কেঁচো সার তৈরি করে ঘুরে দাঁড়ালেন মুসলেমা
Published: 8th, March 2025 GMT
চার সন্তান নিয়ে মুসলেমা বেগমের অভাবের সংসার। রাজমিস্ত্রি শ্রমিক স্বামীর একার আয়ে তিন বেলা সন্তানদের খাবার জোগান দেওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়েছিল। সেই অবস্থায় কৃষি বিভাগের পরামর্শে কেঁচো সার তৈরির কাজ শুরুর করেন মুসলেমা। এখন স্বামীর আয়ের পাশাপাশি বাড়ির আঙিনায় কেঁচো সার উৎপাদন করে তাঁদের সংসারের অভাব দূর হয়েছে।
মুসলেমা বেগম ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের চরপুম্বাইল গ্রামের মো.
মুসলেমার সংসারের অভাবের খবর জানতে পেরে ২০২৩ সালে স্থানীয় কৃষি বিভাগ তাঁকে কেঁচো সার তৈরি করার পরামর্শ দেয়। একই বছর বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় মাটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য জৈব সার উৎপাদন প্রদর্শনী হয়। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মুসলেমাকে একটি টিনের চালাঘর, ১০টি রিং-স্ল্যাব ও কেঁচো সরবরাহ করা হয়। শুরুতে ১০টি রিং স্ল্যাব নিয়ে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করলেও এখন তাঁর ২০টি রিং স্ল্যাব হয়েছে। তিনটি হাউসেও উৎপাদন করছেন কেঁচো সার। দুটি গরুর গোবর ও কলাগাছ দিয়ে কোনো ধরনের খরচ ছাড়াই মুসলেমা উৎপাদন করছেন এই কেঁচো সার।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে মুসলেমা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি বাড়ির আঙিনায় দুটি টিনশেডের ঘরে কেঁচো সার উৎপাদনের কাজ করছেন। সেখানে আলাপকালে মুসলেমা বলেন, ‘আমার স্বামী অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে। কাজের ফাঁকে রাজমিস্ত্রি শ্রমিকের কাজ করে। স্বামীর একার আয়ে সন্তানদের পড়ালেখা ও সংসার চালাতে খুব কষ্ট হতো। সন্তানদের প্রাইভেট-কোচিং দিতে পারতাম না, মাঝে গাড়ি ভাড়া দিতে না পারায় স্কুলে যাওয়া বন্ধ থাকত। অভাবের কারণে দুবেলা ভাত খেলে এক বেলা সন্তানদের নিয়ে উপোস করতে হতো।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০২৩ সালে হঠাৎ একদিন উপসহকারী কৃষি অফিসার এসে আমাকে কেঁচো সার উৎপাদনের পরামর্শ দিলেন। সেই থেকে শুরু হয়। সংসারের কাজের ফাঁকে কেঁচো সার উৎপাদন করি। মাত্র ১০টি রিং নিয়ে শুরু করলেও এখন পরিসর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।’
মুসলেমা তাঁর উৎপাদিত কেঁচো সার ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি করেন। আর কেঁচো বিক্রি করেন ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা কেজি। মাসে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় হয় সার ও কেঁচো বিক্রি করে। সেই টাকায় সন্তানদের পড়ালেখা ও সংসারে কিছু খরচ করেন, বাকি টাকা আয় থাকে। সেই টাকায় সন্তানদের চাহিদা পূরণ করেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে কৃষি বিভাগ থেকে তাঁকে একটি মেশিনও সরবরাহ করা হয়েছে। মুসলেমার ভাষ্য, প্রথমে কেঁচো দেখে খারাপ লাগত। গোবর দুর্গন্ধ লাগত। কিন্তু এখন আর কিছু মনে হয় না। এই সার উৎপাদন করে তাঁর সংসারের অভাব দূর হয়েছে, এখন বাড়তি আয় থাকে। সার তৈরিতে তাঁর কোনো খরচ নেই। এ কাজে তাঁর সন্তানেরাও সহযোগিতা করে।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলী আকসার খান বলেন, জৈব সারের গুণাগুণ রাসায়নিক সারের তুলনায় অনেক ভালো। কেঁচো সার ব্যবহারের ফলে মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সার ব্যবহারে ফসলে কীটনাশকের ব্যবহার কম করতে হয়। কীটনাশক ব্যবহার ছাড়া সবজি উৎপাদন করলে সবজির স্বাদও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভাবের সংসারে মুসলেমার সংসারে কেঁচো সার অভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি জুগিয়েছে। মুসলেমার মতো সফল উদ্যোক্তা তৈরিতে কৃষি বিভাগ সব সময় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতায় থাকবে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আবেদন আজ বিকেলে, ক্লাস ১৩ নভেম্বর
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (পাস) প্রোগ্রামে ভর্তি কার্যক্রম আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টা থেকে শুরু হচ্ছে। আবেদন করা যাবে আগামী ১৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত। এ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে ১৩ নভেম্বর থেকে। গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন যেসব শিক্ষার্থী
২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি বা সমমান এবং ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন ভর্তির জন্য। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি (ভোকেশনাল), এইচএসসি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি) ও ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারবেন। এ-লেভেল, ও-লেভেল ও বিদেশি সনদধারীদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত নিয়মে সরাসরি ডিন অফিসে বা ই–মেইলে আবেদন করতে হবে শিক্ষার্থীদের।
যেসব শিক্ষার্থী গত দুই শিক্ষাবর্ষে (২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪) স্নাতক (সম্মান), স্নাতক (সম্মান) প্রফেশনাল বা স্নাতক (পাস) প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে রেজিস্ট্রেশন কার্ড পেয়েছেন, তাঁরা এই শিক্ষাবর্ষে নতুন করে ভর্তি হতে পারবেন না। তবে পূর্ববর্তী ভর্তি বাতিল করে নতুন শিক্ষাবর্ষে আবেদন করতে পারবেন। একই সঙ্গে কোনো শিক্ষার্থী দ্বৈত ভর্তি হলে তাঁর উভয় ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন বাতিল হবে।
আবেদন ফি ৪০০ টাকা
ভর্তি ফি হিসেবে প্রাথমিক আবেদন ফি ৪০০ টাকা, যার মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ ২৫০ টাকা এবং কলেজের অংশ ১৫০ টাকা। ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর রেজিস্ট্রেশন ফি ৭২০ টাকা জমা দিতে হবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করে অনলাইনে নিশ্চয়ন করবে। তবে নিশ্চয়ন ছাড়া কোনো আবেদনকারীকে মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। আবেদন ফি ১৯ অক্টোবরের মধ্য জমা দিতে হবে।
আরও পড়ুনবাংলাদেশ বিমানে ইন্টার্নশিপ, দৈনিক হাজিরায় সম্মানী ৬০০ টাকা৪ ঘণ্টা আগেআবেদনকারীদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রতিটি কলেজের জন্য আলাদাভাবে কোর্সভিত্তিক মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হবে। একই মেধা নম্বরপ্রাপ্ত হলে এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ (৪০: ৬০ অনুপাতে) এবং প্রয়োজনে মোট নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে। এরপরও সমতা থাকলে বয়স কম শিক্ষার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। ভর্তি কার্যক্রম ধাপে ধাপে প্রথম মেধাতালিকা, দ্বিতীয় মেধাতালিকা, কোটার মেধাতালিকা এবং প্রথম ও দ্বিতীয় রিলিজ স্লিপের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। তবে এবারও তৃতীয় রিলিজ স্লিপে আবেদন করার সুযোগ থাকবে না।
বিস্তারিত দেখুন এখানে
আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, সুযোগ পাবেন ৪৮ জেলার যুবরা১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আরও পড়ুন১২ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে সরকারি নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫