অন্যের হাত শক্ত করতে গিয়ে নিজের হাত শক্ত করতে পারিনি: ফারাহ খান
Published: 15th, March 2025 GMT
জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সিরাজুল আলম খানের ভাতিজী ফারাহ খান বলেছেন, “ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খান দাদা ভাইর নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের জন্ম হয়। ১৯৭২ সালের পরে এই দলটি যখন বিশাল কিছু করতে পারত, তখন বিভিন্ন কারণে ও নানা ভাগে আমাদের ভাগ করা হয়েছে। শুধু ভাগ করাই হয়নি, দলের আদর্শ থেকে বেড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “দলের আদর্শ থেকে বেড়িয়ে আমরা কখনো শেখ হাসিনার হাত, কখনো খালেদা জিয়ার হাতকে শক্ত করেছি। এরশাদ সাহেবের হাতকেও শক্ত করেছি। এটা করতে গিয়ে আমরা নিজেদের হাত শক্ত করতে পারিনি।”
শনিবার (১৫ মার্চ) দুপুরে খণ্ডিত জাসদকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান উদ্যোক্তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বরিশাল প্রেস ক্লাবে এই সভার আয়োজন করা হয়।
ফারাহ খান বলেন, “৭২ সালে আমরা ছিলাম একটি বটগাছ, ৫৩ বছর পরে আমরা হয়ে গেছি একটা পরগাছা। বড় বড় দলগুলোর ওপরে আমরা ভরসা করে শিখে গেছি। ওনারা আমাদের একটি-দুইটি আসন দিলে, সেই আসন নিয়ে আমরা খুশি হয়ে যাই। আমরা ওনাদের ওপর ভরসা করে ক্ষমতার সাধ পেতে চাই। যখন কিনা জাসদই হতে পারত এই দেশের মূল কাণ্ডারি। আমাদের সেই যোগ্যতা ছিল, আমাদের সঙ্গে তরুণ ও মেধাবীরা ছিল। কিন্তু আমরা সেটা পারিনি।”
তিনি আরো বলেন, “দলের নেতা হাসানুল হক ইনুর একছত্র সমর্থনের কারণে শেখ হাসিনা স্বৈরাচারী থেকে আরো বেশি স্বৈরাচারী হয়েছেন। দলের নেতাকর্মীদের তিনি বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। এ কারণে অনেকেই এলাকায় যেতে সাহস পায় না। আমরা এমন রাজনীতি করতে চাই না, যাতে এলাকায় যেতে ভয় পেতে হয়।”
ফারাহ খান বলেন, “জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিজয় এসেছে। এই বিজয় আসার পরে আমরা চেয়েছি, নতুন বাংলাদেশ দেখতে। আন্দোলনে আমি নিজে মাঠে ছিলাম, আপনারা এখানে অনেকেই হয়ত চেয়েছেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিদায় হোক, আমরা সেটি করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারিনি। নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী কোনো একটি শক্তি লাগবে। জাসদের যত ভাগই থাকুক, আমরা যদি সবাই এক হয়ে যাই, তাহলে নতুন সময়ের সেই শক্তিটা আমরাই হতে পারব। যে শক্তি বাংলাদেশকে আবার পুনর্গঠন করতে পারবে।”
সাবেক জাসদ নেতা ও সাবেক সাংসদ সদস্য সরদার আব্দুর রশিদের উপস্থিতিতে সভায় বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শহিদুলইসলাম মীরন, বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বাদল উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/পলাশ/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি