Samakal:
2025-11-02@17:00:23 GMT

আর কত হযবরল

Published: 10th, March 2025 GMT

আর কত হযবরল

রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় না থাকলেও মাঠে সোচ্চার। আর ক্ষমতার লক্ষ্যে তোড়জোড় থাকাটা স্বাভাবিকও বটে। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার এই লড়াইয়ের চিত্র-চরিত্র কেমন? মত-ভিন্নমত প্রকাশের ভঙ্গি কি স্বাভাবিক? মানুষ কী বার্তা পাচ্ছে তাদের বক্তব্য-বিবৃতি এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে? 


আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে বিদায়ের কৃতিত্ব দাবি সবাই করে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনেও সবাইকে একমত হতে দেখা গেছে। কিন্তু এর পরই দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে। দলীয় রাজনীতির বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যৎ প্রশ্নে তাদের মত ও পথের ভিন্নতা প্রকট থেকে প্রকটতর হয়ে উঠছে। এই ভিন্নতা এতই বেশি যে, মনে হতে পারে অভিধানের শব্দ হযবরল-কে বদলে দিয়ে নতুন শব্দ আবিষ্কার করতে হবে। এই হযবরল অবস্থা গোটা রাজনীতিকে এখন গিলে খাচ্ছে। মনে হতে পারে, লক্ষ্যহীন পথের যাত্রী সবাই। একজন একটা বিষয়ে যা বলে আরেকজন উল্টোটা, একজন একটা সুপারিশ করলে কালক্ষেপণ না করে আরেকজন তার উল্টোটা বলে দিচ্ছে। 


মোটামুটিভাবে এই পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো অনেকটা সমান্তরালে চলতে থাকে। সংস্কার প্রস্তাব আসার সঙ্গে সঙ্গে মতপার্থক্যগুলো বাড়তে থাকে। যেমন সংবিধান সংশোধন, নাকি পুনর্লিখন হবে– এ বিতর্ক শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে একে অন্যের প্রতিপক্ষ হিসেবে উপস্থাপিত করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সংবিধানকে কবর দেওয়ার কথা বলে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলকে ক্ষুব্ধ করে দেয়। ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে তারা। একসময় সংবিধান সংস্কার কমিটি সংস্কার, নাকি নতুন রচনা– এমন শব্দ উচ্চারণ ব্যতিরেকে সংবিধানের মৌলিক বিষয়গুলো পরিবর্তন এমনকি দেশের নামও পরিবর্তনের প্রস্তাব করে প্রতিবেদন জমা দেয়। 


বোধ করি দলগুলোর মধ্যে সর্বাধিক বিতর্ক হয়েছে সংবিধান প্রশ্নেই। যা একসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের অঘোষিত নেতৃত্বে সংস্কার প্রক্রিয়াই শব্দ লড়াইয়ের মুখে পড়ে। এই সংস্কার চালানোর অধিকার নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। আলোচনার পক্ষ-বিপক্ষ তখন বহুমুখী হয়ে পড়ে। সরকার পক্ষ তাদের দায়িত্বকাল নিয়ে যা বলছে, তাও বিএনপির মনঃপূত হয় না। সংস্কার কর্মসূচি নিয়েও তাদের  আপত্তি দেখা দেয়। লড়াইটা তখন সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়েও চলতে থাকে। বিএনপি দাবি করে সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও বলতে থাকেন বিএনপি চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব কায়েম করেছে। এর মধ্যে তৃতীয় ধারার কিছু মানুষ বলতে থাকে– চাঁদাবাজি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব যেহেতু সরকারের, সুতরাং ওমুক এটা করছে তমুক এটা করছে, এমনটা বলে দায়মুক্ত থাকার সুযোগ নেই। 
দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থেকে যাওয়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব যে মানুষের জন্য পীড়াদায়ক, তা এদের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। এবার নিয়ন্ত্রণে সরকার সফল কিংবা ব্যর্থ, সেটি ভিন্ন বিষয়। 


কাদা ছোড়াছুড়ির মাত্রাটা একটু বেশি হওয়ার পরই প্রধান উপদেষ্টা সর্বদলীয় বৈঠক আহ্বান করেন। সেখানে দু-একটি দল যোগদানে বিরত থাকে। বৈঠকের পূর্বক্ষণেও মানুষের প্রশ্ন ছিল বৃহত্তম দল বিএনপি বৈঠকে যোগ দেবে তো? সর্বশেষ একজন সাংগঠনিক সম্পাদক দলের প্রতিনিধিত্ব করে মান রক্ষা করেছেন। কিন্তু কিছু প্রশ্নেরও জন্ম হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা আহূত বৈঠকে দলের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক প্রতিনিধিত্ব করার অর্থ কি দূরত্ব বুঝিয়ে দেওয়া? তবে বৈঠকে অংশ নেওয়া সাংগঠনিক সম্পাদক মনে করিয়ে দিলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বিভাজন হতাশাজনক। এই বিষয়টি অনুধাবন করেই প্রধান উপদেষ্টা যে বৈঠক ডেকেছেন, তা সবাই বুঝতে পেরেছে।


কিন্তু নির্বাচন আগে, নাকি সংস্কার আগে কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে, নাকি জাতীয় নির্বাচন আগে– এমন বিতর্ক জীবন্তই রয়ে গেছে। সুরাহা হয়নি জুলাই আন্দোলনের প্রোক্লেমশনের প্রসঙ্গটিও। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, আন্দোলনে বিএনপিসহ অন্যান্য পক্ষের অংশগ্রহণের স্বীকৃতি প্রশ্নে প্রোক্লেমশন ঘোষণা আপাতত স্থগিত রয়ে গেছে। নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, আন্দোলনের আগেই যে ঘোষণাপত্র হওয়ার কথা ছিল, আন্দোলনের পাঁচ মাস পরও তা ঘোষণা হচ্ছে না কেন? তাহলে আন্দোলনের লক্ষ্য নয়, পক্ষগুলোর সুবিধা-স্বার্থই কি মূল বিষয় এখানে?


রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য ট্যাগ লাগানোর বিষয়টিও আলোচনাযোগ্য। কেউ কিছু করলেই আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা আওয়ামী ট্যাগ লাগানো শুরু হয়েছে। বর্তমানে রাজনীতির মাঠে থাকা প্রায় সবাই ট্যাগ চর্চা করে। মারামারি-চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব যেখানে সেখানেই আওয়ামী ট্যাগ লাগানোর প্রবণতা বেশি। এই যে একে অন্যের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে, এতে করে কি অভ্যুত্থানের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে? এমন প্রশ্ন যেমন আসছে, পাশাপাশি জনমত ও জননিরাপত্তাও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এ থেকে বাঁচার পথ নিশ্চয়ই রাজনৈতিক দলগুলোর অজানা থাকার কথা নয়। তারা যদি নিজ উদ্যোগে অভিন্ন লক্ষ্য নির্ধারণ করে তাহলে হয়তো সংস্কার ও নির্বাচন দুটো লক্ষ্যই অর্জন সহজতর হবে।

মোস্তফা হোসেইন: সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক ষমত সরক র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে অধ্যাদেশের খসড়াটি সচিব কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও কার্যক্রমের খসড়া তৈরি করেছে।

খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এই কমিশনের চেয়ারপারসন হবেন। সদস্য থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ; গ্রেড-২ পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা; পুলিশ একাডেমির একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ; আইন, অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন একজন মানবাধিকারকর্মী।

আরও পড়ুনপুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে স্বাধীন কমিশন অপরিহার্য৮ ঘণ্টা আগেকমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন।

কমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন। সদস্যরা যোগদানের দিন থেকে চার বছর নিজ নিজ পদে থাকবেন। মেয়াদ শেষে কোনো সদস্য আবার নিয়োগের যোগ্য হবেন না।

অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বলা হয়েছে—এই কমিশন যেকোনো কর্তৃপক্ষ বা সত্তাকে কোনো নির্দেশ দিলে উক্ত কর্তৃপক্ষ বা সত্তা অনধিক তিন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। তবে কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো অসুবিধা হলে সে ক্ষেত্রে নির্দেশ বা সুপারিশ পাওয়ার অনধিক তিন মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কমিশন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে যে নির্দেশ বা সুপারিশ পাঠাবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ বা সুপারিশ কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে কমিশনকে জানাতে হবে।

আরও পড়ুনকোনো দল নয়, পুলিশের আনুগত্য থাকবে আইন ও দেশের প্রতি৯ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এই কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের জন্য সাত সদস্যের সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। খসড়া অধ্যাদেশে প্রধান বিচারপতির মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মনোনীত একজন সরকারদলীয় এবং একজন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বাছাই কমিটিতে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ন্যূনতম পাঁচ সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম হওয়া ও বাছাই কমিটির বাছাই প্রক্রিয়া শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে।

আরও পড়ুন‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা১৭ ঘণ্টা আগে

পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ খসড়ায় কমিশন প্রতিষ্ঠা, কার্যালয়, সদস্যদের নিয়োগ, মেয়াদ, কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য কারা অযোগ্য, সদস্যদের পদত্যাগ, অপসারণ, পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান-নিষ্পত্তি, পুলিশ সদস্যদের সংক্ষোভ নিরসন, পুলিশপ্রধান নিয়োগ, আইন-বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন ও গবেষণা বিষয়েও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

আরও পড়ুনমাঝেমধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কি আমাদের লোক’: আইজিপি১৭ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির