সোনারগাঁয়ে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে কোটি টাকা ডাকাতি
Published: 16th, March 2025 GMT
সোনারগাঁয়ে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ফিল্মি স্টাইলে একটি বেসরকারি কোম্পানির ১ কোটি ১০ লাখ টাকা ডাকাতি হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অস্ত্র ঠেকিয়ে তাদের টাকা নিয়ে যাওয়া হয়।
শনিবার দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দড়িকান্দি ব্রিজ সংলগ্নে এই ঘটনা ঘটে। ডাকাতির ঘটনায় একই রাতে দিবা এন্টারপ্রাইজ নামক কোম্পানির ম্যানেজার মো. নাজিম উদ্দিন বাদী সোনারগাঁ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগপত্রে তুলে ধরা হয়েছে, ঢাকার ভাটারা থানা এলাকার 'দিবা এন্টারপ্রাইজ' নামক একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মো.
গত শনিবার দুপুরে ঢাকার মতিঝিল জীবন বীমা ভবনে থাকা সিটি ব্যাংকের কর্পোরেট শাখা হতে ১ কোটি দশ লাখ টাকা উত্তোলন করে তাদেরই চাঁদপুরের দিবা এন্টারপ্রাইজ শাখার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
যাত্রাপথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামগামী লেনের সোনারগাঁ উপজেলার দড়িকান্দি ব্রীজ পার হতেই পেছনে থাকা সিলভার রঙের একটি এক্সজিও ফিল্ডারযোগে অজ্ঞাতনামা ৬ সদস্যের একটি ডাকাত গ্রুপ তাদের গাড়ির গতিরোধ করে। পরে ডাকাত সদস্যরা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগী ম্যানেজারকে গাড়িটি তল্লাশির কথা বলেন।
একপর্যায়ে ডাকাত সদস্যরা ভুক্তভোগীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চোখ বেধে ও হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে মাইক্রোবাসযোগে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে অপরিচিত একটি স্থানে থামিয়ে কোম্পানির মাইক্রোবাসে থাকা দুটি ব্যাগের ১ কোটি ১০ লাখ ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে থাকা মূল্যবান জিনিস ডাকাতি করে চলে যান।
ছুটিরদিন হওয়া সত্বেও ব্যাংক হতে কোটি টাকা উত্তোলনের বিষয়টি জানতে অভিযোগের বাদী নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের কোম্পানিতে বিকাশের লেনদেন করা যায়। এটা শুধু সিটি ব্যাংকই করেন। আমাদের মালিক দেশের বাহিরে থাকায় উনার সই করা চেকের মাধ্যমে আমরা টাকা তুলেছি। এটা করা যায়।
তিনি বলেন, ৬ ডাকাতের একজন আমাদের গাড়িটি চালিয়ে আমাদেরকে বিভিন্ন স্থানে প্রায় আড়াই ঘন্টা ঘুরিয়ে তারপর সব নিয়ে গেছেন।
এ বিষয়ে জানতে সোনারগাঁ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল বারীকে একাধিক ফোন দেওয়া সত্বেও তিনি কল রিসিভ করেনি। তবে পরিদর্শক (তদন্ত) রাশেদুল হাসান খান বলেন, এ ঘটনার স্পট আমি পরিদর্শন করেছি। প্রযুক্তির সহয়তায় আমরা তদন্তের চেষ্টা করছি।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ- সার্কেল) আসিফ ইমাম জানান, আমি ঘটনার কথা শুনেছি। তবে আমি ছুটিতে থাকায় বিস্তারিত বলতে পারছি না।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স ন রগ ও ন র য়ণগঞ জ আম দ র স ন রগ
এছাড়াও পড়ুন:
২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু
বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।
ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।
জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।
সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।
বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।