হঠাৎ প্রত্যাহার হওয়া নান্দাইল থানার ওসি ফরিদ আহমেদ অবশেষে কয়েকজন পাওনাদারের টাকা ফেরত দিয়েছেন এবং কয়েকজনকে দ্রুত দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। শুক্রবার বিষয়টি জানাজানি হলে রাতেই বেশ কয়েকজন পাওনাদারকে ডেকে নিয়ে টাকা পরিশোধ করেন।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর নান্দাইল থানার ওসি হিসেবে যোগ দেন ফরিদ আহমেদ। দায়িত্ব পালনকালে নান্দাইলে চুরি-ছিনতাইসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, নান্দাইলে কর্মরত অবস্থায় তিনি বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী কিনে টাকা পরিশোধ করেননি বলেও অভিযোগ ওঠে। এরপরও কয়েকবার জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি হিসেবে পুরস্কৃত হন।

বৃহস্পতিবার জেলা পুলিশ প্রশাসন ওসি ফরিদ আহমেদকে প্রত্যাহার করে ময়মনসিংহ পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করে একটি আদেশ জারি করে। পরদিন শুক্রবার ভোরেই তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগদানের উদ্দেশ্যে নান্দাইল ত্যাগ করেন। এ খবর পেয়ে শুক্রবার সকাল থেকে থানায় আসতে শুরু করেন পাওনাদাররা। তাঁকে না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সবাই চলে যান। স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে চাপে পড়েন প্রত্যাহার হওয়া ওসি ফরিদ। 

এরপর শুক্রবার নান্দাইলে এসে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পাওনাদারদের মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে টাকা পরিশোধ করেন। কারও কারও কাছ থেকে টাকা পরিশোধের সময় চেয়ে নিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

নান্দাইল পৌর বাজারের ইসহাক মার্কেটের পোশাক বিক্রেতা মোফাজ্জল হোসেন খান রেনু জানান, তিনি টাকা পেয়েছেন। শুক্রবার রাতে ওসি ফরিদ ফোন করে একটি জায়গায় ডেকে নিয়ে তাঁর পাওনা ১ লাখ ৪ হাজার ২৫০ টাকা পরিশোধ করেছেন।

সুবর্ণ ইলেক্ট্রনিকসের মালিক ফরহাদ জানান, তিনিও তাঁর বকেয়ার ১১ হাজার টাকা পেয়েছেন। এ ছাড়া অন্য কয়েকজন পাওনাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে অচিরেই বকেয়া পরিশোধ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।

শনিবার সন্ধ্যায় সাবেক ওসি ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘আমি নান্দাইল থেকে বদলি হয়েছি তা ঠিক, কিন্তু এখনও তো সেখানে আমার জিনিসপত্র রয়ে গেছে। তাই ভেবেছিলাম পরে এক সময় এসে পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করে যাব। কিন্তু এখন সবার দেনাই মিটিয়ে দিয়েছি।’

নান্দাইল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাহিদুল ইসলাম সমকালকে জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অনেকের টাকা ইতোমধ্যেই পরিশোধ করছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। বাকিদের টাকাও দ্রুতই পরিশোধ করবেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ক রব র

এছাড়াও পড়ুন:

কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা

জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।

এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।

আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?

উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’

আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ