বিদেশি বিনিয়োগ হিসেবে স্বীকৃতি পেল নেপালি প্রতিষ্ঠানে গ্রামীণ ট্রাস্টের শেয়ার। প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে এক দশকের বেশি আগে নেপালের ক্ষুদ্রঋণদান প্রতিষ্ঠান নির্ধন উত্তান ব্যাংক লিমিটেডে এই শেয়ার পেয়েছিল বাংলাদেশের গ্রামীণ ট্রাস্ট। আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য সম্প্রতি শেয়ার ধারণকে বিদেশি বিনিয়োগের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অবশ্য দেশ থেকে সেখানে এক টাকাও নেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, গ্রামীণ ট্রাস্টের স্বীকৃতির পর এখন দেশের বাইরে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়াল ২৪টি। আফ্রিকার দেশ কঙ্গোর একটি প্রতিষ্ঠানে একই উপায়ে শেয়ার পেয়েছে গ্রামীণ ট্রাস্ট। শিগগিরই এই শেয়ারও বিদেশি বিনিয়োগের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে। দুটি প্রতিষ্ঠানই পরিচালিত হয় বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংক মডেলে।
নেপালের ওই কোম্পানির সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী সেখানে গ্রামীণ ট্রাস্টের শেয়ার রয়েছে ৪ লাখ ৬ হাজার ২৬৫টি বা ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যার বাজারমূল্য ৪ কোটি ৬ লাখ ২৬ হাজার ৪৯৩ নেপালি রুপি। আগের অর্থবছরও একই পরিমাণ শেয়ার ছিল। এক দশক আগে ২ লাখ ১৪ হাজার ২৫০টি বা ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ শেয়ার পেয়েছিল গ্রামীণ ট্রাস্ট। তবে এতদিন তা বিদেশি বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল না।
নির্ধন উত্তান ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ মডেলে পরিচালিত নির্ধন উত্তান ব্যাংক ১৯৯৮ সালে নেপালের কোম্পানি আইনের আওতায় লাইসেন্স নিয়ে যাত্রা শুরু করে। পরে ১৯৯৯ সালে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক আইনের আওতায় লাইসেন্স পায়। ২০১৭ সাল থেকে ব্যাংক অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট আইনের আওতায় লাইসেন্স নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে সম্প্রতি নির্ধন উত্তান লঘুবিত্ত বিত্তিয়া সংস্থা লিমিটেড (এনইউবিএল) হয়েছে। তাদের কৌশলগত জোট হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তালিকার এক নম্বরে রয়েছে গ্রামীণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ।
এনইউবিএলের তথ্য অনুযায়ী, নেপালের ক্ষুদ্রঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বিস্তৃত দেশটির ৭৭ জেলায়। মোট শাখা রয়েছে ১৮৫টি। সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৭৮৬। মোট কর্মী ১ হাজার ৬৫ জন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি মোট ২৫ হাজার ৬ কোটি নেপালি রুপি ঋণ বিতরণ করেছে। এর বিপরীতে বর্তমান ঋণস্থিতি রয়েছে ২ হাজার ৫৯১ নেপালি রুপি। ঋণগ্রহীতা ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৪৩ জন। দেশটির নিম্ন আয়ের মানুষের আর্থিক সেবা দেওয়ার জন্য যা অধিক পরিচিত।
ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি পালনের লক্ষ্য নিয়ে তিন যুগ আগে গ্রামীণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা হয়। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস (বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা) একটি অলাভজনক ও বেসরকারি সংস্থা হিসেবে ১৯৮৯ সালে এ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রামীণ ট্রাস্ট মূলত বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচনকেন্দ্রিক ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি ও সামাজিক ব্যবসা প্রকল্পের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। গ্রামীণ ট্রাস্টের ক্ষুদ্রঋণ মডেল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা, যা বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং বেকার সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে। এটি দারিদ্র্য বিমোচনকেন্দ্রিক ক্ষুদ্রঋণ, সামাজিক উদ্যোগের প্রচার এবং বাস্তবায়ন করা যার লক্ষ্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গ্রামীণ ট্রাস্টকে বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে শুধু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য। এখানে দেশ থেকে কোনো অর্থ নেওয়া হয়নি। এমনিতে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিভিন্ন প্রয়োজনে কেস টু কেস ভিত্তিতে ২০১৩ সাল থেকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে এ বিষয়ে কোনো নীতিমালা ছিল না। তবে ২০২১ সালে বিদেশে মূলধন বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি বিধিমালা জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। বিধিমালার আওতায় কেবল রপ্তানি আয় আছে এমন প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ পাঁচ বছরের গড় রপ্তানি আয়ের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ অথবা সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের নিট সম্পদের ২০ শতাংশের মধ্যে যা কম, সেই পরিমাণ বিনিয়োগের আবেদন করতে পারে। বিভিন্ন তথ্য ও সম্ভাব্যতা যাচাই, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার পরিস্থিতি বিবেচনাসহ বিভিন্ন বিষয় যাচাই করে গভর্নরের নেতৃত্বে গঠিত বাছাই কমিটি অনুমোদন নিয়ে এরপর বাইরে অর্থ নিতে হয়। চলমান ডলার সংকটের
কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশে বিনিয়োগের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের আবেদন বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ক ষ দ রঋণ র আওত য় আর থ ক র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

দোয়ার ফজিলত ও আদব

দোয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ আহ্বান করা বা প্রার্থনা করা। পরিভাষায় দোয়া হলো কল্যাণ ও উপকার লাভের উদ্দেশ্যে এবং ক্ষতি ও অপকার রোধে মহান আল্লাহকে ডাকা এবং তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।

প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (বুখারি ও মুসলিম) ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।’ (তিরমিজি: ৩৩৭৩)

আল–কোরআনের বর্ণনা, ‘আর তোমাদের রব বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬০)

মুমিনের পরিচয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের পার্শ্বদেশ শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। কেউ জানে না তার কৃতকর্মের জন্য তাদের কী কী চোখজুড়ানো প্রতিদান লুকায়িত আছে।’ (সুরা-৩২ সাজদা, আয়াত: ১৬-১৭)

‘আর আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয় আমি অতি নিকটে। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে, আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই। কাজেই তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ইমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৬)

দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল উপার্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎকাজ করো; তোমরা যা করো, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫১)

দোয়া ও আমল কবুল হওয়ার মূল শর্ত হলো ইখলাস। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। অতএব, তাঁকে ডাকো খাঁটি ইবাদতের মাধ্যমে।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬৬)

দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল উপার্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎ কাজ করো; তোমরা যা করো, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫১) ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পাক পবিত্র বস্তুসামগ্রী আহার করো, যেগুলো আমি তোমাদের রিজিক হিসেবে দান করেছি।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৭৩)

নবীজি (সা.) বলেন, ‘উষ্কখুষ্ক ধুলায় ধূসরিত অবস্থায় দীর্ঘ সফরকারী একজন যে স্বীয় দুই হাত আকাশের দিকে প্রসারিত করে বলে, “হে প্রভু! হে প্রভু!” অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং সে হারাম দ্বারা লালিত, তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে?’ (মুসলিম: ১৬৮৬)

নির্জনে নীরবে বিনয়ের সঙ্গে দোয়া করা উত্তম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাকো কাকুতি মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫)। পৃথিবীকে কুসংস্কারমুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো না। তাকে আহ্বান করো ভয় ও আশাসহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫-৫৬)

দোয়ার আদব হলো দৃঢ়সংকল্প ও আকুতির সঙ্গে দোয়া করা, দোয়া কবুলে প্রবল আশাবাদী হওয়া।

হজরত জাকারিয়া (আ.) তাঁর দোয়ায় বলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনার কাছে দোয়া করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি।’ (সুরা-১৯ মারিয়াম, আয়াত: ৪) হজরত ইব্রাহিম (আ.) বলেন, ‘আশা করি, আমার প্রতিপালকের নিকট দোয়া করে আমি বিফল হব না।’ (সুরা-১৯ মারিয়াম, আয়াত: ৪৮)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ