ছাত্রলীগ-শিবির দিয়ে বৈষম্যবিরোধীদের নতুন কমিটি গঠনের অভিযোগ
Published: 7th, March 2025 GMT
ছাত্রলীগ ও ছাত্র শিবিরের একাধিক নেতাকর্মীকে নেতৃত্ব দিয়ে রাজারহাট উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি ঘোষণার অভিযোগ করেছেন ওই সংগঠনটির আগে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসা নেতাকর্মীরা। এঘটনায় তারা নতুন কমিটি প্রত্যাখান করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সভাপতি আব্দুল আজিজ নাহিদ ও সদস্য সচিব ফয়সাল আহমেদ সাগরের সই করা ৪২ সদস্য বিশিষ্ট রাজারহাট উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপরপরই উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরে বৃহস্পতিবার রাতেই রাজারহাট উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা রাজারহাট প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করেন, রাজারহাট উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটিতে রংপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবু মো.
এছাড়া মাহিম, হাসিব, ইমন, জিসান, মামুনুর রশিদ এবং খোকন মিয়াসহ ছাত্রলীগ ও ছাত্র শিবিরের ২৫ থেকে ৩০ জন নেতাকর্মীকে রাজারহাট উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
তারা দাবি করেন, নতুন কমিটিতে যাদেরকে পদ-পদবি দেওয়া হয়েছে, তাদের অধিকাংশই জুলাই আন্দোলনে ছিলেন না, অথবা খুবই গৌণ ভূমিকায় ছিলেন। অথচ যারা জানবাজি রেখে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন সদ্য গঠিত কমিটিতে তারা মারাত্মকভাবে উপেক্ষিত হয়েছেন। ফলে এই কমিটিতে জুলাই আন্দোলনের আদর্শিক ও নৈতিক দিকগুলোর প্রতিফলন ঘটেনি এবং এই কমিটি জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে স্পষ্টত বিশ্বাস ঘাতকতা বলেও তারা দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলন বক্তব্য লিখিত পাঠ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ব কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও নব্য ঘোষিত কমিটির সদস্য সচিব আল মিজান মাহিন। এসময় জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক ফেরদৌস আহমেদ স্বচ্ছ, সদ্য ঘোষিত উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মর্তূজা কবির হৃদ্য, নতুন কমিটির সংগঠক জাকি হোসাইন, যুগ্ম সদস্য সচিব মুনতাসির আহমেদসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব ফয়সাল আহমেদ সাগর বলেন, ওই কমিটিতে আমি স্বাক্ষর করিনি, আমার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ নাহিদ বলেন, বিভিন্ন দল থেকে বেরিয়ে এসে অনেকেই জুলাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন, সেক্ষেত্রে পূর্বের দলীয় পরিচয় বিবেচ্য নয়। জেলা কমিটির সবার সম্মতিতেই এই কমিটি করা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন ত কর ম কম ট র কম ট ত আহম দ
এছাড়াও পড়ুন:
কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা
জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।
এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।
আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?
উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’
আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।