চার সন্তান নিয়ে মুসলেমা বেগমের অভাবের সংসার। রাজমিস্ত্রি শ্রমিক স্বামীর একার আয়ে তিন বেলা সন্তানদের খাবার জোগান দেওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়েছিল। সেই অবস্থায় কৃষি বিভাগের পরামর্শে কেঁচো সার তৈরির কাজ শুরুর করেন মুসলেমা। এখন স্বামীর আয়ের পাশাপাশি বাড়ির আঙিনায় কেঁচো সার উৎপাদন করে তাঁদের সংসারের অভাব দূর হয়েছে।

মুসলেমা বেগম ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের চরপুম্বাইল গ্রামের মো.

খোকন মিয়ার স্ত্রী। তিন ছেলে ও এক মেয়ে আছে এই দম্পতির। বড় ছেলে মো. আপন নবম শ্রেণি, মেয়ে ফারাহ জান্নাত পঞ্চম শ্রেণি ও আরাফাত হোসেন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলে আশরাফুল ইসলামের বয়স চার বছর। খোকন মিয়ার ২০ শতক জমির ভিটে ছাড়া কোনো ফসলি জমি নেই। অন্যের জমি বর্গা চাষের পাশাপাশি রাজমিস্ত্রি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন তিনি।

মুসলেমার সংসারের অভাবের খবর জানতে পেরে ২০২৩ সালে স্থানীয় কৃষি বিভাগ তাঁকে কেঁচো সার তৈরি করার পরামর্শ দেয়। একই বছর বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় মাটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য জৈব সার উৎপাদন প্রদর্শনী হয়। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মুসলেমাকে একটি টিনের চালাঘর, ১০টি রিং-স্ল্যাব ও কেঁচো সরবরাহ করা হয়। শুরুতে ১০টি রিং স্ল্যাব নিয়ে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করলেও এখন তাঁর ২০টি রিং স্ল্যাব হয়েছে। তিনটি হাউসেও উৎপাদন করছেন কেঁচো সার। দুটি গরুর গোবর ও কলাগাছ দিয়ে কোনো ধরনের খরচ ছাড়াই মুসলেমা উৎপাদন করছেন এই কেঁচো সার।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে মুসলেমা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি বাড়ির আঙিনায় দুটি টিনশেডের ঘরে কেঁচো সার উৎপাদনের কাজ করছেন। সেখানে আলাপকালে মুসলেমা বলেন, ‘আমার স্বামী অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে। কাজের ফাঁকে রাজমিস্ত্রি শ্রমিকের কাজ করে। স্বামীর একার আয়ে সন্তানদের পড়ালেখা ও সংসার চালাতে খুব কষ্ট হতো। সন্তানদের প্রাইভেট-কোচিং দিতে পারতাম না, মাঝে গাড়ি ভাড়া দিতে না পারায় স্কুলে যাওয়া বন্ধ থাকত। অভাবের কারণে দুবেলা ভাত খেলে এক বেলা সন্তানদের নিয়ে উপোস করতে হতো।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০২৩ সালে হঠাৎ একদিন উপসহকারী কৃষি অফিসার এসে আমাকে কেঁচো সার উৎপাদনের পরামর্শ দিলেন। সেই থেকে শুরু হয়। সংসারের কাজের ফাঁকে কেঁচো সার উৎপাদন করি। মাত্র ১০টি রিং নিয়ে শুরু করলেও এখন পরিসর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।’

মুসলেমা তাঁর উৎপাদিত কেঁচো সার ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি করেন। আর কেঁচো বিক্রি করেন ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা কেজি। মাসে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় হয় সার ও কেঁচো বিক্রি করে। সেই টাকায় সন্তানদের পড়ালেখা ও সংসারে কিছু খরচ করেন, বাকি টাকা আয় থাকে। সেই টাকায় সন্তানদের চাহিদা পূরণ করেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে কৃষি বিভাগ থেকে তাঁকে একটি মেশিনও সরবরাহ করা হয়েছে। মুসলেমার ভাষ্য, প্রথমে কেঁচো দেখে খারাপ লাগত। গোবর দুর্গন্ধ লাগত। কিন্তু এখন আর কিছু মনে হয় না। এই সার উৎপাদন করে তাঁর সংসারের অভাব দূর হয়েছে, এখন বাড়তি আয় থাকে। সার তৈরিতে তাঁর কোনো খরচ নেই। এ কাজে তাঁর সন্তানেরাও সহযোগিতা করে।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলী আকসার খান বলেন, জৈব সারের গুণাগুণ রাসায়নিক সারের তুলনায় অনেক ভালো। কেঁচো সার ব্যবহারের ফলে মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সার ব্যবহারে ফসলে কীটনাশকের ব্যবহার কম করতে হয়। কীটনাশক ব্যবহার ছাড়া সবজি উৎপাদন করলে সবজির স্বাদও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভাবের সংসারে মুসলেমার সংসারে কেঁচো সার অভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি জুগিয়েছে। মুসলেমার মতো সফল উদ্যোক্তা তৈরিতে কৃষি বিভাগ সব সময় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতায় থাকবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

৫ বছরে ঋণের স্থিতি বাড়বে ৫৩.৭৭ শতাংশ: অর্থবিভাগ

পাঁচ বছরে দেশের ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়াবে ৫৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি বেড়ে হবে ৫৬ দশমিক ৬ ০ শতাংশ এবং বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বৃদ্ধি পাবে ৫০ শতাংশ। অর্থ বিভাগের করা সাম্প্রতিক এক প্রক্ষেপণে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। 

প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট ঋণের স্থিতি ছিল আঠারো লাখ ৮১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। সেখানে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ঋণের এই স্থিতি বেড়ে দাঁড়াবে ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এই হিসেবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে ঋণের স্থিতি টাকার অঙ্কে বৃদ্ধি পাবে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

গত ২ জুন অর্থ বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি ২০২৫-২০২৬ হতে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ২০১৪-২০১৫ হতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে অভ্যন্তরীণ ঋণ জিডিপি’র অনুপাত ধারবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসময় ঋণ জিডিপি’র অনুপাত ১৫.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২১.৫২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

অন্যদিকে, বৈদেশিক ঋণ জিডিপি’র অনুপাত ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের ১১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ১০ শতাংশে পৌঁছেছে। 

পূর্বাভাষ অনুযায়ী, ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এটি জিডিপি’র ১৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ হবে। যদিও বাংলাদেশের ঋণ-জিডিপি’র অনুপাত বর্তমানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্ধারিত নিরাপদ সীমার মধ্যে রয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক শৃঙ্খলা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এক্ষেত্রে নিবিড় মনিটরিং ও সময়োপযোগী সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক। 

একটি স্থিতিশীল এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি নিশ্চিত করার পথে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম রাজস্ব সংগ্রহ এবং ক্রমবর্ধমান ঋণ পরিশোধ ব্যয়-বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

অর্থ বিভাগ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি সহায়ক খাতে ঋণ গ্রহণকে অগ্রাধিকার দিলেও এটি মুদ্রার বিনিময় হার ঝুঁকি, ব্যয়বহুল অভ্যন্তরীণ ঋণ এবং অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট রাজস্ব আহরণ আশানুরূপ না হওয়ায় সরকারের ওপর অর্থায়নের চাপ থাকছে। অন্যদিকে, উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য দেশজুড়ে ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো তৈরির প্রয়োজন। 

এ প্রেক্ষাপটে, সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে একটি মধ্যমেয়াদি ঘাটতি অর্থায়ন কৌশল অনুসরণ করছে। ঘাটতি অর্থায়নের অভ্যন্তরীণ উৎস হিসেবে ট্রেজারি বন্ড ও বিল এবং জাতীয় সঞ্চয় স্কিম প্রধান ভূমিকা পালন করছে। বৈদেশিক উৎসসমূহের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উৎস থেকে নমনীয় ও অ-নমনীয় ঋণ উল্লেখযোগ্য।

ঋণ প্রোফাইলের এক চিত্র উপস্থাপন করে নীতি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের শেষে মোট সরকারি ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপি’র ৩৭ দশমিক ৬২ শতাংশ, যার মধ্যে ২১.৫২ শতাংশ এসেছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এবং ১৬ .১০ শতাংশ বৈদেশিক উৎস থেকে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ ঋণের সিংহভাগ (৫৮%) এসেছে ব্যাংকিং খাত থেকে, এরপর রয়েছে জাতীয় সঞ্চয় স্কিম যার অবদান ৩৪ শতাংশ। 

অন্যদিকে, বৈদেশিক ঋণের মধ্যে সর্ব্বোচ্চ পাওয়া গেছে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাজেন্সি (আইডিএ) থেকে, এরপর আছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং জাপান।

ঋণ স্থিতির মধ্যমেয়াদি প্রক্ষেপণ বিষয়ে বলা হয়েছে, মধ্যমেয়াদে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ জিডিপি’র অনুপাতে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরের শেষে মোট ঋণ জিডিপি’র ৩৭ দশমিক ৭২ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ হতে পারে জিডিপি’র ২১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং বৈদেশিক ঋণ হতে পারে ১৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। 

বিগত বছরগুলোর অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের বন্টন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নিম্নমধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ফলে বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে অনুদান এবং নমনীয় ঋণ (কম সুদের হার, দীর্ঘ পরিশোধকাল) পাওয়ার সুবিধাদি ক্রমান্নয়ে হ্রাস পাচ্ছে। 

সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে তুলনামূলক উচ্চ সুদের হার ও স্বল্পমেয়াদি বাণিজ্যিক ঋণের ওপর আরও বেশি নির্ভর করতে হতে পারে। যার ফলে ঋণ পরিশোধ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এসময় বাংলাদেশের ঋণ পরিস্থিতির মধ্যমেয়াদী চিত্র অনেকটাই নির্ভর করবে সরকারের গৃহীত কার্যকর কৌশলগুলোর বাস্তবায়নের ওপর। 

যদি রাজস্ব আহরণ, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ এবং ঋণ ব্যবস্থপনায় কার্যকর সংস্কার না আনা যায়, তাহলে ঋণের স্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে। তবে, মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশ এই উত্তরণের পথ দক্ষতার সাথে অতিক্রম করতে পারবে এবং উন্নত অর্থনৈতিক অবস্থানের সুফল গ্রহণের পাশাপাশি একটি টেকসই ঋণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে সক্ষম হবে।

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা
  • শাহরুখের পারিশ্রমিক ৪২৩ কোটি টাকা!
  • অন্য বছরের চেয়ে এই জুনে ডেঙ্গু বেশি
  • ইরানকে পরমাণু জগতে ঠেলে দিয়েছে ইসরায়েলই
  • আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশের কিস্তির প্রস্তাব উঠছে আইএমএফ পর্ষদে
  • আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ
  • সামরিক শক্তিতে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে কে এগিয়ে  
  • চার দেশের পাঁচ লাখ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার নির্দেশ
  • চার দেশের পাঁচ লাখ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করার নির্দেশ
  • ৫ বছরে ঋণের স্থিতি বাড়বে ৫৩.৭৭ শতাংশ: অর্থবিভাগ