সাম্প্রতিক সময়ে দেশে নারী নির্যাতনের তিনটি ঘটনা আলোচনায় এসেছে। এগুলো হলো– লালমাটিয়ায় দুই নারীকে সিগারেট খাওয়ার ‘অপরাধে’ মারধর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে ওড়না না পরার কারণে কর্মচারীকে হেনস্তা এবং সর্বশেষ মাগুরায় আট বছরের শিশুকে তিনজন মিলে ধর্ষণ। প্রথম দুটি ঘটনাকে আমাদের সমাজে নারী নির্যাতন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। বরং নারী কেন সিগারেট খাবে, নারী কেন ওড়না পরবে না এসব অজুহাত দিয়ে ব্লেমিং করা হয়েছে। মাগুরার আট বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনাও নারী নির্যাতন বলে আমরা বেশি সোচ্চার এ রকমটা নয়। এখানে নারী নির্যাতন বলে নয়, একটা ছোট্ট বাচ্চাকে তিনজনে মিলে ধর্ষণ করা হয়েছে– এই বিষয়কে কেন্দ্র করে তার প্রতি আমরা বেশি সহনশীল।  
লালমাটিয়া আর শাহবাগের ঘটনায় আগের সরকারের সময় যে রকম অপরাধ হয়েছিল, সেটিরই ছায়া দেখছি। অপরাধীদের ছাড় দেওয়ার প্রবণতা আছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালমাটিয়ার ঘটনায় অপরাধীদের আটক করে শাস্তি নিশ্চিত না করে উল্টো তাদের পক্ষে কথা বলেছেন। শাহবাগে তৌহিদি জনতা সারারাত অপরাধীর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করল। নির্যাতককে এক দিনের মাথায় জামিনের পর ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়েছে। আমাদের যে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য এতে করে অপরাধীরা ছাড় পাচ্ছে। নারী নির্যাতনের ঘটনা দেখার ক্ষেত্রে ভঙ্গির ধরনে সম্প্রসারণ হচ্ছে। 
জুলাইয়ে আমাদের যে এত বড় গণঅভ্যুত্থান হলো সেটির মূল লক্ষ্য ছিল সমতা, প্রাপ্যতা, নায্যতা। সমাজ গঠনে, রাষ্ট্র পরিচালনায় এগুলোর অন্তর্ভুক্তি থাকার কথা ছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার এখন একটি গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। ফলে নারী ও সংখ্যালঘু নির্যাতন ও মুক্তিযোদ্ধাদের অপদস্ত করার ঘটনা ঘটেছে। এসব বিষয়ে আমাদের সবার সোচ্চার হওয়া জরুরি। অথচ সরকারে বর্তমানে যে চারজন নারী আছেন তাদের সবার সংগঠন ছিল। তারা প্রত্যেকেই নারী নির্যাতনের ঘটনায় সোচ্চার ছিলেন। সভা-সেমিনারে কথা বলতেন। পত্রিকায় বিবৃতি পাঠাতেন। কিন্তু এখন তাদের কথা বলতে দেখা যাচ্ছে না। 
৫ আগস্টের পরই দেশে প্রকাশ্যে কয়েকজন যুবক মিলে এক যৌনকর্মীকে মারধর করেছে। কক্সবাজারে নারীকে কান ধরে উঠবস করাতে দেখা গেছে। এসব কারণে একজন যৌনকর্মী আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিল। রংপুর, গাইবান্ধায় নারীর ফুটবল খেলায় বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। কয়েকজন নায়িকার শোরুম উদ্বোধনে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীকে হিজাব পরে মিছিল করতে দেখা গেছে। সর্বোপরি এখানে খারাপ ও ভালো নারী বলে পার্থক্য তৈরি করা হচ্ছে। বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠী উস্কানি দিচ্ছে। সরকার তাদের মদদ দিচ্ছে। 
দেশে ধর্ষণের ঘটনায় আসামি জামিন পেয়ে যায়। এতে নারী নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। ধর্ষণের পরে কাউন্সেলিং করা হয় না। নিরাপত্তা নিশ্চিত না করায় ধর্ষক ভিকটিম ও পরিবারকে হেনস্তা করার চেষ্টা করে। আবার অনেক ঘটনায় দেখা গেছে, বোনজামাইয়ের দ্বারা নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে বাবা-মা দুই মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে চুপ থাকছেন। কিন্তু এটা যে গুরুতর অপরাধ সেটি বিবেচনা করছেন না। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনে সমাজ ও সংস্কৃতির মূল্যায়নে পরিবর্তন আনতে হবে। ধর্ষককে বিচারের আওতায় আনতে হবে। 
    লেখক : নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ঘটন য় আম দ র সরক র অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

সিডনিতে তিন তারকার হলো দেখা

দূর প্রবাসের ব্যস্ত জীবনে হঠাৎ দেশের চেনা মুখের দেখা মিলে গেলে সেটি কেবল একটি সাধারণ সাক্ষাৎ থাকে না। বরং হয়ে ওঠে দেশের স্মৃতি টেনে আনা এক মুহূর্ত, হয়ে ওঠে একটুকরো বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। এমনই এক দৃশ্যের অবতারণা হলো গত শনিবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনির এডমন্ডসন পার্ক মলে।

বাংলাদেশের তিন অঙ্গনের তিন পরিচিত মুখ—ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস, গায়ক তাহসান খান ও অভিনেতা মাজনুন মিজান সেখানে হঠাৎ একত্র হলেন। ব্যস্ত নগরের ভিড়ে এই তিন তারকার দেখা হয়ে গেল এক ‘অপ্রত্যাশিত’ আড্ডায়।

তিন ভুবনের তারকারা
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক ওপেনার ইমরুল কায়েস সম্প্রতি পরিবার নিয়ে সিডনিতে স্থায়ী হয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে বহু স্মরণীয় ইনিংস খেলা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এখন নতুন করে জীবনের আরেক অধ্যায় শুরু করেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। অভিনেতা মাজনুন মিজানও অনেক দিন ধরেই পরিবার নিয়ে সিডনিতে বসবাস করছেন।

ছোট পর্দার জনপ্রিয় এই অভিনেতা দেশে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন। নাট্যাঙ্গনের পরিচিত মুখ হলেও সিডনিতে তিনি অনেকটা পর্দার আড়ালেই থাকেন, তবু প্রবাসী বাঙালিদের কাছে তিনি প্রিয়জন।
অন্যদিকে গায়ক ও অভিনেতা তাহসান খান ছিলেন সফররত। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে কনসার্ট করছেন তিনি। ব্রিসবেন ও অ্যাডিলেডে সফল শো শেষে সিডনির কনসার্টেও হাজারো দর্শকের মন জয় করেছেন। এরপর সামনে রয়েছে মেলবোর্ন ও পার্থে তাঁর পরিবেশনা। সিডনিতে সফল কনসার্টের রেশ এখনো কাটেনি, এরই মধ্যে ঘটে গেল এই মিলন।

সিডনিতে গাইছেন তাহসান

সম্পর্কিত নিবন্ধ