ভেজাল ও বিষযুক্ত খাদ্য গ্রহণে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কায় সবাই। ফরমালিন ও রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণে সতেজ-সজীব খাদ্য ধারণ করছে নীরব ঘাতকের রূপ। বাড়ছে রোগ-ব্যাধির হরেক দুর্ভোগ। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন স্থানে সুহৃদরা মানববন্ধন, র্যালি, লিফলেট বিতরণসহ তোলেন ভেজাল-বিষমুক্ত খাবারের দাবি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
আবু সাহাদাৎ বাঁধন
আমাদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল হলো খাদ্য। কিন্তু খাদ্যে ভেজালের পরিমাণ এতটাই বেড়ে গেছে, তৈরি অথবা কাঁচা খাদ্য কোনোটির ওপরই মানুষ আর আস্থা রাখাতে পারছে না। গোটা বিশ্বেই খাদ্যে ভেজালের প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৬০ কোটি মানুষ ভেজাল ও দূষিত খাবার গ্রহণের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর মধ্যে ৪ লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান। ক্যান্সার, কিডনি রোগ, লিভারের সমস্যা, হজমজনিত জটিলতা ও পুষ্টিহীনতার মতো ভয়াবহ রোগের একটি বড় কারণ হচ্ছে ভেজাল খাদ্য। এসব জটিল ও অনিরাময়যোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ অকালে মারা যাচ্ছেন। উন্নয়নশীল দেশে এই প্রবণতা বেশি। এক শ্রেণির মানুষের অতিমুনাফা ও লোভের কারণেই আমরা মৃত্যুঝুঁকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তাই জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে এক সচেতনতামূলক প্রচার অভিযান পরিচালনা করেছে সুহৃদ সমাবেশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট।
৭ মার্চ ইফতারের পর সংগঠনের সদস্যরা স্থানীয় হোটেল, ফলের দোকান, জুসের দোকানসহ বিভিন্ন কাঁচামালের দোকানে যান। তারা দোকানিদের সচেতন করেন এবং ক্রেতাদের ভেজালমুক্ত ও নিরাপদ খাদ্য কেনার বিষয়ে পরামর্শ দেন। শিক্ষার্থীরা খাদ্যে ভেজালের ভয়াবহ প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করেন এবং সুস্থ থাকার জন্য বিশুদ্ধ খাবার গ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
প্রচার অভিযানে যুক্ত হন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ খালিদ ও তাজিউর রহমান তাজ, কোষাধ্যক্ষ দিপু বিশ্বাস, সুহৃদ সিয়াম, বিপ্লবসহ অন্যান্য শিক্ষার্থী। তারা বাজারে উপস্থিত ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলেন, খাদ্যে ভেজাল শনাক্ত করার সহজ উপায় সম্পর্কে পরামর্শ দেন এবং সাধারণ মানুষকে ভেজালমুক্ত খাবার কেনার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করেন। সংগঠনের সদস্যরা সাধারণ মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
রাবি সুহৃদরা ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এ ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা করবেন। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হোটেল-রেস্তোরাঁ, বাজার ও জনবহুল স্থানে সেমিনার, লিফলেট বিতরণ ও জনসচেতনতা কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন।
এ সচেতনতামূলক প্রচার অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে স্থানীয়রা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এমন প্রচার অভিযান নিয়মিত চালানো হলে মানুষ আরও সচেতন হবে এবং খাদ্যে ভেজাল মেশানোর প্রবণতা কমবে।’
সচেতনতার মাধ্যমে যদি জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা যায়, তাহলে ধীরে ধীরে খাদ্যে ভেজাল কমবে এবং সুস্থ সমাজ গড়ে উঠবে। সমকাল সুহৃদ সমাবেশের এ মহতী উদ্যোগ জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং ভবিষ্যতে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে আরও বড় পরিসরে কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগাবে।
সভাপতি সুহৃদ সমাবেশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
বাগেরহাট
তানজীম আহমেদ
ফুটপাত থেকে হোটেল, রান্নাঘর থেকে শুরু করে ভোক্তার খাবার প্লেট পর্যন্ত খাদ্যের নিরাপত্তা ও গুণগত মান নিশ্চিতের দাবি সুহৃদদের। ভেজালমুক্ত নিরাপদ খাদ্যের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে সমকাল সুহৃদ সমাবেশ বাগেরহাট। কর্মসূচির আওতায় ৯ মার্চ সকালে বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন তারা। এ সময় প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবকরা ‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করি, সুস্থ সবল জীবন গড়ি’, ‘ভেজালমুক্ত খাবার, আমাদের সকলের অধিকার’, ‘সবাই মিলে হাত মেলাই নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত চাই’, ‘আগামী প্রজন্মের জন্য চাই নিরাপদ খাদ্যের পৃথিবী’, ‘নিরাপদ খাদ্য মানুষের মৌলিক অধিকার’সহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।
মানববন্ধন শেষে র্যালি সহকারে শহরের বিভিন্ন হোটেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানে নিরাপদ খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে প্রচারণা চালানো হয়। হোটেল-রেস্তোরাঁর রান্নাঘর পরিদর্শনসহ ফ্রিজে সংরক্ষিত খাদ্যপণ্য যাচাই ও দায়িত্বরতদের সচেতন করা হয়। এ সময় ব্যবসায়ীরা ভেজালমুক্ত খাবার সরবরাহ ও অন্য ব্যবসায়ীদের সতর্ক করার অঙ্গীকার করেন। পরে বাজারের চিত্র তুলে ধরে মোবাইল ফোনে এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে তদারকির জন্য জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাজার মনিটরিং কমিটিকে অনুরোধ জানানো হয়।
আয়োজনে সুহৃদ সভাপতি শেখ সাকির হোসেন, উপদেষ্টা বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্তী, আলী আকবর টুটুল, মোল্লা মাসুদুল হক, মাইনুল ইসলাম, হেদায়েত হোসেন লিটন, তানজীম আহমেদসহ কমিটির সদস্য শেখ শোহান, সরদার ইনজামামুল হক, শহিদুল ইসলাম, রানা ফকির, সোহাগ আহমেদ, শেখ সোহেল, শেখ আবু তালেব, আমিনুল ইসলাম, শেখ বাদশা, জয়তু বালাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক, উন্নয়নকর্মী, শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবকরা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, দেশে খুব বেশি খাদ্যাভাব না থাকলেও নিরাপদ খাদ্য এখনও নিশ্চিত হয়নি। ভেজাল খাদ্যের কারণে দিন দিন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে সাধারণ মানুষের।
সমন্বয়ক সুহৃদ সমাবেশ, বাগেরহাট
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র পদ খ দ য
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন
ফতুল্লার লালপুর পৌষাপুকুর পাড় এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানের জন্য মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
আগামী দুই দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে সড়ক অবরোধ সহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে মানববন্ধন থেকে। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ঢাকা-নারায়নগঞ্জ পুরাতন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। এতে করে ঢাকা-নারায়নগঞ্জ পুরাতন সড়কের উভয় পাশে যানবাহন বন্ধ হয়ে যানজটের সৃস্টি হয়।
বুধবার সকাল ১০ টার দিকে ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুস্ঠিত হয়। ১১ টার দিকে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ঘটনাস্থলে এসে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন আজ দুপুরের পর এলাকাবাসীর সাথে নির্বাহী কর্মকর্তা কথা বলবেন তাদের সমস্যার কথা শুনবেন এবং দ্রুতই তা সমাধানের জন্য কাজ করবেন।
এ সময় লালপুর পৌষাপুকুরপাড় পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মোসলেম উদ্দিন মুসা বলেন জলাবদ্ধতার কারনে মুসুল্লিরা নামাজ পরতে পারছেনা,কর্মজীবিরা কাজে যেতে পারছেনা,স্কুল -কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছেনা,নোংরা পানির কারনে ঘরে ঘরে পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ হয়ে পরেছে।
আমাদের কে আশ্বাস করেছিলো সেনাবাহিনী কতৃক যে পাম্প বসানো হয়েছিলো সেটা চালু হলে আমাদের দ্ঃূক কস্ট লাঘব হবে। কিম্ত সে পাম্প চালু হলেও আমাদের কস্ট শেষ হয়নি। সেই পাম্প আমাদের কোন কাজে আসেনি।
আমরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারক লিপি দিয়েছি তারা এসে দেখেও গেছে কিন্ত আজো সমস্যার সমাধান করা হয়নি। বিগত সরকারের আমলে তখনকার চেয়ারম্যান, এমপি সাহেবের নিকট গিয়েছি। শামীম ওসমান এসে দেখে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে। তা শুধু কথার কথাই ছিলো। কিন্ত কোন কাজে আসেনি।
ইউপি সদস্য মাঈনুদ্দিন জানায়, দীর্ঘদন যাবৎ আমরা এই সমস্যা আছি। মৃত মানুষের লাশ পযন্ত দাফন করতে পারছিনা। মসজিদের ভিতরে পানি নামাজ পরতে পারছিনা। রাস্তায় বের হতে পারছিনা।
আমাদের কোরবানী ঈদে পশু কোরবানী দিতে হয় ছাদের ওপরে নতুবা অন্য এলাকায় গিয়ে। এ সব কিছুই সরকারের সকল বিভাগের কর্মরত কর্তার জানে। কিন্ত শুধু আশ্বাস পেয়ে গেছি। কোন সমাধান পাইনি তাই আজ বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামতে হয়েছে আমাদেরকে।
আমরা দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার কবলে রয়েছি। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। ফতুল্লায় এতো উন্নয়ন হয়, কিন্তু লালপুর পৌষাপুকুর পাড়ের জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী কোন সমাধান হচ্ছেনা। আমরা চাই এই জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধান হোক।
ব্যবসায়ী হাবিব জানায়, আমাদের সমস্যা দীর্ঘদিনের। হাসিনা সরকারের আমলে আমাদের কোন কাজ হয় নাই। আমরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে স্মারক লিপি দিয়েছি। কিন্ত কোন কাজ হয়নি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোন প্রকার টেক্স আর দিবোনা।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, লালপুর- পৌষাপুকুরপাড় পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আঃ বারী, আজাদুর রহমান আজাদ,আলামিন বাগ পঞ্চায়েতের সাধারণ সম্পাদক রফিক, লালপুর আলামিন বাগ পঞ্চায়েতের সভাপতি মো. জনি, শামীম।