৬ বছরের শিশুকে ধর্ষণের পরদিন অসুস্থ বাবার মৃত্যু, দুই কিশোর গ্রেপ্তার
Published: 10th, March 2025 GMT
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় ছয় বছরের এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার বিকেলে এ ঘটনার পর আজ সোমবার অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত দুই কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে ভুক্তভোগী ওই শিশুর বাবা সোমবার বেলা ১১টার দিকে মারা গেছেন। শিশুটির মামা বলেন, শিশুটির বাবা বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। রোববার বিকেলে তাঁর মেয়ের ঘটনা শোনার পর থেকে আরও অসুস্থতাবোধ করতে থাকেন। একপর্যায়ে সোমবার বেলা ১১টায় তিনি মারা যান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার বিকেলে শিশুটি বাড়ির পাশে খেলাধুলা করছিল। একপর্যায়ে ওই শিশুটিকে অভিযুক্ত কিশোরদের একজন লোভ দেখিয়ে নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে সেখান থেকে শিশুটির কান্না শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে যান। সেখানে শিশুটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। লোকজন আসার আগেই অভিযুক্ত কিশোরেরা পালিয়ে যায়। তবে শিশুটি উপস্থিত লোকজন ও তার পরিবারকে জানায় কারা তাকে এখানে নিয়ে এসেছে। তাৎক্ষণিক উপস্থিত লোকজন ও পরিবারের সদস্যরা শিশুটিকে উদ্ধার করে বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে আজ সোমবার সকালে হবিগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর নানি বাদী হয়ে বানিয়াচং থানায় মামলা করেছেন। এর আগে সোমবার ভোরে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুই কিশোরকে আটক করে। তাদের একজনের বয়স ১৭ বছর ও অন্যজনের বয়স ১৫ বছর।
হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটি আগের চেয়ে অনেক ভালো আছে। সোমবার বিকেলে পরিবারের সদস্যরা তাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে গেছেন।
বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর সোমবার ভোরে অভিযান চালিয়ে শিশুটি ধর্ষণের ঘটনায় দুই কিশোরকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আটকদের আজ আদালতের মাধ্যমে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
সাপ্তাহিক ‘পঙক্তি’র দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নারীর সমান অধিকার, সাংস্কৃতিক জাগরণ ও মুক্তচিন্তার বিকাশ ছাড়া বৈষম্যহীন সমাজ গঠন সম্ভব নয় এমন মত প্রকাশ করেছেন বক্তারা।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাপ্তাহিক পঙক্তির দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আরো পড়ুন:
‘নো ওয়েজ বোর্ড, নো মিডিয়া’সহ ৩৮ দাবি সংবাদকর্মীদের
‘সাম্য, মর্যাদা ও আলোকিত সমাজের স্বপ্নে ৭১ ও ২৪ এর তরুণরা’
অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ বলেন, “নারীরা অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও পুরুষতান্ত্রিক নানা বৈষম্য ও হেনস্তার শিকার হন। আমরা দেখছি, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও নারী ও শিশুরা লাঞ্ছিত, নিপীড়িত হচ্ছে, এটি লজ্জার বিষয়। আমরা এমন সমাজ চাই না। আমরা চাই একটি সত্যিকারের বৈষম্যমুক্ত সমাজ, যেখানে নারী–পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত থাকবে।”
প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া বলেন, “আমরা বর্তমানে একটি সাংস্কৃতিকভাবে খারাপ সময় পার করছি। একটি নতুন রাজনৈতিক আন্দোলন বারবার ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। সর্বক্ষেত্রে যে অবক্ষয় দেখা দিয়েছে, তাতে একমাত্র একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লবই আমাদের জাতিকে রক্ষা করতে পারে।”
কবি ও কলামিস্ট সোহরাব হাসান বলেন, “ফেসবুক–ইউটিউবের যুগে একটি সাহিত্য পত্রিকা টিকিয়ে রাখা অত্যন্ত কঠিন কাজ। বর্তমানে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এক ধরনের বৈরী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আক্রান্ত হচ্ছে মাজার, দরগা, শিল্পী ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক তৎপরতা। এই আক্রমণ জাতিসত্তার উপর আক্রমণ, আমাদের শিল্প–সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সুকুমার ভিত্তির উপর আঘাত। এর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে লড়াই করতে হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে সাপ্তাহিক পঙ্ক্তির সম্পাদক কবি জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না ওরফে পান্না বেগম বলেন, “আজ আমি খুব আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত। আমি একজন সফল নারী বলে নিজেকে সম্মান করি। আমি ২৬ বছর ধরে কাজ করি। কারোর মুখাপেক্ষী হইনি। একটি পত্রিকা কারোর সহযোগিতা ছাড়া নিয়মিত প্রকাশ করা এতোটা সহজ নয়। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আজকের এই জায়গাটি তৈরি হয়েছে।”
বাংলাদেশের আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মফিজুর রহমান বাবু বলেন, “সাপ্তাহিক পঙ্ক্তি পত্রিকাটি নিয়ে প্রথম থেকেই আমার একটি চিন্তা ছিল। পত্রিকাটির নাম পঙ্ক্তি কেন? খুব চিন্তা করে এর দুইটি কারণ খুঁজে পেলাম। একটি হলো-এই পত্রিকাটির সম্পাদক একজন কবি ও সাংবাদিক। উনার কবিসত্তার চিন্তাধারা থেকে এই নামটি নির্ধারণ করেছেন। কারণ পঙ্ক্তি শব্দের অর্থ কবিতার লাইন বা সারি। আর দ্বিতীয়টি হলো- সম্পাদকের একমাত্র কন্যার নাম পঙ্ক্তি। সন্তানের প্রতি একজন মায়ের যে অসাধারণ ভালোবাসা, তারই বহিঃপ্রকাশ হলো সাপ্তাহিক পঙ্ক্তি।”
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক মানিক মুনতাসির, কবি ও সাংবাদিক বজলুর রহমান, কবি মোশাররফ হোসেন ইউসূফ, বাংলানিউজের সাংবাদিক তুলনা আফরিন প্রমুখ।
ঢাকা/এসবি