ধর্ষণ মামলায় আসামিপক্ষে দাঁড়ানো নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে ‘ছাত্র–জনতার সংঘর্ষ’, আহত ৪
Published: 10th, March 2025 GMT
ধর্ষণ মামলায় আসামিপক্ষে আইনজীবী দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে জামালপুরে ‘ছাত্র–জনতার’ সঙ্গে আইনজীবী ও তাঁদের সহকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় ছাত্র, আইনজীবীসহ চারজন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার দুপুরে জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে।
আহত ব্যক্তিরা হলেন আইনজীবী খলিলুর রহমান, ছাত্র মো. হৃদয় (২২), মো. তারেক (২২) ও মোহাম্মদ মোয়াজ (১৯)। তাঁদের মধ্যে খলিলুর রহমান জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। তবে ওই তিন ছাত্র হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আহতরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা জানিয়েছেন।
আইনজীবী, পুলিশ ও ছাত্র সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ধর্ষণকারীর পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াতে পারবেন না—এমন দাবিতে আজ দুপুর ১২টা থেকে জামালপুর আদালত প্রাঙ্গণে ‘সচেতন ছাত্র–জনতার’ ব্যানারে বিক্ষোভ শুরু করেন ২০–৩০ জন ছাত্র। দীর্ঘ সময় ধরে আদালত প্রাঙ্গণে তাঁরা ওই কর্মসূচি পালন করছিলেন। দুপুর দেড়টার দিকে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তাঁদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে কথা বলার জন্য যান। এ নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে তাঁদের কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে চারজন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোহাম্মদ মোয়াজ বলেন, ‘আমরা সবাই জুলাইয়ের আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম। অনেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা শাখার সঙ্গে আছি আবার অনেকের পদ নেই। তবে সবাই একসঙ্গে যেকোনো আন্দোলন করি। একজন ধর্ষণের শিকার নারীর পক্ষে আমরা দাঁড়িয়েছি। বাক্ ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ওই মামলার আসামিকে বাঁচাতে একজন আইনজীবী জাল-জালিয়াতিও করছেন। আমরা গিয়েছিলাম যাতে ধর্ষণের শিকার নারীরা সঠিক বিচার পান। কিন্তু আইনজীবী ও তাঁদের সহকারীরা আমাদের বেধড়ক পিটিয়েছেন। আমার সারা শরীরে লাঠির আঘাত।’
এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রিশাদ রেজওয়ান বলেন, আন্দোলনকারীদের কথা শোনার জন্য আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে আসার অনুরোধ করা হয়েছিল। সেখানে বসে সবকিছুর সমাধান করার কথা ছিল। কিন্তু এই সময়টুকু তাঁরা দেননি। এর মধ্যেই জ্যেষ্ঠ একজন আইনজীবীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। আরও একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। অন্য আরেকজন আইনজীবীকে তাঁরা অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে আদালত প্রাঙ্গণে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যায়। একজন আইনজীবী যেকোনো মামলা পরিচালনা করতে পারেন। এ ঘটনায় আলোচনার মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক মীর ইসহাক হাসান বলেন, ‘ছাত্র–জনতার ব্যানারে ওই আন্দোলন চলছিল। তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতে না থাকলেও জুলাই আন্দোলনে তাঁরা অংশ নিয়েছিলেন। তাঁরা আদালতে গিয়েছিলেন ধর্ষণের শিকার নারীরা যাতে সহজেই আইনি সহায়তা পান এবং আসামিরা যাতে আইনজীবীদের সহায়তা না পান। ওই বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন করার সময় আইনজীবী ও তাঁদের সহকারী এবং বহিরাগত ব্যক্তিরা ছাত্র–জনতার ওপর ন্যক্কারজনক হামলা করেন এবং ব্যাপক মারধর করেন।’
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবী শাহ্ মো.
জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াহিয়া আল মামুন বলেন, আজকে আদালত প্রাঙ্গণের ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। ঘটনাটি তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ত র জনত র আইনজ ব দ র ন আইনজ ব ন বল ন র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরাও বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে: হাইকোর্ট
শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ দিতে পারবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নেওয়া সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি রেজাউল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রায় দেন।
একই সঙ্গে ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালার আলোকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে পরীক্ষার আয়োজন করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২০২৫ সালের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তি পরীক্ষা আগামী ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
আইনজীবীদের তথ্যমতে, শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গত ১৭ জুলাই এক স্মারকে জানায়। এই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কেরানীগঞ্জ পাবলিক ল্যাবরেটরি স্কুলের পরিচালক মো. ফারুক হোসেন, শিক্ষক ও অভিভাবক প্রতিনিধিসহ ৪২ জন চলতি বছর রিটটি করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে ওই স্মারকের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য স্থগিত করেন। শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতিসংক্রান্ত ১৭ জুলাইয়ের ওই স্মারক (ম্যামো) কেন আইনগত কর্তৃত্ব–বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। সেই সঙ্গে ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালার আলোকে বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়।
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নিয়াজ মোর্শেদ। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সৈয়দ ইজাজ কবির।
পরে আইনজীবী নিয়াজ মোর্শেদ প্রথম আলোকে বলেন, শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ দিতে পারবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গত ১৭ জুলাইয়ে স্মারক অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালা অনুসারে সব বেসরকারি অর্থাৎ বেসরকারি নিম্নমাধ্যমিক, রেজিস্ট্রার্ড কিন্ডারগার্টেন, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রেজিস্টার্ড/অস্থায়ী রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত/স্থাপনা ও প্রাথমিক অনুমতিপ্রাপ্ত চালু বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এ জন্য ১৫ দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের ফলে শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই নয়, এসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।
প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ১৯৮১ সালে প্রবর্তন করা হয় বলে জানান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৫ সালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এটি চলে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নতুন নীতিমালার আলোকে পিএসসি পরীক্ষা হয়। এতে যারা ভালো করত, তাদের বৃত্তি দেওয়া হতো। তবে করোনার সময় ২০২০ ও ২০২১ সালে তা বন্ধ ছিল। ২০২২ সালে আবার বৃত্তি পরীক্ষা শুরু হয়, তবে তা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার নীতিমালার (সংশোধিত–২০১৬) আলোকে। বিভিন্ন কারণে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে এটি বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২৫ সালে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে। বেসরকারি শিক্ষার্থীরাও প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে—এমন নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তারা যাতে পরীক্ষা দিতে পারে সে জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।