মোগলবিরোধী মুসা খানের মসজিদ, পাশে বীর যোদ্ধার সমাধি
Published: 10th, March 2025 GMT
এলাকাটির নাম আগে ছিল ‘বাগ-ই-মুসা খাঁ’। স্থানটি অনেকেরই কমবেশি দেখা, জানা। তবে এই নামে সাধারণত কেউ একে চেনেন না। এটি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকা। আরও নির্দিষ্ট করে বললে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল এলাকা। বাংলার স্বাধীন শাসক বারো ভূঁইয়ার প্রধান মসনদ-ই আলা ঈসা খানের পুত্র মুসা খান এ এলাকায় একটি মনোরম বাগিচা তৈরি করেছিলেন।
হাকিম হাবিবুর রহমান তাঁর ‘আসুদগান-ই ঢাকা’ বইতে উল্লেখ করেছেন, মুসা খানের নামানুসারেই এলাকাটির ওই নামকরণ করা হয়েছিল। দেওয়ান মুসা খানের বাগানটি নেই। তবে তাঁর কবর আছে এখানেই। আর তাঁর স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তিন গম্বুজবিশিষ্ট ‘মুসা খান মসজিদ’।
মুসা খান মসজিদের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকজুড়ে আছে অগ্রণী ব্যাংক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকাবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব বিভাগ, শহীদুল্লাহ হলসহ বিভিন্ন বিভাগ ও প্রশাসনিক কার্যালয়। সামনে অর্থাৎ পশ্চিম দিকে নাজিমুদ্দিন (একদা এর নাম ছিল মুসা খান সড়ক) রোডের দুই পাশ দিয়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবহনের দোতলা বাসগুলো। উপরন্তু এই দিকটিতে ফুটপাতের পর থেকে লোহার গ্রিল দিয়ে ঘেরা। সামনে দিয়ে যাতায়াতও করা যায় না। মসজিদটি সহজে চোখেও পড়ে না।
মুসা খানের মসজিদের কোনো শিলালিপি পাওয়া যায়নি। সে কারণে সুনির্দিষ্ট করে এর নির্মাণকাল জানা যায় না। মসজিদটির নাম মুসা খান মসজিদ হলেও তিনি এর নির্মাতা নন বলেই অধিকাংশ ঐতিহাসিকের অনুমান।উপেক্ষায়–অযত্নে মুসা খানের মসজিদ এখন মলিন বিবর্ণ। বহু বছর আগে এর বুরুজ আর সরু মিনারগুলো ছাই রং ও দেয়ালে ফিকে হলুদ রং করা হয়েছিল। তা রোদে–বৃষ্টিতে বিবর্ণ। ময়লা, ছত্রাক জন্মেছে স্থানে স্থানে। মসজিদের ভেতরের দৃশ্যেও কোনো ভিন্নতা নেই। হয়তো একই সময় ভেতরের দেয়ালে সাদা রং করা হয়েছিল। তা এখন কালচে হয়ে আছে। গম্বুজের ভেতরে, মিনারে নিচের দিকের কলসগুলো থেকে ঝরে পড়ছে আস্তরণ। মেঝেতে নামাজিদের জন্য যে মাদুর পাতা আছে, তার অবস্থাও তথৈবচ।
মসজিদে নামাজ হয় নিয়মিতই। তবে আজান দেওয়ার মুয়াজ্জিন নেই। রক্ষণাবেক্ষণের খাদেম নেই। শনিবার দুপুরে মসজিদে গিয়ে দেখা গেল এক তরুণ কোরআন তিলাওয়াতে মগ্ন। খানিক পরেই জোহরের ওয়াক্ত হলে তিনিই উঠে গিয়ে মাইকের সুইচ চালু করে আজান দিলেন।
মুসা খান মসজিদের ভেতরের একাংশ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত: বিবিসি
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ফলে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ২০ জনে পৌঁছেছে। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা বিবিসি।
অন্যদিকে আল জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।