আদালতের নির্দেশনার পরও কমছে না নারীর প্রতি সহিংসতা। গত মাসেই অন্তত ১০৭ নারী ও কন্যাশিশু নিপীড়নের শিকার হয়েছে। এক মাসে ৫৩ জন ধর্ষণের শিকার, যাদের মধ্যে ৩৮ জনই অপ্রাপ্তবয়স্ক। সাম্প্রতিক সময়ে ‘মব ভায়োলেন্স’-এর মাধ্যমে নারী হয়রানি হচ্ছে। কিন্তু বেশির ভাগ ঘটনায় অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। ফলে তারা ফিরছে আরও বেপরোয়া হয়ে। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগের তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ধূমপান করা নিয়ে দুই নারীকে হয়রানির রেশ না কাটতেই সামনে এসেছে ‘ওড়না’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গত বুধবার ‘ওড়না পরা’ নিয়ে কটূক্তির মাধ্যমে এক ছাত্রীকে হেনস্তা করে কেন্দ্রীয় গ্রন্থগারের সহকারী বাইন্ডার মোস্তফা আসিফ অর্ণব। ভুক্তভোগী মামলা করলেও, শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার প্রশ্নে তুলে নিতে হয়েছে। কারণ এ ঘটনার সঙ্গে ধর্মকে যুক্ত করে অর্ণবকে হিরো বানানো হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর ‘তৌহিদি জনতা’র থানা ঘেরাও এবং পরদিন দুপুরেই অর্ণবের জামিনে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েন ওই শিক্ষার্থী।

নিপীড়কের পার পেয়ে যাওয়া অশনিসংকেত বলছেন নারীবাদীরা। ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা.

ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নারীর প্রতি একের পর এক অবমাননাকর ঘটনা ঘটছে। কিন্তু একটিরও যথাযথ বিচার হচ্ছে না। অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগের, প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের বক্তব্য কখনও কখনও অপরাধ উস্কে দিচ্ছে।’
‘মব জাস্টিস’ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি আসলে মব ভায়োলেন্স। জাস্টিস শব্দজুড়ে অপরাধকে প্রশ্রয় কিংবা জায়েজ করা হচ্ছে। নারীর অধিকার, নারীর প্রতি সম্মান না দেখিয়ে সমাজকে অধঃপতনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নারীর সম্মান ও অধিকার নিশ্চিতে রাষ্ট্রকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।’

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের জরিপে উঠে এসেছে, বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক নারী প্রতিনিয়ত রাস্তা, পাবলিক পরিবহন এমনকি জনসেবামূলক স্থানে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এর মূল কারণ যৌন হয়রানি ও অপর্যাপ্ত নারীবান্ধব পরিবেশ। আবার বেশির ভাগ নারী মনে করেন, নিরাপত্তাহীনতা থেকে তাদের মুক্তি নেই। কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে নারী।
যৌন হয়রানি নিরসনে ২০০৯ সালে উচ্চ আদালত নির্দেশনা দেন। কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি করতে বলেন। কিন্তু ২০১৮ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, অধিকাংশ কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৪ ভাগ শিক্ষার্থী কমিটির বিষয়ে কিছুই জানেন না।

হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) জরিপে বলা হয়েছে, শুধু ফেব্রুয়ারিতে ১০৭ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের শিকার ৫৩ জনের মধ্যে ৩৮ নারীর বয়সই ১৮ বছরের কম। উদ্বেগ জানিয়ে সংস্থাটি বলেছে, এটি খুবই উদ্বেগের যে, ১৩ নারী ও কন্যাশিশু দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে দু’জন আত্মহত্যা করেন। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে মারা গেছেন ৩৩ জন।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক এবং অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমন্বয় জরুরি।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম সমকালকে বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা আগেও হতো, এখনও হচ্ছে। তবে এখন জনসমক্ষে নারী নিপীড়ন বেশি হচ্ছে। কারণ একটি বিশেষ গোষ্ঠী মনে করছে, এসব করলেও তাদের কেউ কিছু করতে পারবে না। আবারও রাষ্ট্রও তাদের রুখতে নির্বিকার। ফলে নারী হয়ে পড়ছে নিরাপত্তাহীন।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র শ ক র হয় য ন হয়র ন অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

গান নিয়েই আমার সব ভাবনা

কর্নিয়া। তারকা কণ্ঠশিল্পী। অনলাইনে প্রকাশ পাচ্ছে বেলাল খানের সঙ্গে গাওয়া তাঁর দ্বৈত গান ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’। এ আয়োজন ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তাঁর সঙ্গে–

‘ভাঙা ঘর’ ও ‘আদর’-এর পর প্রকাশ পাচ্ছে ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’। একনাগাড়ে দ্বৈত গান গেয়ে যাচ্ছেন, কারণ কী? 

শ্রোতাদের চাওয়া আর নিজের ভালো লাগা থেকেই দ্বৈত গান গাওয়া, এর বাইরে আলাদা কোনো কারণ নেই। কারণ, সব সময় ভাবনায় এটাই থাকে, যে কাজটি করছি, তা শ্রোতার প্রত্যাশা পূরণ করবে কিনা। সেটি একক, না দ্বৈত গান– তা নিয়ে খুব একটা ভাবি না। তা ছাড়া রুবেল খন্দকারের সঙ্গে গাওয়া ‘ভাঙা ঘর’ ও অশোক সিংয়ের সঙ্গে গাওয়া ‘আদর’ গান দুটি যেমন ভিন্ন ধরনের, তেমনি বেলাল খানের সঙ্গে গাওয়া ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’ অনেকটা আলাদা। আসল কথা হলো, যা কিছু করি, তার পেছনে শ্রোতার ভালো লাগা-মন্দ লাগার বিষয়টি প্রাধান্য পায়। 

দ্বৈত গানের সহশিল্পী হিসেবে নতুনদের প্রাধান্য দেওয়ার কারণ?

সহশিল্পীর কণ্ঠ ও গায়কি যদি শ্রোতার মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার মতো হয়, তাহলে সে তরুণ, নাকি তারকা– তা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন পড়ে না। এমন তো নয় যে, নতুন শিল্পীরা ভালো গাইতে পারে না। তা ছাড়া তারকা শিল্পী ছাড়া দ্বৈত গান গাইব না– এই কথাও কখনও বলিনি। তাই দ্বৈত গানে তারকাদের পাশাপাশি নতুনদের সহশিল্পী হিসেবে বেছে নিতে কখনও আপত্তি করিনি। 

প্রতিটি আয়োজনে নিজেকে নতুন রূপে তুলে ধরার যে চেষ্টা, তা কি ভার্সেটাইল শিল্পী প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য? 

হ্যাঁ, শুরু থেকেই ভার্সেটাইল শিল্পী হিসেবে পরিচিতি গড়ে তুলতে চেয়েছি। এ কারণে কখনও টেকনো, কখনও হার্ডরক, আবার কখনও ফোক ফিউশনের মতো মেলোডি গান কণ্ঠে তুলেছি। গায়কির মধ্য দিয়ে নিজেকে বারবার ভাঙার চেষ্টা করছি। সব সময়ই নিরীক্ষাধর্মী গান করতে ভালো লাগে। একই ধরনের কাজ বারবার করতে চাই না বলেই নানা ধরনের গান করছি। নিজেকে ভেঙে সব সময়ই নতুনভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা জারি রাখছি।

প্রযোজক হিসেবে নিজের চ্যানেলের জন্য নতুন কী আয়োজন করছেন? 

আয়োজন থেমে নেই। তবে কবে নতুন গান প্রকাশ করব– তা এখনই বলতে পারছি না। কারণ একটাই, অন্যান্য কাজের মতো গান তো ঘড়ি ধরে কিংবা সময় বেঁধে তৈরি করা যায় না। একেকটি গানের পেছনে অনেক সময় দিতে হয়। কোনো কোনো গানের কথা-সুর-সংগীতের কাটাছেঁড়া চলে দিনের পর দিন। এরপর যখন তা সময়োপযোগী হয়েছে বলে মনে হয়, তাখনই প্রকাশ করি। 

গান গাওয়ার পাশাপাশি মডেলিং বা অভিনয় করার ইচ্ছা আছে? 

সত্যি এটাই, গান নিয়েই আমার সব ভাবনা। তারপরও অনেকের অনুরোধে কয়েকটি পত্রিকার ফ্যাশন পাতার জন্য মডেল হিসেবে কাজ করেছি। তবে মডেল হব– এমন ইচ্ছা নিয়ে কাজ করিনি। অভিনয় নিয়েও কিছু ভাবি না। অন্য কোনো পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চিনি-লবণের অনুপম পাঠ
  • শততম ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখতে চান ইয়ামাল
  • নির্মাতার ঘোষণার অপেক্ষায় চিত্রাঙ্গদা
  • শিশুর মাথা ঘামে কেন
  • কাঠফাটা রোদ্দুরে তপ্ত হাওয়া
  • গান নিয়েই আমার সব ভাবনা