জন করবে।
মিন অং হ্লাইংয়ের বয়স ৬৮ বছর। তিনি খুব একটা বিদেশ সফরে যান না। রাশিয়া সফরে গতকাল মঙ্গলবার তিনি মস্কোয় পৌঁছান। প্রেসিডেন্ট পুতিনের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের একজন সের্গেই শোইগু তাঁকে স্বাগত জানান।
মিন অং হ্লাইংয়ের জান্তা সরকার এ বছর মিয়ানমারে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে। যদিও সমালোচকেরা নির্বাচন আয়োজনকে প্রক্সির মাধ্যমে জেনারেলদের ক্ষমতায় রাখার একটি প্রহসন বলে উপহাস করেছেন।
আরও পড়ুনমিয়ানমারে চীনবিরোধী মনোভাব কেন বাড়ছে০৬ নভেম্বর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’