Samakal:
2025-07-31@06:37:20 GMT

আর কত হযবরল

Published: 10th, March 2025 GMT

আর কত হযবরল

রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় না থাকলেও মাঠে সোচ্চার। আর ক্ষমতার লক্ষ্যে তোড়জোড় থাকাটা স্বাভাবিকও বটে। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার এই লড়াইয়ের চিত্র-চরিত্র কেমন? মত-ভিন্নমত প্রকাশের ভঙ্গি কি স্বাভাবিক? মানুষ কী বার্তা পাচ্ছে তাদের বক্তব্য-বিবৃতি এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে? 


আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে বিদায়ের কৃতিত্ব দাবি সবাই করে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনেও সবাইকে একমত হতে দেখা গেছে। কিন্তু এর পরই দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে। দলীয় রাজনীতির বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যৎ প্রশ্নে তাদের মত ও পথের ভিন্নতা প্রকট থেকে প্রকটতর হয়ে উঠছে। এই ভিন্নতা এতই বেশি যে, মনে হতে পারে অভিধানের শব্দ হযবরল-কে বদলে দিয়ে নতুন শব্দ আবিষ্কার করতে হবে। এই হযবরল অবস্থা গোটা রাজনীতিকে এখন গিলে খাচ্ছে। মনে হতে পারে, লক্ষ্যহীন পথের যাত্রী সবাই। একজন একটা বিষয়ে যা বলে আরেকজন উল্টোটা, একজন একটা সুপারিশ করলে কালক্ষেপণ না করে আরেকজন তার উল্টোটা বলে দিচ্ছে। 


মোটামুটিভাবে এই পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো অনেকটা সমান্তরালে চলতে থাকে। সংস্কার প্রস্তাব আসার সঙ্গে সঙ্গে মতপার্থক্যগুলো বাড়তে থাকে। যেমন সংবিধান সংশোধন, নাকি পুনর্লিখন হবে– এ বিতর্ক শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে একে অন্যের প্রতিপক্ষ হিসেবে উপস্থাপিত করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সংবিধানকে কবর দেওয়ার কথা বলে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলকে ক্ষুব্ধ করে দেয়। ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে তারা। একসময় সংবিধান সংস্কার কমিটি সংস্কার, নাকি নতুন রচনা– এমন শব্দ উচ্চারণ ব্যতিরেকে সংবিধানের মৌলিক বিষয়গুলো পরিবর্তন এমনকি দেশের নামও পরিবর্তনের প্রস্তাব করে প্রতিবেদন জমা দেয়। 


বোধ করি দলগুলোর মধ্যে সর্বাধিক বিতর্ক হয়েছে সংবিধান প্রশ্নেই। যা একসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের অঘোষিত নেতৃত্বে সংস্কার প্রক্রিয়াই শব্দ লড়াইয়ের মুখে পড়ে। এই সংস্কার চালানোর অধিকার নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। আলোচনার পক্ষ-বিপক্ষ তখন বহুমুখী হয়ে পড়ে। সরকার পক্ষ তাদের দায়িত্বকাল নিয়ে যা বলছে, তাও বিএনপির মনঃপূত হয় না। সংস্কার কর্মসূচি নিয়েও তাদের  আপত্তি দেখা দেয়। লড়াইটা তখন সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়েও চলতে থাকে। বিএনপি দাবি করে সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও বলতে থাকেন বিএনপি চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব কায়েম করেছে। এর মধ্যে তৃতীয় ধারার কিছু মানুষ বলতে থাকে– চাঁদাবাজি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব যেহেতু সরকারের, সুতরাং ওমুক এটা করছে তমুক এটা করছে, এমনটা বলে দায়মুক্ত থাকার সুযোগ নেই। 
দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থেকে যাওয়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব যে মানুষের জন্য পীড়াদায়ক, তা এদের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। এবার নিয়ন্ত্রণে সরকার সফল কিংবা ব্যর্থ, সেটি ভিন্ন বিষয়। 


কাদা ছোড়াছুড়ির মাত্রাটা একটু বেশি হওয়ার পরই প্রধান উপদেষ্টা সর্বদলীয় বৈঠক আহ্বান করেন। সেখানে দু-একটি দল যোগদানে বিরত থাকে। বৈঠকের পূর্বক্ষণেও মানুষের প্রশ্ন ছিল বৃহত্তম দল বিএনপি বৈঠকে যোগ দেবে তো? সর্বশেষ একজন সাংগঠনিক সম্পাদক দলের প্রতিনিধিত্ব করে মান রক্ষা করেছেন। কিন্তু কিছু প্রশ্নেরও জন্ম হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা আহূত বৈঠকে দলের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক প্রতিনিধিত্ব করার অর্থ কি দূরত্ব বুঝিয়ে দেওয়া? তবে বৈঠকে অংশ নেওয়া সাংগঠনিক সম্পাদক মনে করিয়ে দিলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বিভাজন হতাশাজনক। এই বিষয়টি অনুধাবন করেই প্রধান উপদেষ্টা যে বৈঠক ডেকেছেন, তা সবাই বুঝতে পেরেছে।


কিন্তু নির্বাচন আগে, নাকি সংস্কার আগে কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে, নাকি জাতীয় নির্বাচন আগে– এমন বিতর্ক জীবন্তই রয়ে গেছে। সুরাহা হয়নি জুলাই আন্দোলনের প্রোক্লেমশনের প্রসঙ্গটিও। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, আন্দোলনে বিএনপিসহ অন্যান্য পক্ষের অংশগ্রহণের স্বীকৃতি প্রশ্নে প্রোক্লেমশন ঘোষণা আপাতত স্থগিত রয়ে গেছে। নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, আন্দোলনের আগেই যে ঘোষণাপত্র হওয়ার কথা ছিল, আন্দোলনের পাঁচ মাস পরও তা ঘোষণা হচ্ছে না কেন? তাহলে আন্দোলনের লক্ষ্য নয়, পক্ষগুলোর সুবিধা-স্বার্থই কি মূল বিষয় এখানে?


রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য ট্যাগ লাগানোর বিষয়টিও আলোচনাযোগ্য। কেউ কিছু করলেই আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা আওয়ামী ট্যাগ লাগানো শুরু হয়েছে। বর্তমানে রাজনীতির মাঠে থাকা প্রায় সবাই ট্যাগ চর্চা করে। মারামারি-চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব যেখানে সেখানেই আওয়ামী ট্যাগ লাগানোর প্রবণতা বেশি। এই যে একে অন্যের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে, এতে করে কি অভ্যুত্থানের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে? এমন প্রশ্ন যেমন আসছে, পাশাপাশি জনমত ও জননিরাপত্তাও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এ থেকে বাঁচার পথ নিশ্চয়ই রাজনৈতিক দলগুলোর অজানা থাকার কথা নয়। তারা যদি নিজ উদ্যোগে অভিন্ন লক্ষ্য নির্ধারণ করে তাহলে হয়তো সংস্কার ও নির্বাচন দুটো লক্ষ্যই অর্জন সহজতর হবে।

মোস্তফা হোসেইন: সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক ষমত সরক র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে একজনের মৃত্যু

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে জেলা শহর রেলগেইট সংলগ্ন এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক কাউসার আলম জানান, দুপুর ২টার দিকে নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে চট্টগ্রামের দিকে রওনা হয়। রেলগেটের কাছাকাছি একজন ব্যক্তি এই ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হন।

তিনি আরো জানান, মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তার পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। মরদেহ জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্তের জন্যে পাঠানো হচ্ছে। অপমৃত্যু মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে ট্রেনের ধাক্কায় অজ্ঞাত নারীর মৃত্যু 

ঝিনাইদহে তুচ্ছ কারণে ছুরিকাঘাতে ছোট ভাই নিহত

ঢাকা/মনিরুজ্জামান/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
  • ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
  • সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ
  • সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
  • স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি দগ্ধ রোগীকেও বাঁচানো যায়
  • রাগ নিয়ন্ত্রণে হাদিসের ৭ উপদেশ
  • চুলে গুঁজে দিলেন ৭১১ গলফ ‘টি’
  • বাবা হারালেন চিত্রনায়িকা মিষ্টি জান্নাত
  • ‘নতুন একটি দলের কয়েকজন মহারথী’ বলার পর বক্তব্য বদলালেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে একজনের মৃত্যু