ছাত্রলীগ ও ছাত্র শিবিরের একাধিক নেতাকর্মীকে নেতৃত্ব দিয়ে রাজারহাট উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি ঘোষণার অভিযোগ করেছেন ওই সংগঠনটির আগে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসা নেতাকর্মীরা। এঘটনায় তারা নতুন কমিটি প্রত্যাখান করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সভাপতি আব্দুল আজিজ নাহিদ ও সদস্য সচিব ফয়সাল আহমেদ সাগরের সই করা ৪২ সদস্য বিশিষ্ট রাজারহাট উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপরপরই উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরে বৃহস্পতিবার রাতেই রাজারহাট উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা রাজারহাট প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করেন, রাজারহাট উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটিতে রংপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবু মো.

হাছান মেহেদিকে মুখ্য সংগঠক, উপজেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি সুজন ইসলামকে যুগ্ম আহ্বায়ক, উপজেলা ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি মাইদুল ইসলামকে যুগ্ম আহ্বায়ক, রাজারহাট উপজেলা ছাত্র শিবিরের অফিস সম্পাদক মাহিন ইসলামকে যুগ্ম আহ্বায়ক, ছাত্র শিবির নেতা তোফায়েল ইসলামকে আহ্বায়ক করা হয়েছে।

এছাড়া মাহিম, হাসিব, ইমন, জিসান, মামুনুর রশিদ এবং খোকন মিয়াসহ ছাত্রলীগ ও ছাত্র শিবিরের ২৫ থেকে ৩০ জন নেতাকর্মীকে রাজারহাট উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।

তারা দাবি করেন, নতুন কমিটিতে যাদেরকে পদ-পদবি দেওয়া হয়েছে, তাদের অধিকাংশই জুলাই আন্দোলনে ছিলেন না, অথবা খুবই গৌণ ভূমিকায় ছিলেন। অথচ যারা জানবাজি রেখে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন সদ্য গঠিত কমিটিতে তারা মারাত্মকভাবে উপেক্ষিত হয়েছেন। ফলে এই কমিটিতে জুলাই আন্দোলনের আদর্শিক ও নৈতিক দিকগুলোর প্রতিফলন ঘটেনি এবং এই কমিটি জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে স্পষ্টত বিশ্বাস ঘাতকতা বলেও তারা দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলন বক্তব্য লিখিত পাঠ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ব কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও নব্য ঘোষিত কমিটির সদস্য সচিব আল মিজান মাহিন। এসময় জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক ফেরদৌস আহমেদ স্বচ্ছ, সদ্য ঘোষিত উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মর্তূজা কবির হৃদ্য, নতুন কমিটির সংগঠক জাকি হোসাইন, যুগ্ম সদস্য সচিব মুনতাসির আহমেদসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব ফয়সাল আহমেদ সাগর বলেন, ওই কমিটিতে আমি স্বাক্ষর  করিনি, আমার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ নাহিদ বলেন, বিভিন্ন দল থেকে বেরিয়ে এসে অনেকেই জুলাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন, সেক্ষেত্রে পূর্বের দলীয় পরিচয় বিবেচ্য নয়। জেলা কমিটির সবার সম্মতিতেই এই কমিটি করা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন ত কর ম কম ট র কম ট ত আহম দ

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ