চট্টগ্রাম সিটিতে ৮ মাসে রাজস্ব আদায় মাত্র ৪০%, গাফিলতির অভিযোগে শোকজ
Published: 11th, March 2025 GMT
লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে পারছে না চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। অর্থবছরের আট মাস পার হয়ে গেলেও মাত্র ৪০ শতাংশ গৃহকর পেয়েছে সংস্থাটি। এখন আয় বাড়াতে শক্ত অবস্থান নিয়েছে সিটি করপোরেশন। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ কর কর্মকর্তা ও কর আদায়কারীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের গাফিলতির কারণে প্রত্যাশিত রাজস্ব আয় হচ্ছে না বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২৪–২৫) গৃহকর খাতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩৯০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আদায় হয়েছে ১৫৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে চার মাসে সিটি করপোরেশনকে আয় করতে হবে ২৩৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। যা অসম্ভব বলছেন রাজস্ব বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মীরা।
সিটি করপোরেশনের সেবার পরিধি বাড়ছে। ব্যয়ও বেড়ে চলছে। তাই রাজস্ব আদায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সিইও, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনচট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আয়ের দুটি বড় খাত হচ্ছে গৃহকর ও ট্রেড লাইসেন্স ফি। এসব খাত থেকে আসা অর্থ দিয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বেতন–ভাতা পরিশোধ করা হয়। এ ছাড়া নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে নালা–নর্দমা পরিষ্কার, মশা মারার ওষুধ ক্রয় এবং উন্নয়নকাজসহ বিভিন্ন খাতে অর্থ ব্যয় করা হয়। রাজস্ব আদায় কমলে এসব কাজে এর প্রভাব পড়ে। বর্তমানে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বেতন–ভাতা খাতে পরিশোধ করতে হয়। দেনা আছে ৪০০ কোটি টাকার বেশি।
মেয়র শাহাদাত হোসেন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রাজস্ব আয় বাড়াতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। দফায় দফায় রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এর পরও প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায় করতে ব্যর্থ হওয়ায় আট রাজস্ব সার্কেলের সাত কর কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশ দেওয়া হয় কর আদায়কারীদেরও।
কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়েছে, আগের অর্থবছরের তুলনায় এবার কর আদায় কম হওয়ায় মেয়র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আপনি আপনার অধীন থাকা কর্মীদের কাজ ঠিকভাবে তদারকি করেননি। যা আপনার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের অবহেলার শামিল। এ কারণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কেন নেওয়া হবে না তার কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া দুই কর কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, এটি ঠিক কারণ দর্শানোর নোটিশ নয়। এমনিতেই চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর চলতি অর্থবছর শুরু হওয়ার পর থেকে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। পরে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে সরকারের পতন হয়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে গৃহকর আদায় কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে মার্চের শেষে আদায়ের হার বাড়বে।
সিটি করপোরেশনের কর কর্মকর্তারা দাবি করছেন, গৃহকর পরিশোধে বেসরকারি খাতের চেয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রহ কম। দাবি অনুযায়ী, গৃহকর পরিশোধ না করার কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
রাজস্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ২২৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। কিন্তু ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরিশোধ করেছে ৭৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। পরিশোধের হার ৩৫ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা বেসরকারি খাতে আদায়ের হার ৪৭ শতাংশ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে পাওনা ১৬০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। পরিশোধ করা হয়েছে ৭৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
এদিকে ট্রেড লাইসেন্স খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। যদি সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগ আদায় করেছে ২৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশনের সেবার পরিধি বাড়ছে। ব্যয়ও বেড়ে চলছে। তাই রাজস্ব আদায়ের ওপর জোর দিচ্ছেন তাঁরা। এ জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এর অংশ হিসেবে যাঁরা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে ব্যর্থ হচ্ছেন তাঁদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আবার যাঁরা পূরণ করছেন তাঁদের ধন্যবাদ পত্র দেওয়া হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর কর মকর ত র কর মকর ত অন য য় গ হকর য় করত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।