বিদেশি বিনিয়োগের স্বীকৃতি পেল গ্রামীণ ট্রাস্টের শেয়ার
Published: 8th, March 2025 GMT
বিদেশি বিনিয়োগ হিসেবে স্বীকৃতি পেল নেপালি প্রতিষ্ঠানে গ্রামীণ ট্রাস্টের শেয়ার। প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে এক দশকের বেশি আগে নেপালের ক্ষুদ্রঋণদান প্রতিষ্ঠান নির্ধন উত্তান ব্যাংক লিমিটেডে এই শেয়ার পেয়েছিল বাংলাদেশের গ্রামীণ ট্রাস্ট। আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য সম্প্রতি শেয়ার ধারণকে বিদেশি বিনিয়োগের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অবশ্য দেশ থেকে সেখানে এক টাকাও নেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, গ্রামীণ ট্রাস্টের স্বীকৃতির পর এখন দেশের বাইরে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়াল ২৪টি। আফ্রিকার দেশ কঙ্গোর একটি প্রতিষ্ঠানে একই উপায়ে শেয়ার পেয়েছে গ্রামীণ ট্রাস্ট। শিগগিরই এই শেয়ারও বিদেশি বিনিয়োগের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে। দুটি প্রতিষ্ঠানই পরিচালিত হয় বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংক মডেলে।
নেপালের ওই কোম্পানির সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী সেখানে গ্রামীণ ট্রাস্টের শেয়ার রয়েছে ৪ লাখ ৬ হাজার ২৬৫টি বা ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যার বাজারমূল্য ৪ কোটি ৬ লাখ ২৬ হাজার ৪৯৩ নেপালি রুপি। আগের অর্থবছরও একই পরিমাণ শেয়ার ছিল। এক দশক আগে ২ লাখ ১৪ হাজার ২৫০টি বা ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ শেয়ার পেয়েছিল গ্রামীণ ট্রাস্ট। তবে এতদিন তা বিদেশি বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল না।
নির্ধন উত্তান ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ মডেলে পরিচালিত নির্ধন উত্তান ব্যাংক ১৯৯৮ সালে নেপালের কোম্পানি আইনের আওতায় লাইসেন্স নিয়ে যাত্রা শুরু করে। পরে ১৯৯৯ সালে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক আইনের আওতায় লাইসেন্স পায়। ২০১৭ সাল থেকে ব্যাংক অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট আইনের আওতায় লাইসেন্স নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে সম্প্রতি নির্ধন উত্তান লঘুবিত্ত বিত্তিয়া সংস্থা লিমিটেড (এনইউবিএল) হয়েছে। তাদের কৌশলগত জোট হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তালিকার এক নম্বরে রয়েছে গ্রামীণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ।
এনইউবিএলের তথ্য অনুযায়ী, নেপালের ক্ষুদ্রঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বিস্তৃত দেশটির ৭৭ জেলায়। মোট শাখা রয়েছে ১৮৫টি। সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৭৮৬। মোট কর্মী ১ হাজার ৬৫ জন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি মোট ২৫ হাজার ৬ কোটি নেপালি রুপি ঋণ বিতরণ করেছে। এর বিপরীতে বর্তমান ঋণস্থিতি রয়েছে ২ হাজার ৫৯১ নেপালি রুপি। ঋণগ্রহীতা ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৪৩ জন। দেশটির নিম্ন আয়ের মানুষের আর্থিক সেবা দেওয়ার জন্য যা অধিক পরিচিত।
ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি পালনের লক্ষ্য নিয়ে তিন যুগ আগে গ্রামীণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা হয়। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস (বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা) একটি অলাভজনক ও বেসরকারি সংস্থা হিসেবে ১৯৮৯ সালে এ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রামীণ ট্রাস্ট মূলত বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচনকেন্দ্রিক ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি ও সামাজিক ব্যবসা প্রকল্পের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। গ্রামীণ ট্রাস্টের ক্ষুদ্রঋণ মডেল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা, যা বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং বেকার সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে। এটি দারিদ্র্য বিমোচনকেন্দ্রিক ক্ষুদ্রঋণ, সামাজিক উদ্যোগের প্রচার এবং বাস্তবায়ন করা যার লক্ষ্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গ্রামীণ ট্রাস্টকে বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে শুধু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য। এখানে দেশ থেকে কোনো অর্থ নেওয়া হয়নি। এমনিতে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিভিন্ন প্রয়োজনে কেস টু কেস ভিত্তিতে ২০১৩ সাল থেকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে এ বিষয়ে কোনো নীতিমালা ছিল না। তবে ২০২১ সালে বিদেশে মূলধন বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি বিধিমালা জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। বিধিমালার আওতায় কেবল রপ্তানি আয় আছে এমন প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ পাঁচ বছরের গড় রপ্তানি আয়ের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ অথবা সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের নিট সম্পদের ২০ শতাংশের মধ্যে যা কম, সেই পরিমাণ বিনিয়োগের আবেদন করতে পারে। বিভিন্ন তথ্য ও সম্ভাব্যতা যাচাই, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার পরিস্থিতি বিবেচনাসহ বিভিন্ন বিষয় যাচাই করে গভর্নরের নেতৃত্বে গঠিত বাছাই কমিটি অনুমোদন নিয়ে এরপর বাইরে অর্থ নিতে হয়। চলমান ডলার সংকটের
কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশে বিনিয়োগের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের আবেদন বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ক ষ দ রঋণ র আওত য় আর থ ক র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত
নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।
কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।
১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)
আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)
ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।
৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)
ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।
৪. ঋণের মেয়াদ
কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।
৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)
শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।
৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)
ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।
৭. প্রসেসিং ফি
আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।
৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)
বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।
৯. জামানত (কোলেটারাল)
ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।
১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও
আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।