সাহরির যে ৭টি বিধান মনে রাখা জরুরি
Published: 12th, March 2025 GMT
সাহরি খাওয়া রমজানে একটি পৃথক পুণ্যের কাজ। সাহরি রোজাদারকে সবল রাখে এবং রোজার কষ্ট তার জন্য হালকা করে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা দিনে শুয়ে রাতের নামাজের জন্য এবং সাহরি খেয়ে দিনে রোজা রাখার জন্য সাহায্য গ্রহণ কর।’ (ইবনে মাজাহ: ১২৩)
সাহরির বিধান সম্পর্কে সমাজে নানা ধরনের ভুল ধারণা ছড়িয়ে আছে, যার ফলে এই সহজ পুণ্যের কাজটি অনেক সময় আমাদের কাছে কঠিন মনে হয়। তেমন কয়েকটি জরুরি বিধান স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।
১.
২. ঘুমের কারণে সাহরি না খেতে পারলেও রোজা রাখতে হবে। সাহরি না-খাওয়ার অজুহাতে রোজা না রাখা পাপের কাজ। (বেহেশতি জেওর, ৩৫৩)
৩. সঠিক ক্যালেন্ডারে সুবহে সাদিকের যে সময় দেওয়া থাকে, তার দু-চার মিনিট আগে খানা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এক-দুই মিনিট আগে-পিছে হলে রোজা হয়ে যাবে, তবে ১০ মিনিট দেরি করে খাওয়া হলে রোজা হবে না। কিন্তু মনে রাখতে হবে, শুধু ক্যালেন্ডারের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়, কেননা, অনেক সময় তাতে ভুলও হয়ে থাকে। তাই সতর্ক থাকা দরকার। (আপকে মাসায়েল, মুফতি তাকি উসমানি, ৩/২০১)
৪. যদি এমন হয় যে, অপবিত্র ব্যক্তির গোসল করে সাহরি খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই; তাহলে কর্তব্য হলো, অজু করে বা হাত-মুখ ধুয়ে আগে সাহরি খেয়ে নেওয়া। পরে গোসল করে ফজর আদায় করা। কারণ, সাহরি গ্রহণের জন্য পবিত্রতা ফরজ নয়, বরং সুন্নত; আর নামাজ আদায় করার জন্য পবিত্রতা ফরজ। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি, ১/২০১)
আরও পড়ুনসাহ্রির ফজিলত ও বরকত০১ মার্চ ২০২৫৫. পেট পুরে সাহরি খাওয়া জরুরি নয়। দুই বা এক গ্রাস অথবা একটি খেজুর কিংবা কয়েকটি দানা মুখে দিয়ে নিলেও হবে। তাই ক্ষুধা না থাকলেও কিছু খেয়ে নেওয়া উচিত। আগে খাওয়া হয়ে গেলে এক ঢোক পানি খেলেও সাহরির ফজিলত অর্জিত হবে। (হেদায়া, ১/১৮৬)
৬. অনেকে রাতের শুরুতে বা মাঝামাঝি সময়ে সাহরি খেয়ে শুয়ে পড়েন এবং মনে করেন, রোজার নিয়ত করার পর বা সাহরি খাওয়া পর আর পানাহার করা যাবে না। এমন ধারণা সঠিক নয়। সুবহে সাদিক উদয় না হওয়া পর্যন্ত পানাহার করতে কোনও দোষ নেই। তাতে নিয়তেও কোনও ক্ষতি হবে না এবং রোজায়ও নয়। (হাশিয়ায়ে ফাতাওয়া দারুল উলুম, ৬/৪৪৬)
৭. সাহরির সময় কোনো ব্যক্তি এত পরিমাণ খেয়েছেন যে, সূর্যোদয়ের পর তার মধ্যে ঢেকুর আসতে শুরু করে। সঙ্গে গলা দিয়ে পানিও বের হয়। এর মাধ্যমে রোজার কোনও ক্ষতি হবে না। (ফাতাওয়া রশিদিয়া, ৩৭১)
আরও পড়ুনরাতের শেষ প্রহরে রাসুলুল্লাহ (সা.) কী আমল করতেন১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
আমাদের কাছে এসে সমস্যার কথা বলছে মানুষ: মির্জা ফখরুল
জনগণ বিএনপির কাছে এসে সমস্যার কথা বলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এসে ভিড় করছে লোকজন, যে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। আগে তো এমপি ছিল, মেয়র ছিল, তাঁরা কথা বলতে পারত, এখন কিন্তু তারা কথা বলতে পারছে না। এই যে বিষয়টা, এটা সবাইকে অনুধাবন করতে হবে।’
সবাইকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একজন সাধারণ চেতনার মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সেটা হয় না। কারণ, আমাদের বাংলাদেশে এখন একটা প্রবণতা দেখা দিয়েছে যে লিবারেল ডেমোক্রেসিকে এখন কিছুটা নিচে নেমে যেতে হচ্ছে। একটু পরাজিত হতে হচ্ছে পপুলিস্টদের কাছে রিসেন্ট টাইমে। এটা বাস্তবতা। এটা কেন হচ্ছে, গবেষকেরা বলতে পারবেন।’
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এ কথাগুলো বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জাতীয় প্রেসক্লাবের উদ্যোগে জুলাই–আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা প্রকৃতপক্ষে মুক্তি পেয়েছি ১৯৪৭ সালের ব্রিটিশ কলোনি থেকে। তারপরে পাকিস্তানি গোলামি শুরু হয়, তারপর বাংলাদেশি প্রভুদের গোলামি শুরু হয়েছে। এই গোলামিতেই আছি আমরা। আমরা একটা মুক্ত সমাজ চাই, আমরা একটা মুক্ত রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই, আমরা মানুষের মধ্যে মানুষের ভালোবাসা তৈরি করতে চাই।’
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আশুলিয়ায় পাঁচজন হত্যার ঘটনার স্মরণে গতকাল বুধবার বিএনপি একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব। গণ–অভ্যুত্থানে স্বামী হারানো এক নারীর কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সেই অনুষ্ঠানে এক মা তাঁর ১৪ মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে এসে বলেন, ‘আমার স্বামীকে এখানে হত্যা করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আমি জানি না, এই শিশুকে নিয়ে এখন কী করে বাঁচব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই বোনের কথা যখন আমি শুনি, তখন আমার মনে প্রশ্ন জাগে যে, আসলে রাষ্ট্রটা কী? রাষ্ট্র কার জন্য? যাঁরা এখন দায়িত্বে আছেন রাষ্ট্র পরিচালনার, তাঁরা এই এক বছরেও কি তাঁদের খুঁজে পেলেন না?’
২০২৪ সালের আগস্টে গণ–অভ্যুত্থানের পর পল্টনে বিএনপির সভা থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তখন আমার খুব সমালোচনা হয়েছিল। আপনারা বলেছিলেন যে বিএনপি ও মির্জা ফখরুল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এত অস্থির হয়ে গিয়েছে কেন? এখন আপনারাই বলছেন যে ব্যাপারটা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, যার শক্তি, যার ক্ষমতা, যার মালিকানা, তার হাতেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় এরই মধ্যে ১২টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলেন মির্জা ফখরুল। বাকি বিষয়েও ঐকমত্যে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কাদা–ছোড়াছুড়ি হলেও সেটার একটা সীমা থাকা দরকার বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোয় পারস্পরিক একটা বোঝাপড়া থাকতে হবে। সেটা না হলে এই কাদা–ছোড়াছুড়ি ভবিষ্যতে রাজনীতিকে আরও কলুষিত করে।
আলোচনা সভায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সময়ে নির্যাতিত পাঁচ সম্পাদককে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দৈনিক যায়যায়দিনের সম্পাদক শফিক রেহমান, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির ও দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ। প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, উত্তরায় শহীদ জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন ও জুলাই শহীদ আবদুল্লাহ বিন জাহিদের মা ফাতেমাতুজ জোহরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘জুলাই বাংলাদেশ’ নামে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার।