দু’দিনেও জ্ঞান ফেরেনি শিশুটির, হাসপাতালে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা
Published: 7th, March 2025 GMT
হাসপাতালের বিছানায় চিকিৎসা চলছে আট বছরের শিশুর। কথা বলছে না, নড়াচড়াও নেই। অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছে সে। মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছে ধর্ষণের শিকার এই শিশুটি। আর তার পাশে বসে কাঁদছেন মা। সন্তানের এই অবস্থায় তিনি যেন পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষ। এক হাত দিয়ে মেয়ের মাথা স্পর্শ করছেন, আরেক হাতে নিজের চোখের পানি মুছছেন। মেয়ের করুণ অবস্থা দেখে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। এই দৃশ্য শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের। ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (পিআইসিইউ) রাখা হয়েছে। গত তিন দিনেও তার জ্ঞান ফেরেনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে।
আট বছরের ছোট্ট এই শিশুটি গত বুধবার গভীর রাতে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে বাড়িতে ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রধান অভিযুক্ত বোনের শ্বশুর হিটু শেখ (৪৭) ও স্বামী সজিব শেখকে (১৮) আটক করেছে পুলিশ। এদিকে শিশুকে ধর্ষণের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে মাগুরার সাধারণ মানুষ। অভিযুক্তের শাস্তির দাবিতে শুক্রবার দুপুরে শহরে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল হয়। পরে তারা মাগুরা সদর থানা ঘেরাও করে।
গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে শিশুটি অচেতন অবস্থায় রয়েছে। শুক্রবার রাত ১০টায়ও তার জ্ঞান ফেরেনি।
স্বজন জানান, শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এই হাসপাতালেও তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। ফলে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি ইউনিটের একজন চিকিৎসক বলেন, শিশুটির জ্ঞান ফেরেনি। তার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। চিকিৎসা চলছে।
মাগুরা সদর থানার ওসি আইয়ুব আলী বলেন, মাগুরা শহরতলির নিজনান্দুয়ালী গ্রামে আট বছরের শিশু ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় পুলিশ সন্দেহজনকভাবে শিশুটির ভগ্নিপতি সজিব শেখ ও তার বাবা হিটু শেখকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেয়নি। ফলে মামলা হয়নি।
শিশুটির স্বজন জানান, তার বাবা ভ্যানচালক। তাদের বাড়ি মাগুরায়। মাস চারেক আগে শিশুর বড় বোনের বিয়ে হয় মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামের রাজমিস্ত্রি হিটু শেখের ছেলে সজিব শেখের সঙ্গে। সজিবও রাজমিস্ত্রি। কিছুদিন আগে শিশুটির বোনের বাড়িতে বেড়াতে যায়। সে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।
শুক্রবার দুপুরে ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ২২৩ নম্বর ওয়ার্ডে (পিআইসিইউ) শিশুটির পাশে বসেছিলেন তার মা। কাঁদতে কাঁদতে ওয়ার্ডের গেটের সামনে অবস্থান করা স্বজনদের কাছে আসেন। তখনও কাঁদছিলেন। কাঁদতে কাঁদতে এক স্বজনকে ধরে বলেন, আমার মেয়ে কথা বলছে না। ডাকলেও সাড়া দিচ্ছে না। মেয়ের কী হবে? ওদের ফাঁসি চাই।
তিনি বলেন, তাঁর বড় মেয়ে তাঁকে জানান, শ্বশুরবাড়িতে রাতে তার ভয় লাগে। এ জন্য ছোট বোনকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যেতে চায়। তার আবদারের মুখে গত শনিবার ছোট মেয়েকে বড় মেয়ের সঙ্গে পাঠিয়ে দেন। কিছুদিন থাকার পর বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। বুধবার রাতে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়। পরে গলায় কিছু পেঁচিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।
শিশুটির মামাতো ভাই বলেন, বুধবার গভীর রাতে তাকে ধর্ষণ করে তারই দুলাভাইয়ের বাবা হিটু শেখ। এ ঘটনা তার বড় বোন দেখে ফেলায় তাঁকে ঘরে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করে তাঁর শ্বশুর ও স্বামী। এ ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্যও হুমকি দেওয়া হয়। তাঁর কাছে মোবাইল ফোন না থাকায় তিনি বিষয়টি মা-বাবাকে জানাতে পারেননি। শিশুটির প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়। এ অবস্থায় তাকে রাতে বাড়িতেই রাখা হয়। অবস্থার অবনতি হলে পরদিন সকালে সজিবের মা তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে শিশুটি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে রেখে পালিয়ে যান তাঁর শাশুড়ি। পরে হাসপাতাল থেকে সংশ্লিষ্ট থানায় খবর দেওয়া হয়। এর পর সংবাদ পেয়ে শিশুটির মাসহ স্বজন ছুটে যান হাসপাতালে।
মাগুরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডা.
শিশুটির মামাতো ভাই বলেন, তাঁর ফুফাতো বোনের গলায় ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। কিছু জায়গায় আঁচড়ের দাগ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।
স্বজনরা জানান, বিয়ের মাসখানেক পরে শিশুটির বড় বোনকেও পাশবিক নির্যাতনের চেষ্টা করেছিলেন তাঁর শ্বশুর হিটু শেখ। কিন্তু মেয়ের বাবা দরিদ্র হওয়ায় বিষয়টি জানার পরও চুপ ছিলেন। বড় বোনও শুক্রবার ঢামেক হাসপাতালে এসেছিলেন। তবে বিকেলে তাঁকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ, থানা ঘেরাও
শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর মাগুরা শহরে বিক্ষোভ করেছেন কয়েকশ স্থানীয় জনতা। এ সময় তারা সদর থানা ঘেরাও করে। থানার ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। শুক্রবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে শিশুটি মারা গেছে। এ কারণেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন স্থানীয় লোকজন।
মাগুরা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সজিব শেখের কথায় বেশ অসংলগ্নতা পাওয়া গেছে। বাবা-ছেলে দু’জনকেই জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আটক শ ক রব র দ প র অবস থ য় বড় ব ন এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন
প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।
শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।
আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেনরাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।
দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।
২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।
আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।
সূত্র: এনবিসি নিউজ
আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫