প্রবেশপথের শুরুতেই সুউচ্চ মিনারটি নজর কাড়ে। মিনারের ওপর সবুজ রঙের গোলাকৃতি গম্বুজ। এই মিনার থেকেই আজান দেওয়া হয় রোজ ৫ ওয়াক্ত। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বাগিচাহাটের শঙ্খ নদের তীরে খান জামে মসজিদটি প্রায় ৩০০ বছর ধরে বহন করে চলেছে মোগল রাজত্বের ইতিহাস।

বাগ-ই-শাহ হাট থেকে বাগিচাহাট। শাহি সৈন্যদের বাগান অর্থাৎ যেখানে তাদের সমাহিত করা হয়েছে। খান মসজিদের প্রাঙ্গণে এমন ২২টি বাঁধানো কবর চোখে পড়ে। এক সারিতে ১৩টি আরেক সারিতে ৯টি। আরাকানদের সঙ্গে শঙ্খের তীরে প্রায়ই যুদ্ধ হতো মোগলদের। সেসব যুদ্ধে যেসব উচ্চপদস্থ সেনা নিহত হতেন, তাঁদের কবর দেওয়া হতো মসজিদের প্রাঙ্গণে।

বাংলার মোগল সুবাদার শায়েস্তা খানের ছেলে উমেদ খান অভিযান পরিচালনা করেন চট্টগ্রামে। আরাকানদের পরাজিত করে রামু পর্যন্ত হটিয়ে অঞ্চলটি তাদের দখলে নিয়ে আসে মোগলরা। তবে বর্ষাকাল হওয়ায় রামুর পাহাড়ি অঞ্চলে তাদের অবস্থান করা কঠিন হয়ে যায়। এ কারণে শঙ্খ নদের দুই পাড়ে সীমান্ত নির্ধারণ করেন তাঁরা। দুই পাড়ে সীমান্তরক্ষী নিযুক্ত হন আধু খান ও লক্ষণ সিংহ হাজারী। আধু খানের নামে পরে ২২টি মসজিদ, দিঘি ও হাটের পত্তন হয়। তারই একটি বাগিচাহাটের খান জামে মসজিদ ও দিঘি। ১৮ শতকের প্রথম দিকে এসব মসজিদ নির্মাণ করেন তিনি।

প্রায় ১৮ শতক জমির ওপর অবস্থিত খান জামে মসজিদটি মূলত ওই ২২টি কবরের জন্যই বিখ্যাত। মূল ভবনের মাঝবরাবর একটি বড় গম্বুজ ও দুই পাশে দুটি ছোট গম্বুজ রয়েছে। বর্তমান মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুরুল হক মাস্টার (৭৫) বলেন, পুরোনো মসজিদ ভবনে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় প্রায় ২৫ বছর আগে তৎকালীন মসজিদ পরিচালনা কমিটির প্রচেষ্টায় মসজিদটি সম্প্রসারণ করে দোতলা ভবন করা হয়। সে সময় সড়কসংলগ্ন আজান দেওয়ার জন্য যে মিনারটি ছিল, তা ভেঙে ফেলা হয়। ২২টি কবরের মধ্যে সড়কের পাশের ভিন্ন রঙের উঁচু কবরটি তৎকালীন সময়ের ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা শের-ই-জামালের। তিনি আধু খানের ছেলে ছিলেন।

পরবর্তী সময়ে দোহাজারী, লোহাগাড়া, মিরসরাই, চট্টগ্রাম শহরের জামাল খান, রহমতগঞ্জসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে আধু খান ও লক্ষণ সিংহ হাজারী নানান স্থাপনা নির্মাণ করেন। চন্দনাইশ গাছবাড়িয়া খানহাট, লোহাগড়া আধুনগরে খানহাট এসবই আধু খানের ও তাঁর বংশধরদের নির্মাণ। জামাল খানের নামকরণ হয় আধু খানের ছেলে শেরে জামাল খানের নামে, রহমতগঞ্জের নাম তাদের আত্মীয় রহমত খানের নামে, জোরারগঞ্জ হচ্ছে লক্ষণ সিংহ হাজারীর ছেলে জোরার সিংহ হাজারীর নামে।

মসজিদের পানির চাহিদা পূরণের জন্য ২৪ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে খান দিঘি। এ ছাড়া মসজিদের ভেতরে একটি কক্ষে রয়েছে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.

) ও শেখ মহিউদ্দীন আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)–এর পায়ের চিহ্ন। কদম রাসুল বলে চিহ্নিত এ জায়গাটি কাচ দিয়ে বাঁধাই করা। ধর্মপ্রাণ মানুষ অনেকেই এটি পরিদর্শন করেন। এ বিষয়ে লোকসাহিত্য ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক শামশুল আরেফীন প্রথম আলোকে বলেন, সে সময় আধু খান মধ্যপ্রাচ্য বা আরব দেশ থেকে রাসুলের (সা.) এবং আবদুল কাদের জিলানীর (রহ.) এই পদচিহ্ন এনে মসজিদটিতে স্থাপন করেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মসজ দ র গম ব জ

এছাড়াও পড়ুন:

সেই আছিয়ার পরিবারকে গরু ও ঘর দিল জামায়াত

মাগুরায় যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে মারা যাওয়া আলোচিত শিশু আছিয়ার পরিবারকে দুটি গরু ও একটি গোয়ালঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের পক্ষ থেকে আছিয়ার পরিবারকে এ উপহার দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামে আছিয়ার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উপহার হস্তান্তর করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চলের পরিচালক মোবারক হোসাইন।

এ সময় জেলা জামায়াতের আমির এম বি বাকের, সাবেক আমির ও কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আব্দুল মতিনসহ স্থানীয় এবং জেলা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা 

অপারেশনের পর শিশুর মৃত্যু: তদন্ত কমিটি গঠন, থানায় মামলা

গত ১৫ মার্চ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান আছিয়ার বাড়িতে যান। তিনি শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় দ্রুত বিচার চান। সে সময় আছিয়ার পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে একটি গোয়াল ঘর এবং দুটি গরু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জামায়াতের আমির। 

আট বয়সী আছিয়া মাগুরার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয় বলে পরিবারের তরফ থেকে অভিযোগ ওঠে। গত ৬ মার্চ অচেতন অবস্থায় মাগুরার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। অবস্থার অবনতি হলে মাগুরা হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে শিশুটিকে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে থেকে সেদিন সন্ধ্যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ঢাকায় নেওয়া হয় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। দুই দিন পর ৮ মার্চ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়। ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আছিয়ার।

ঢাকা/শাহীন/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ