সুনামগঞ্জে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি; কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় সময় আরও ১০ দিন বাড়ানো হয়। বর্তমানে জেলার হাওরগুলোতে বাঁধ নির্মাণের সব প্রকল্পের কাজ শেষ বলে ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে এসব কাজকে অসম্পূর্ণ উল্লেখ করে এতে অসংগতি, অবহেলা ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন’-এর নেতারা।

গত বুধবার দুপুরে শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসন ও পাউবোর ওই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেন কৃষকদের পক্ষে সোচ্চার হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা। বিষয়টি তুলে ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তাঁরা। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে এ বিষয়ে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন উপজেলায় অসমাপ্ত, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের নম্বরসহ সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলার হাওর বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সভাপতি ইয়াকুব বখত। সংগঠনটির নেতাদের ভাষ্য, এবারও কাজের শুরু থেকেই একধরনের ঢিলেমি ছিল। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তি, পাউবো ও প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নানা অনিয়ম হয়েছে। এ কারণে কাজে বিলম্ব হয়েছে। এখনো বিভিন্ন বাঁধে মাটি ফেলা হচ্ছে। অথচ বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। এতে বাঁধ দুর্বল হবে। 

তবে পাউবো সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ও হাওরে বাঁধ নির্মাণ-সংক্রান্ত জেলা কমিটির সদস্যসচিব মামুন হাওলাদার দাবি করেন, সব প্রকল্পের মাটির কাজ শেষ। এখন বাঁধের ঢালে ঘাস লাগানো, মাটি শক্তকরণ এসব আনুষঙ্গিক কাজ হচ্ছে। অনেক জায়গায় ঘাস পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ফসলের কোনো ঝুঁকি নেই।

জেলার পাউবো সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের নির্ধারিত সময়সীমা ছিল গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি। এবার ১২টি উপজেলার ৫৩টি হাওরে ৬৮৭ প্রকল্পে বাঁধের কাজ হচ্ছে। এ জন্য প্রাক্কলন ধরা হয় ১২৭ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৮৭ কোটি টাকা। নীতিমালা অনুযায়ী, একটি প্রকল্পে স্থানীয়ভাবে কৃষক ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে গঠিত পাঁচ থেকে সাত সদস্যের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) কাজ করে। একটি পিআইসি সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার কাজ করতে পারে। তবে পিআইসিতে কৃষকদের কথা বলা হলেও নামে-বেনামে স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ঢুকে পড়েন। তাঁরাই মূলত কাজে গাফিলতি করেন। এবারও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ১০ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারও ১৫ ডিসেম্বর নিয়ম রক্ষার্থে লোক দেখানো কিছু প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শুরু থেকেই এসব কাজে ঢিলেমি ছিল। গণশুনানি করে প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠন হয়নি। অক্ষত বাঁধে পাউবো ও প্রশাসনের কর্মকর্তা মিলে অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়েছেন।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাওরে বাঁধ নির্মাণ পুরোনো বৃত্তেই আটকে আছে। শুরুতে দায়সারা আর শেষে তাড়াহুড়া এভাবেই কাজ চলছে। কাজ এখনো শেষ হয়নি। কৃষকেরা চিন্তায় আছেন। বাঁধের কাজে কারও গাফিলতি বা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে যদি হাওরের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে এর দায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিতে হবে। 

জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

মামুন হাওলাদার জানান, কাজ নীতিমালা অনুযায়ী হয়েছে। কোথাও কোনো অনিয়ম হয়নি। হাওরের ফসল না তোলা পর্যন্ত প্রতিটি বাঁধ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ প রকল প র ফসল র প আইস

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫

একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’

আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫

গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ